প্রায় দুই সপ্তাহের ভয়াবহ বন্যার পর সিলেটে নামতে শুরু করে বন্যার পানি। মানুষ নতুন করে বিধ্বস্ত জীবন থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছিলেন। এরই মাঝে ভীতি জাগাতে শুরু করেছে ভারী বৃষ্টি। সোমবার দিবাগত রাত থেকে সকালে পর্যন্ত বৃষ্টি। দিনের বেলা বিরতি দিয়ে মঙ্গলবার (২৮ জুন) রাত সাড়ে আটটার পর থেকে সিলেটে ফের বৃষ্টির রাজত্ব। অবিরাম বৃষ্টিতে ইতোমধ্যে সিলেট নগরীর রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বাড়তে শুরু করেছে নদনদীর পানি। এতে করে ফের বন্যার কবলে পড়ায় আশংকা ভর করেছে সিলেটবাসীর মনে। ভারী বর্ষণের খবর পাওয়া গেছে সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলাতেও।


ভয়াবহ বন্যার কারণে সিলেট সিটি করপোরেশন এবং জেলার ১৩টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভার ৬১৪টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। এতে আশ্রয় নিয়েছিলেন ২ লাখ ৫২ হাজার ৮৭৮ জন বন্যার্ত। মঙ্গলবার (২৮ জুন) পর্যন্ত ৪৬৮টি আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয়গ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল ৪০ হাজার ৪৬৪ জন। সিলেটের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে বাড়ি ফিরেছেন ৮৫ ভাগ মানুষ। বন্যার্তরা চলে যাওয়ায় ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ১৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র।



আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফেরার পর বাড়ি গিয়ে আরও বড় সমস্যায় পড়েছেন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থরা। অনেকের ঘর পানিতে ভেসে গেছে, ধ্বসে পড়েছে কোন কোনটি। যাদের কাঁচাঘর এখনো দাঁড়িয়ে আছে সেগুলোরও অবস্থা নড়বড়ে। যে কোন সময় ধ্বসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যার পানিতে ভিজে বেশিরভাগ মানুষের আসবাবপত্র ও ঘরের জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে নতুন করে তাদেরকে শুরু করতে হচ্ছে জীবনসংগ্রাম।

মঙ্গলবার পর্যন্ত সিলেটে সুরমা, ধলাই, পিয়াইন, সারি ও লোভা নদীর তীরবর্তী উপজেলাগুলো থেকে পানি প্রায় নেমে গেছে। কুশিয়ারা তীরবর্তী বন্যাকবলিত দুয়েকটি উপজেলা ছাড়া বাকিগুলো থেকে পানি পুরোপুরি না নামলেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছিল। এরইমাঝে সন্ধ্যার পর থেকে ভারী বৃষ্টির কারণে ভীতি জেগেছে মানুষের মনে। রাতভর বৃষ্টি হলে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির মোড় ঘুরতে পারে। ফের প্লাবিত হতে পারে সিলেটের নি¤œাঞ্চল। ভাসতে পারে সিলেট নগরীর একাংশ। ফের ভারী বৃষ্টি শুরু হওয়ায় সিলেটের হাওর অঞ্চলে ফের বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সিলেট বিভাগসহ দেশের নানা অঞ্চলে বৃষ্টি ও বন্যার পূর্বাভাস জানিয়ে আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকের ভিন্ন দুটি পোস্টে জানান, ‘সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে আজ (মঙ্গলবার) রাতেও মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। পরপর তিন রাতে বৃষ্টি হচ্ছে যা বন্যা পরিস্থিতিকে আবারও অবনতি ঘটানোর প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। জুন মাসের ২৬ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত নিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়া কিছুটা কমে যাবে।’

এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত বৃষ্টি কারণে সিলেট নগরীর বিভিন্ন রাস্তায় জলাবদ্ধতা দেখা গেছে। নগরীর সুরমা নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে পানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ছিল। এছাড়াও সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলাতেও অবিরাম বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। পাহাড়ী ঢলের সাথে বৃষ্টির কারণে সুনামগঞ্জে নদনদীর পানি বাড়তে থাকায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়িতে ফেরা মানুষগুলো ফের বন্যার আশংকায় পড়েছেন।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/পিডি