ইউরিয়া সারের দাম কেজি প্রতি ৬ টাকা বৃদ্ধির প্রতিবাদে সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট সিলেট জেলা শাখার উদ্যোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। 


শুক্রবার (৫ আগস্ট) বিকাল ৫টায় আম্বরখানাস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।



সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্ট সিলেট জেলা সংগঠক আনোয়ার মিয়ার সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বাসদ সিলেট জেলা  সমন্বয়ক আবু জাফর, মনজুর আহমদ, সদর উপজেলা কৃষক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রুমন বিশ্বাস। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বেলাল আহমদ, হারুন মিয়া, জাবেদ আহমদ, ইউসুফ আলী,কুটি মিয়া, সাইফুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, রফিক শেখ প্রমুখ।


বিক্ষোভ সমাবেশে আবু জাফর বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির ভুল তথ্য দিয়ে এবং ইউরিয়া সারের যৌক্তিক ব্যবহারের কথা বলে সরকার ১ আগস্ট থেকে ইউরিয়া সার কেজি প্রতি ৬ টাকা বা ৫০ কেজির বস্তা প্রতি ৩০০ টাকা অর্থাৎ ৩৮% দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। সরকারের উভয় যুক্তিই হাস্যকর ও মিথ্যা বানোয়াট। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে সারের দাম এখন কমছে। এপ্রিল মাসে যেখানে ১ টন ইউরিয়া সারের দাম ছিল ৯২৫ মার্কিন ডলার, জুন মাসে তা কমে হয়েছে ৬৯২ ডলার। তাছাড়া কৃষক ইউরিয়া বেশি ব্যবহার করে জমির উর্বরতা নষ্ট করছে ফলে যৌক্তিক ব্যবহারের কথা বলছে অথচ কৃষি মন্ত্রণালয় ও সরকার কৃষককে সচেতন করার কোন উদ্যোগই নেয়নি। তাহলে যৌক্তিক ব্যবহার কি দাম বাড়িয়ে করা যাবে? এটা সরকারের ভুল নীতি। কারণ দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে সরকার ৫৩% মানুষের খাদ্যগ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে। সারের দাম বাড়ানোর এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্তে কৃষি উৎপাদন কমে যাবে এবং আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে। ইউরিয়া সারের দাম বৃদ্ধির প্রভাব অন্যান্য ক্ষেত্রেও পড়বে। এমনিতেই সার, বীজ, কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধির ফলে কৃষি ফসলের উৎপাদন খরচ বেড়ে গিয়েছে। আবার কৃষকরা কৃষি পণ্যের ন্যায্য দাম না পেয়ে উৎপাদিত কৃষি পণ্য রাস্তায় ফেলে দিতে এমনকি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে। সেখানে নতুন করে সারের দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষকের উপর এটি ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ এর সামিল।


তিনি আরও বলেন, এদেশে লুটেরা ব্যবসায়ীদের কর্পোরেট কর কমানো হয়। দেশের সম্পদ বিদেশে পাচারকারীদের সামান্য কর দেয়ার বিনিময়ে অর্থ পাচারকে বৈধতা দেয়া হয়। রেন্টাল, কুইক রেন্টালের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা অপচয় করা হয়। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে যেখানে কৃষক জীবনের ঝুঁকি নিয়েও উৎপাদন বজায় রেখে সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের খাবার জুগিয়েছে, সারের দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে সেই কৃষকের মাথায় আঘাত করা হয়েছে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর আমন মৌসুমে দাম বৃদ্ধির কারণে কৃষক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে, উৎপাদন বিঘ্নিত হবে। আমন বোরো মৌসুমে কৃষকের বাড়তি ১৬০০ কোটি টাকা খরচ হবে। ইতিপূর্বে ডিজেলের দাম বাড়ানোয় কৃষককে বাড়তি ৭০০ কোটি টাকা খরচ করতে হয়েছে। সরকারের ভুল পদক্ষেপে একটার পর একটা সার কারখানা বন্ধ হয়েছে। এখন আমরা আমদানি নির্ভর হয়ে পড়েছি। এক সময় আমরা ৮০ শতাংশ ইউরিয়া উৎপাদন করতাম, এখন তা ৩০ শতাংশে নেমে এসেছে।


তিনি বলেন, যমুনা সার কারখানায় দিনে ১৭০০ টন সার উৎপাদন সম্ভব। যার খরচ সবসহ পড়বে ২ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা। অথচ ঐ সার আমদানি করতে লাগে ৫ কোটি টাকা। আশুগঞ্জ সার কারখানায় দিনে ১৬০০ টন সার উৎপাদন সম্ভব যার খরচ পড়বে ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ঐ পরিমাণ সার আমদানিতেও ৫ কোটি টাকা লাগবে। আমাদের ৮টি সার কারখানায় যন্ত্রপাতি আধুনিকায়ন করলে ৪০ লক্ষ টন সার উৎপাদন সম্ভব। আমাদের আমন, বোরো, আউশ মৌসুমে মিলে সার লাগে ২৬ লক্ষ ৫০ হাজার টন। আমাদের দেশে সার উৎপাদনে নজর দিলে কম দামে কৃষকের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি সম্ভব।


আবু জাফর বলেন, সরকার নিজেকে কৃষি বান্ধব সরকার বলছে। অথচ কৃষিতে বরাদ্দ কম দিচ্ছে, ইউরিয়া সারের দাম বৃদ্ধি করছে।  তিনি অবিলম্বে ইউরিয়া সারের বর্ধিত দাম প্রত্যাহার করে সার-বীজ-কীটনাশক এর দাম কমানোর আহ্বান জানান।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/প্রেবি/জেপি