মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন চা শ্রমিকরা। গতকাল শনিবার সকাল থেকে শুরু হয় তাদের ধর্মঘট। তবে এই ধর্মঘটে খানিকটা প্রভাব পড়েছে জাতীয় শোক দিবসের। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকীকে কেন্দ্র করে কিছুটা কাটছাঁট করা হয়েছে আন্দোলন কর্মসূচিতে।

চা শ্রমিক নেতারা জানান, শোক দিবস উপলক্ষে আজ রোববার ও আগামীকাল সোমবার আন্দোলন কিছুটা স্থিমিত থাকবে। কর্মবিরতি চলবে, তবে কোনো মিছিল বা সভা হবে না।


জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা সিলেটভিউকে বলেন, ‘জাতীয় শোক দিবসের কারণে আমরা এই দুইদিন আমাদের কোনো মিছিল বা সভা-সমাবেশ হবে না। তবে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবেন না, কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। মঙ্গলবার থেকে পুরোদমে আন্দোলন শুরু হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকার বা মালিকপক্ষ থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়নি। শুনেছি আগামীকাল শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শ্রীমঙ্গলে আসতে পারেন। যদি আসেন, আলোচনা যদি ফলপ্রসু হয়, তাহলে হয়তো আন্দোলনের গতিপথ বদলাতে পারে। অন্যথায় আমাদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।’

চা শ্রমিকরা জানান, বর্তমানে তারা ১২০ টাকা মজুরি পান। এই মজুরি ‘অন্যায্য’ ‘অযৌক্তিক’ বলে মনে করছেন তারা। মজুরি ৩০০ টাকায় উন্নীত করার দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন শ্রমিকরা। গতকাল শনিবার সকাল ৬টা থেকে সিলেটসহ সারাদেশেই চা-শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেছেন। ফলে বাগানগুলোর কাজকর্ম থমকে গেছে।

চা শ্রমিক নেতা রাজু গোয়ালা বলেন, দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে আমরা গত ৮ আগস্ট থেকে আন্দোলন করে আসছি। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের দাবি দাওয়া নিয়ে বৃহস্পতিবার চা বাগানগুলোর মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের নিয়ে সমঝোতা বৈঠক করে বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর। মালিকপক্ষের কেউ বৈঠকে আসেননি। এতে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়। ফলে শনিবার সকাল ছয়টা থেকে দেশের সবগুলো চা বাগানের শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেন।

এই চা শ্রমিক নেতা প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘১২০ টাকা মজুরি দিয়ে কী হয়। মালিকপক্ষ বলে, তারা শ্রমিকদের রেশন দেয়। কী রেশন দেয়? শুধু আটা দেয়। আমাদের এগ্রিমেন্টে বলা আছে যে ছয় মাস চাল, ছয় মাস আটা দেবেন। কিন্তু সেটাও উনারা প্রতিশ্রুতি রাখেন না। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যেসব আছে, সেটার সাথে কোনোভাবেই এই মজুরির কোনো ইয়ে নাই...মজুরিটা আমার বাঁচার জন্য দরকার, আমার নিত্যপ্রয়োজনীয় যে খাদ্যপণ্য আছে, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য দরকার। কিন্তু মজুরি যদি কম হয়, আমরা চলবো কীভাবে?’

চা শ্রমিকরা জানান, চা শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বকারী একমাত্র সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন। শ্রম আইন অনুসারে চা শ্রমিকদের পক্ষে দরকষাকষি করে এই সংগঠন। সম্প্রতি চা-বাগান মালিকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ চা সংসদের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনয়ায় শ্রমিক ইউনিয়ন চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, বোনাস প্রদান, ছুটিসহ বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করে। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। পরবর্তীতে মালিকপক্ষ মজুরি ১৪ টাকা বাড়নোর প্রস্তাব দেয়। কিন্তু চা শ্রমিকরা এই মজুরি বৃদ্ধিকে ‘পরিহাস’ বলে মনে করছেন।

চা শ্রমিক ইউনিয়ন নেতারা জানান, গত ১ আগস্ট চা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী কমিটি ও ভ্যালি কমিটিসমূহের যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে চা সংসদে স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। গত ৩ আগস্ট সেই স্মারকলিপি প্রদান করে চা শ্রমিক ইউনিয়ন। সেখানে সাতদিনের মধ্যে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে ‘গ্রহণযোগ্য সুরাহার’ দাবি জানানো হয়। অন্যথায় আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।

আলটিমেটামের মধ্যে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় গত মঙ্গলবার থেকে আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামেন চা শ্রমিকরা। শনিবার থেকে শুরু হয় ধর্মঘট।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে