যাত্রাবাড়ি-গুলিস্তান ফ্লাইওভার ঢাকার দক্ষিণ অঞ্চল তো বটেই, গোটা দেশের দীর্ঘতম উড়াল সেতু। এটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে ঢাকাকে যুক্ত করেছে। করলে কী হবে, ডেমরাবাসীর জন‍্য স্বস্তি নিয়ে আসতে পারেনি। গুলিস্তান প্রান্তের যানজট নিরসনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখলেও যাত্রাবাড়ি প্রান্তের ডেমরাকে করে ফেলেছে সুযোগ বঞ্চিত। এ এলাকার অসহনীয় সড়ক জট কমেনি এতটুকু। ডেমরার লোকজনকে প্রায়ই  অনুযোগ করতে শুনি ব‍্যাপারটা নিয়ে। দেশখ‍্যাত এই ফ্লাইওভার প্রকল্পকে অনেকে অকার্যকর বলতে দ্বিধা করে না। 

সমস‍্যাটা আসলে কোথায়? জানতে গিয়ে আজ সকালে ভেমরা টু গুলিস্তানের পথে নেমেছি। অফিস মতিঝিলের দিলকুশায়। বড়জোর ছয় কিলো। বাসে উঠতেই শুরু হলো এক দুর্গম যাত্রা। অবাক বিস্ময়ে আবিষ্কার করলাম, ঢাকার ৫নং আসনের এই এলাকাটা আসলে দুর্গমই রয়ে গেছে। ঝক্করমার্কা বাতিল বাস এখানকার পাবলিক ট্রান্সপোর্ট। সাথে আছে বিলুপ্তপ্রায় টেম্পু আর লেগুনা। রাস্তায় যদিও চার লেনের প্রকল্পের কাজ চলছে, তবে সেই কাজ খানাখন্দকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহগুণে। ফ্লাইওভারের ঢালে একটা সাইনপোস্ট চোখ কেড়ে নিলো। সেখানে লেখা আছে 'ডেমরা-সিলেট'। মানে হচ্ছে, ঢাকা থেকে সিলেটগামী যানবাহন এই রোডটাই ব‍্যবহার করবে। আমার হঠাৎ করে মনে পড়ে গেল, প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান কোন এক কালে ঢাকার এই আসনটিতে উপনির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। ঢাকা-সিলেট রোডে তাঁর অবদানের কথা অনেকেই স্মরণ করে থাকেন। কিন্তু এখানকার বেহাল দশা তিনি দেখে যেতে পারেননি। 


যাত্রাবাড়ি মোড় থেকে প্রায় সবদিকে যাতায়াতের বেলায় ফ্লাইওভারে উঠার ব‍্যবস্থা রয়েছে। এটিই বাংলাদেশের দীর্ঘতম উড়াল সেতু। দৈর্ঘ্য ১০.৬ কিমি। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৪.১ কিমি। সংযোগকারী সড়ক ৬.২ কিমি। চানখা'রপুল থেকে শুরু করে যাত্রাবাড়িতে শেষ হয়েছে। চারটি লেন, সংযুক্ত সড়কগুলি ২ লেনের। অফিসিয়াল নাম - মেয়র মোহম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার।
ইস্পাত ও কংক্রিট কাঠামো দিয়ে বানানো হয়েছে এটি। নির্মাণ সংস্থা হচ্ছে - ওরিয়ন ইনফ্রাস্টাকচার্স লিমিটেড। চালু    হয়েছে ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৩ থেকে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপে (পিপিপি) নির্মিত দেশের প্রথম ফ্লাইওভার।

তথ‍্য থাক। যাত্রা পথের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলি। বঙ্গভবনের গেটের কাছে নামতে পেরিয়ে গেল আড়াই ঘন্টা। দ্বিতীয়বার অবাক হতে হলো এটা ভেবে যে, মাত্র ছয় কিলো সোজা পথ পেরুতে এতটা সময় লাগার কারণটা কী হতে পারে! 

ডেমরাবাসী এক সহযাত্রী জানালেন রহস‍্যটা। পুরো পথ রাগে গজরাতে গজরাতে এসেছেন। মিরপুরে যেয়ে অফিস ধরতে প্রতিদিন লেট হয়ে যায় তার। 

বললেন, 'দেখুন ভাই, সবাইকে উপরে উঠতে দিয়েছে। কেবল ডেমরার জন‍্য ওঠার লেন নেই। কেন বানালো ফ্লাইওভারটা, বলুন তো? কোন বেয়াক্কল বুদ্ধি দিয়েছে?' 

এইবার বুঝলাম ব‍্যাপারখানা। গুলিস্তান থেকে ডেমরার দিকে উপর দিয়ে যেতে পারলেও ফিরতি পথে উড়াল সেতুতে উঠবার যো নেই। পথ বন্ধ তাই ওয়ান ওয়ে জার্নি। ফলে ঘুরেফিরে মোড়ের যানজট ঠেলেই সামনে বাড়তে হয়। উড়াল সেতু দিয়ে দ্রুতবেগে পথ পেরুনোর সুযোগ অবারিত নয় ডেমরা থানার লোকজনের।