দীর্ঘ দুই দশক পর সিলেট যুবদলে এখন সম্মেলনের অপেক্ষা। সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের বহুল কাঙ্ক্ষিত এই সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। এই সম্মেলন ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে এখন বিপুল উৎসাহ, ব্যাপক আগ্রহ। তবে জেলা ও মহানগর যুবদলের সম্মেলনের সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেলেও তাদের আওতাধীন কোনো ইউনিটেই নেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এদিকে, এবার সম্মেলনের মাধ্যমে শীর্ষ তিনটি পদে নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে; যেখানে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন সাড়ে আট শতাধিক কাউন্সিলর।

যুবদল সূত্র জানিয়েছে, সিলেট জেলা যুবদলের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০০ সালে। তখন ভোটের মাধ্যমে কামাল আহমদ সভাপতি ও তালাত আজিজ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ফখরুল ইসলাম বাদল ও সাদিকুর রহমান সাদিক সমসংখ্যক ভোট পান। পরে বাদলকে যুগ্ম-সম্পাদক এবং সাদিককে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। ২০০১ সালে ‘ব্যক্তিগত কারণে’ পদত্যাগ করেন কামাল আহমদ; তখন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আব্দুল মান্নান সভাপতির দায়িত্ব পান। ওই বছরেই যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান তালাত আজিজ। তাঁর স্থলে দায়িত্বে আসেন প্রথম যুগ্ম-সম্পাদক মামুনুর রশিদ মামুন।


অন্যদিকে, পৌরসভা থেকে সিলেট সিটি করপোরেশন গঠনের পর মহানগর যুবদলের কোনো সম্মেলন বা কমিটি হয়নি। পৌরসভা থাকতে শহর যুবদলের যে কমিটি হয়েছিল, সেটা সিটি করপোরেশন হওয়ার পর বিলুপ্ত করা হয়। শহর যুবদলের সেই বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি এমদাদ হোসেন টিপু ওয়ান-ইলেভেনের সময় যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। সেখানেই থিতু হয়েছেন তিনি। আর সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন সুহেল মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত।

নেতা-কর্মীরা জানান, বছরের পর বছর পেরোলেও সিলেট যুবদলের সম্মেলন বা নতুন কমিটি নিয়ে খুব বেশি মাথাব্যথা ছিল না কারো। ফলে দীর্ঘ ১৯ বছর ওই এক কমিটি দিয়েই চলে জেলা যুবদল। আর কমিটিবিহীন নিষ্ক্রিয় থাকে মহানগর যুবদল। হতাশ নেতা-কর্মীদের মনোবলকে চাঙ্গা করতে ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর জেলা-মহানগর যুবদলে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। জেলায় ২৯ সদস্যের এ কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান পাপলুকে, সদস্যসচিব হন জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক মকসুদ আহমদ। মহানগরে ২৭ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে আহ্বায়কের দায়িত্ব পান সাবেক ছাত্রনেতা নজিবুর রহমান নজিব, সদস্যসচিব হন শাহ নেওয়াজ বখত চৌধুরী তারেক।

আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতে বিদ্রোহ দেখা দেয়। তবে শুরুর সেই ধাক্কা ক্রমেই কাটিয়ে ওঠেন আহ্বায়ক কমিটির নেতারা। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আন্দোলনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আওতাধীন প্রত্যেক ইউনিটে ‘গতিশীল’ ‘সক্রিয়’ নেতৃত্ব নিয়ে আসার চেষ্টা করেন তারা। তবে এই আহ্বায়ক কমিটি নির্ধারিত তিন মাস সময়ে সকল ইউনিটের কমিটি গঠন সম্পন্ন করে সম্মেলনের আয়োজন করতে পারেনি। এর পেছনে করোনাভাইরাস ও বন্যা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণকে টানছেন দায়িত্বশীলরা।

সম্প্রতি কেন্দ্র থেকে কঠোর নির্দেশনা পেয়ে সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু জেলা ও মহানগর উভয় শাখার আওতাধীন ইউনিটগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি দায়িত্বশীলরা। জেলার আওতাধীন ১৩ উপজেলা ও ৫ পৌরসভা যুবদলে আহ্বায়ক কমিটি রয়েছে। মহানগরে ২৭টি ওয়ার্ডেই আছে আহ্বায়ক কমিটি। এসব ইউনিটে সম্মেলন শেষে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের আগেই কেন্দ্রের চাপে নিজেদের সম্মেলন করতে হচ্ছে জেলা-মহানগর যুবদলকে।

যুবদল নেতারা জানান, আগামী ১০ সেপ্টেম্বর জেলা যুবদল এবং ১১ সেপ্টেম্বর মহানগর যুবদলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে উভয় শাখা পাবে নতুন নেতৃত্ব। সম্মেলনে উভয় শাখায় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সরাসরি কাউন্সিলরদের (ভোটার) ভোটগ্রহণ হবে। উভয় শাখা মিলিয়ে ৮৫৫ জন কাউন্সিলর রয়েছেন। তবে জেলা ও মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক কমিটিতে থাকা নেতারা কাউন্সিলর হতে পারবেন কিনা, তা এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। তাঁরা ভোটাধিকার পেলে কাউন্সিলর সংখ্যাও বাড়বে।

জানতে চাইলে সিলেট মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক নাজিবুর রহমান নাজিব সিলেটভিউকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে আমাদের আওতাধীন ইউনিটগুলোতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। আমাদের আহ্বায়ক কমিটিরও প্রায় তিন বছর হয়ে যাচ্ছে। তাই ইউনিটগুলোতে পূর্ণাঙ্গ না করেই আমাদের সম্মেলন করা হচ্ছে। সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে শীর্ষ তিনটি পদে নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে।’

তিনি বলেন, ‘মহানগর যুবদলে ২৭টি ওয়ার্ডের ১১ জন করে কাউন্সিলর ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সবমিলিয়ে তাঁদের সংখ্যা ২৯৭ জন। মহানগরের আহ্বায়ক কমিটিতে যাঁরা আছেন, তাঁদের ভোটাধিকার থাকবে কিনা, সে বিষয়টি কেন্দ্র থেকে আমাদেরকে জানানো হবে।’

জেলা যুবদলের আহ্বায়ক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু সিলেটভিউকে বলেন, ‘প্রতিটি ইউনিটে এখন যে নেতৃত্ব আছে, আন্দোলন-সংগ্রামের জন্য তা যথেষ্ট স্থিতিশীল। এটা কেন্দ্রীয় যুবদলও বিশ্বাস করে। যার ফলে ইউনিটে আহ্বায়ক কমিটি রেখেই আমরা সম্মেলন করার দিকে হাঁটছি। একটা সফল সম্মেলন উপহার দিতে পারবো ইন শা আল্লাহ!’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘জেলা যুবদলের প্রতিটি ইউনিট থেকে ৩১ জন করে কাউন্সিলর ভোট প্রদান করবেন। জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটিতে থাকারাও ভোট দিতে পারবেন।’

এদিকে, সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে কারা প্রার্থী হতে পারবেন, তা কেন্দ্রীয় যুবদল ঠিক করে দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীলরা।

জেলা ও মহানগর যুবদলের আহ্বায়কগণ সিলেটভিউকে জানিয়েছেন, প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় যুবদলের নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘দু-একদিনের মধ্যে’ জানিয়ে দেওয়া হবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে