দুই দশক পর সিলেটে নতুন নেতৃত্ব পেয়েছে জেলা যুবদল। প্রথমবারের মতো হয়েছে মহানগর যুবদলের সম্মেলন। সিলেট যুবদল এখন তাই চনমনে। ক্ষমতাসীন দলের যুব সংগঠন যুবলীগও বসে নেই। মহানগর যুবলীগ নিজেদের আওতাধীন সকল ইউনিটে কমিটি গঠন সম্পন্ন করেছে। জেলা যুবলীগ সব ইউনিটে কমিটি গঠন নিয়ে ব্যস্ত। শিগগিরই আসছে সিলেট যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। সবমিলিয়ে সিলেটে যুব রাজনীতির পালে নতুন হাওয়া লেগেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকদের মতে, সামনে একটি জাতীয় নির্বাচন আসছে। নানা প্রেক্ষিতে এই নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো সম্ভাব্য সব পরিস্থিতির জন্য নিজেদের মূল দল এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে প্রস্তুত করছে। এরই ধারাবাহিকতায় যুব সংগঠনগুলোর দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে সক্রিয় ও উদ্ধুদ্ধ করতে দেওয়া হচ্ছে কমিটি।


যুবলীগের চিত্র>>
যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের জুলাই মাসের শেষদিকে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবলীগের পৃথক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে উভয় শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। কিন্তু সম্মেলনের পর অনেকটা ঝিমিয়ে পড়ে যুবলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে ফের সক্রিয় হয়ে ওঠেছে সিলেট যুবলীগ। কেন্দ্রের নির্দেশে ইতোমধ্যেই সিলেট মহানগর যুবলীগ তাদের আওতাধীন ২৭টি ওয়ার্ডে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করেছে। অন্যদিকে, জেলা যুবলীগকে দ্রুততম সময়ে সকল ইউনিটে সম্মেলনের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। এর প্রেক্ষিতে কাজ শুরু করেছেন জেলা যুবলীগ নেতারা। গত ১ সেপ্টেম্বর ৮টি ইউনিটে কমিটি গঠনের লক্ষ্যে পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করেছেন তারা। এই ইউনিটগুলো হলো- সদর উপজেলা, বিশ্বনাথ উপজেলা, বিশ্বনাথ পৌরসভা, গোলাপগঞ্জ উপজেলা, গোলাপগঞ্জ পৌরসভা, বিয়ানীবাজার উপজেলা, বিয়ানীবাজার পৌরসভা এবং বালাগঞ্জ উপজেলা। এসব ইউনিট থেকে ইতোমধ্যেই বেশকিছু সংখ্যক জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়েছে। দীর্ঘ কয়েক বছর এসব ইউনিটে নতুন কমিটি না হওয়ায় পদপ্রত্যাশীদের তালিকাও দীর্ঘ।

বর্তমানে জীবনবৃত্তান্ত যাচাইবাছাই চলছে বলে সিলেটভিউকে জানিয়েছেন জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমরা সক্রিয়, পরিচ্ছন্ন নেতৃত্ব গড়তে চাই। রাজাকারের সন্তান, অনুপ্রবেশকারী কেউ কমিটিতে স্থান পাবে না।’

গত ৭ সেপ্টেম্বর আরও ১২টি ইউনিটকে নির্দেশনা দিয়েছে জেলা যুবলীগ। এই ইউনিটগুলো হলো- জকিগঞ্জ উপজেলা, জকিগঞ্জ পৌরসভা, কানাইঘাট উপজেলা, কানাইঘাট পৌরসভা, ওসমানীনগর উপজেলা, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা, জৈন্তাপুর উপজেলা ও গোয়াইনঘাট উপজেলা। এসব ইউনিটের আওতাধীন ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি দ্রুত গঠন করতে দায়িত্বশীলদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে, সিলেট জেলা ও মহানগর যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি শিগগিরই কেন্দ্র থেকে অনুমোদন পেতে পারে বলে জানা গেছে। উভয় শাখা থেকেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দেওয়া হয়েছে।

যুবলীগ নেতারা বলছেন, তৃণমূল থেকে জেলা-মহানগর সবখানেই এখন নেতা-কর্মীরা উৎফুল্ল, চনমনে। এই মনোভাব ধরে রাখতে ধারাবাহিকভাবে নানা কর্মসূচিও বাস্তবায়ন করা হবে।

সিলেট জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ বলেন, ‘সিলেটে যুবলীগ সক্রিয় রয়েছে, নেতা-কর্মীরা মাঠে আছেন। সংগঠনকে আরও সুসংগঠিত করতে আমাদের কাজ চলছে।’

মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদার সিলেটভিউকে জানিয়েছেন, পূর্ণাঙ্গ কমিটি কেন্দ্রে জমা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই এই কমিটি ঘোষিত হতে পারে।

যুবদলের চিত্র>>
‘সিলেটে যুবদল নতুন জীবন পেয়েছে। বিশ বছর পর সম্মেলন, নতুন নেতৃত্ব মিলিয়ে যুবদলে লেগেছে নতুন হাওয়া।’

অতি সম্প্রতি ঘরোয়া এক আলাপে এমন মন্তব্য করেছিলেন জেলা বিএনপির এক নেতা। বস্তুত, বিএনপির ওই নেতার কথায় যথেষ্ট যথার্থতারই দেখা মেলে।

যুবদল সূত্র জানায়, সিলেট জেলা যুবদলের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ২০০০ সালে। তখন ভোটের মাধ্যমে কামাল আহমদ সভাপতি ও তালাত আজিজ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ফখরুল ইসলাম বাদল ও সাদিকুর রহমান সাদিক সমসংখ্যক ভোট পান। পরে বাদলকে যুগ্ম-সম্পাদক এবং সাদিককে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। ২০০১ সালে ‘ব্যক্তিগত কারণে’ পদত্যাগ করেন কামাল; সভাপতির দায়িত্ব পান জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আব্দুল মান্নান। ওই বছরেই যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান তালাত আজিজ; দায়িত্বে আসেন প্রথম যুগ্ম-সম্পাদক মামুনুর রশিদ মামুন।

অন্যদিকে, পৌরসভা থেকে সিলেট সিটি করপোরেশন গঠনের পর মহানগর যুবদলের কোনো সম্মেলন বা কমিটি হয়নি। পৌরসভা থাকতে শহর যুবদলের যে কমিটি হয়েছিল, সেটা সিটি করপোরেশন হওয়ার পর বিলুপ্ত করা হয়। শহর যুবদলের সেই বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি এমদাদ হোসেন টিপু ওয়ান-ইলেভেনের সময় যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। সেখানেই থিতু হয়েছেন তিনি। আর সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন সুহেল মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত।

এই পরিস্থিতিতে সিলেট যুবদলে সম্মেলন, নতুন নেতৃত্ব ও নতুন কমিটির জন্য উদগ্রিব ছিলেন নেতা-কর্মীরা। নেতা-কর্মীদের চাওয়া আর সামনের জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক আন্দোলনের বিষয়টি মাথায় রেখে কেন্দ্রীয় যুবদল সিলেটে নতুন কমিটি গঠনে সম্মেলনের নির্দেশ দেয়। এর আগে গঠন করা হয় আহ্বায়ক কমিটি। সেই কমিটি গত ১০ ও ১১ সেপ্টেম্বর যথাক্রমে জেলা ও মহানগর যুবদলের সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে বিএনপি ও যুবদলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে জেলা যুবদলে এডভোকেট মুমিনুল ইসলাম মুমিন সভাপতি ও মকসুদ আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। অন্যদিকে, মহানগর যুবদলে শাহ নেওয়াজ বখত তারেক সভাপতি ও মির্জা সম্রাট সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন ভোটের ফয়সালায়।

এই চার নেতাকে নিজ নিজ শাখায় দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রস্তুত করে কেন্দ্রে পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন শীর্ষ নেতারা। তবে এর আগে জেলার আওতাধীন ১৮টি ইউনিটে এবং মহানগরের আওতাধীন ২৭টি ইউনিটে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ রয়েছে। এসব ইউনিটে আহ্বায়ক কমিটি দায়িত্ব পালন করছে।

মহানগর যুবদলের সভাপতি শাহ নেওয়াজ বখত তারেক বলেন, ‘সিলেটে যুবদলের প্রত্যেক নেতা-কর্মী এখন উজ্জীবিত। সম্মেলনে যে ব্যাপক সাড়া পড়েছিল, যে উৎসাহ দেখা গেছে, তা সিলেটে যুবদলের শক্তিশালী অবস্থানের জানান দিয়েছে।’ তিনি জানান, কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুসারে সাংগঠনিক তৎপরতা চলছে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে