হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির গ্রেফতারকৃত সিলেটের ৭ পরিচালককে বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) মাগুরার আদালতে তোলা হবে। মাগুরার বিশিষ্ট আইনজীবী শফিকুজ্জামান বাচ্চু এই মামলাকে ‘হাস্যকর ও বেআইনি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। গ্রাহকদের পলিসির টাকা আত্মসাতের ঘটনায় হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির চেয়ারম্যান, এমডিসহ দায়িত্বশীলদের আসামি না করে শুধুমাত্র ৭ প্রবাসী পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা নিয়ে সচেতন মহলের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ১১ পরিচালকের মধ্যে কেবল সিলেটের ৭ পরিচালকের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টিকে অনেকে ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখছেন।

সূত্রমতে, আজ বৃহস্পতিবার মাগুরার শালিখার আমলী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সুমনা পালের আদালতে গ্রেফতারকৃত ৭ পরিচালককে তোলা হবে। এজন্যে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বুধবার বেলা ১টার দিকে মাগুরা জেলা কারাগারে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়।


মাগুরা জেলা কারাগারের জেলার নূর মোহাম্মদ মৃধা গতরাত সাড়ে ৯টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে গত সোমবার ওই আদালতে ৭ পরিচালকের জামিন চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল। আদালত আসামিদেরকে গত বৃহস্পতিবার স-শরীরে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন।


জানা যায়, প্রায় ১৪ লাখ টাকার বীমা দাবি না দেয়ায় হোমল্যান্ড লাইফের ৭ পরিচালকের বিরুদ্ধে মাগুরার আদালতে ৪টি মামলা করা হয়। কোম্পানির এজিএম থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। বিষয়টি দেশের বীমাখাতেও ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে।


সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সে চলা ‘লুটপাট ও অনিয়মে’র বিরুদ্ধে সিলেটের প্রবাসী পরিচালকরা বরাবরই সোচ্চার ছিলেন। এজন্যে তাদেরকে ‘মামলার ভয়’ দেখিয়ে কোম্পানি থেকে বের করে দিয়ে কোম্পানি দখলে নেয়ার ‘ষড়যন্ত্র’ হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে তাদের এই মামলার আয়োজন করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।


কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে মোহাম্মদ জুলহাস দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ মামলায় তার নাম নেই। নেই এমডির নামও। বিষয়টি প্রবাসী বিনিয়োগকারীদেরকে ভাবনায় ফেলে দিয়েছে।


সূত্র মতে, এক মামলার বাদী আজর আলী নিজেকে হোমল্যান্ড লাইফের একজন পলিসি হোল্ডার বলে এজাহারে উল্লেখ করেন। তার মামলা নং-২২৭/২২। গত ২ আগস্ট তিনি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ১৯ জনকে সাক্ষী করা হলেও তাদের কারো পিতার নাম ও ঠিকানা নেই। আরেক মামলার বাদী নায়েব আলী। তার মামলা নং ২২৮/২২। এই মামলায় ১৫ জনকে সাক্ষী করা হলেও তাদের কারো পিতার নাম ও ঠিকানা নেই। আরেকটি মামলার বাদী সৈয়দ মোফাক্কার আলী রিন্টু। মামলা নং-২২৯/২২। এই মামলায়ও ৩৯ জনকে সাক্ষী করা হলেও তাদের কারো পিতার নাম ও ঠিকানা এজাহারে উল্লেখ করা হয়নি। মো. হাবিবুর রহমানের দায়ের করা মামলায় (মামলা নং-২৩০/২২) ৪৫ জনকে সাক্ষী করা হলেও তাদের কারো পিতার নাম ও ঠিকানা নেই। ৪টি মামলার বাদী ৪ জন হলেও ঘটনাস্থল মাগুরার শালিখার থানাধীন হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির আঞ্চলিক কার্যালয় বলা হয়। অথচ ওই কার্যালয়ের ম্যানেজার বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউকেই আসামি করা হয়নি।


আইনজীবী যা বলেন : মাগুরার সিনিয়র আইনজীবী শফিকুজ্জামান বাচ্চু এ বিষয়ে বুধবার সন্ধ্যায় বলেন, মামলা হবে ম্যানেজারের বিরুদ্ধে। চেয়ারম্যান, এমডির বিরুদ্ধে। কিন্তু তা না করে শুধুমাত্র কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। ১১ পরিচালকের মধ্যে সিলেটের ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করার বিষয়টি হাস্যকর, এটি বেআইনি মামলা। সাক্ষীদের পিতার নাম ও ঠিকানা নেই, আসামিদের পিতার নাম ও ঠিকানা নেই-এই মামলা টিকবে না বলে মন্তব্য এ আইনজীবীর। খারিজ হয়ে যাবে। তাদের মধ্যে কেউ না কেউ মামলাটি করিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ইআ-০৪