সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশকে ঘিরে সব নেতা-কর্মীই সক্রিয় রয়েছেন। তবে নিজের কার্যক্রম দিয়ে নজর কেড়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, দক্ষ হাতে সব সামলে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন আরিফ।

জানা গেছে, সিসিকের কাজে গত ৩১ অক্টোবর আমেরিকা সফরে যান মেয়র আরিফ। আমেরিকা সফরে যাওয়ার আগে সিলেটের গণসমাবেশকে ঘিরে দায়িত্বশীল নেতাদের সাথে বৈঠক করেন তিনি। সে বৈঠকে কিভাবে কি করতে হবে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন আরিফ। এ ছাড়া বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সাথে যেসব প্রস্তুতি সভা হয়, সেসব সভায়ও উপস্থিত ছিলেন তিনি।


আমেরিকায় গিয়েও গণসমাবেশের সমস্ত কার্যক্রমের দিকে নজর রাখেন আরিফ। ফোনের মাধ্যমে দায়িত্বশীল নেতাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করেন তিনি। কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথেও ছিল তার যোগাযোগ। এ ছাড়া নিজের অনুসারী নেতা-কর্মীদের প্রচার-প্রচারণায় ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশও দেন তিনি।

বিএনপির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, বিএনপির গণসমাবেশ যে শেষ পর্যন্ত আলিয়া মাদরাসা মাঠেই হচ্ছে, এর পেছনে আরিফুল হক চৌধুরীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সিলেটে ‘আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ এর আহ্বানে দুইদিনব্যাপী ইজতেমা গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হয়ে আজ শুক্রবার সকালে শেষ হয়। সংগঠনটি এই ইজতেমা করতে চেয়েছিল আলিয়া মাদরাসা মাঠে। কিন্তু তারা ইজতেমা করলে এখানে বিএনপির মঞ্চ নির্মাণসহ আনুষাঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করে গণসমাবেশ করা সম্ভব ছিল না।

ইজতেমা যাতে দক্ষিণ সুরমার পারাইরচক সিলেট কেন্দ্রীয় ট্রাক টার্মিনাল মাঠে আয়োজন করা হয়, এ জন্য ওই সংগঠনটির নেতৃস্থানীয়দের সাথে কথা বলেন মেয়র আরিফ। তার অনুরোধে আলিয়ার মাঠে ইজতেমা আয়োজন থেকে সরে আসেন ‘আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ এর সংশ্লিষ্টরা।

বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, আলিয়ার মাঠকে সমাবেশের জন্য প্রস্তুত করার পেছনেও মেয়র আরিফের ভূমিকা আছে। মাঠকে প্রস্তুত করতে প্রয়োজনীয় যানবাহন ও জনবল সরবরাহ করেছে সিটি করপোরেশন। এর বিনিময়ে বিএনপি প্রয়োজনীয় অর্থ পরিশোধ করেছে। তবে বিএনপির আরিফ মেয়র না হয়ে অন্য কেউ মেয়র থাকলে এভাবে যানবাহন ও জনবল পাওয়া যেতো না বলেই মনে করছেন দলটির নেতারা।

জানা গেছে, গত ১৪ নভেম্বর দেশে ফিরেন মেয়র আরিফ। সেদিন বিমানবন্দর থেকে নিজের বাসায় না গিয়ে খুন হওয়া বিএনপি নেতা আ ফ ম কামালের বাসায় ছুটে যান তিনি। এরপর সেখান থেকে সরাসরি আলিয়ার মাঠ পরিদর্শনে যান তিনি।

আরিফুল হক চৌধুরী ফেরার পর প্রচার-প্রচারণাও নতুন গতি পায় বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। গণসমাবেশের প্রচারণায় নগরীজুড়ে বড় বড় বিলবোর্ড টানিয়েছেন তিনি। সেসব বিলবোর্ডে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ছাড়াও প্রয়াত সাইফুর রহমান ও নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর ছবি রয়েছে।

বিএনপির এক দায়িত্বশীল নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিলেটভিউকে বলেন, ‘বিএনপি অন্য নেতাদের বিলবোর্ডে সাইফুর রহমান ও ইলিয়াস আলীর ছবি দেখা যায়নি। তাঁদের ছবি বিলবোর্ডে দিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী নিজেকে ব্যতিক্রম হিসেবে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। সবার নজর কাড়ছেন তিনি। এবারের গণসমাবেশে আরিফের কার্যক্রম দেখে মনে হয়েছে, দল ও নেতা-কর্মীদের প্রতি তাঁর মনোযোগ অনেক বেড়ে গেছে।’

এদিকে, গণসমাবেশে যোগ দিতে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকেই হাজার হাজার নেতা-কর্মী সিলেট বিভাগের বিভিন্ন স্থান থেকে সিলেট নগরীতে এসেছেন। তাদের থাকার জন্য বেশ কয়েকটি সেন্টার ভাড়া করেছেন আরিফ। এ ছাড়া নেতা-কর্মীদের খাবারদাবারও সরবরাহ করছেন তিনি।

বিএনপি নেতারা জানান, সিলেটে পরিবহন ধর্মঘট ঠেকাতেও তৎপর ছিলেন আরিফ। তিনি পরিবহন নেতাদের সাথে একাধিকবার কথা বলেছেন। তবে উপরের চাপে শেষ অবধি পরিবহন নেতারা ধর্মঘট না দিয়ে পারেননি।

শেষ চমক হিসেবে আজ বিকেলে নগরীতে বিশাল মিছিল বের করেন আরিফ। তাঁর নেতৃত্বে এ মিছিলে বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

সামগ্রিক বিষয়ে বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটভিউকে বলেন, ‘গণসমাবেশ ঘিরে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। কারণ, গণমানুষের দাবিদাওয়া নিয়ে এসব গণসমাবেশ হচ্ছে। ফলে সর্বস্তরের মানুষ এসে যোগ দিচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘গণসমাবেশ সফলে আমি, আমরা যতোটুকু করা যায়, করেছি, করছি। আমরা প্রত্যেকটি বিএনপি নেতা-কর্মী আপ্রাণভাবে কাজ করেছেন, করছেন। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সিলেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সমাবেশ হতে চলেছে।’

আরিফ বলেন, ‘দেশনায়ক তারেক রহমান যেভাবে বলেছেন, আমরা সেভাবে কাজ করেছি। আমাদের সাথে দেশনেত্রী বেগম জিয়ার দোয়া রয়েছে।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/শাদিআচৌ/আরআই-কে