প্রতীকী ছবি।

অবশেষে শুরু হচ্ছে সিলেটের কুমারগাঁ থেকে বাদাঘাট হয়ে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়ককে চার লেনে উন্নীত করার কাজ। আগামীকাল শনিবার বিকেলে এ কাজের উদ্বোধন করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে এমন তথ্য।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এই সড়ক প্রকল্পে ব্যয় হবে ৭২৭ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি ‘কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এ অনুমোদন পায়। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা।


সড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণ কাজের উদ্বোধনের জন্য তেমুখী পয়েন্টে উদ্বোধনী ফলক নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই সড়কের মইয়ারচর-সোনাতলা বাজার সংলগ্ন এলাকায় প্রকল্পের সাইট অফিস ও শ্রমিকদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, সিলেটের কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়কটি বর্তমানে দুই লেনের। তবে সড়কটি বেহাল। প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়কটি নির্মাণ করা হয় ২০১২-১৪ অর্থবছরে। পরবর্তীতে পাথরবাহী ট্রাক চলাচল, বিমানবন্দর অভিমুখীদের সুবিধা এবং পর্যটকবাহী যান চলাচলের জন্য সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার দাবি ওঠে সিলেটে। এ প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়। পরের বছর চার লেন সড়কের সাথে দুটি সার্ভিস লেন যুক্ত করে তৈরি করা হয় সংশোধিত প্রস্তাবনা। ২০১৯ সালের দিকে শুধুমাত্র চার লেনের প্রস্তাবনা জমা পড়ে মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু কাজের কাজ আর কিছুই হচ্ছিল না।

গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি সম্প্রসারণের দাবি ওঠে সিলেটের রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে। সাধারণ মানুষও এ দাবির সাথে একাত্ম হন।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সর্বশেষ মেয়াদে সরকার গঠনের পর সিলেট-১ আসনের সাংসদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পে গতি আনার চেষ্টা করেন। ২০২০ সালের ৮ আগস্ট সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল সড়কটি পরিদর্শন করে যায়। সড়কটির বাস্তব অবস্থা ও আগের প্রস্তাবিত নকশা পর্যবেক্ষণ করে প্রতিনিধি দল। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেট কর্তৃক তৈরিকৃত প্রস্তাবিত চার লেনের নকশায় ত্রুটি থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রতিনিধি দলের প্রধান সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের তৎকালীন যুগ্ম প্রধান জাকির হোসেন। তিনি দ্রুত অভিজ্ঞ সার্ভেয়ার দল নিয়োগ করে ডিজিটাল সার্ভে (টিবিএম) দিয়ে সংশোধিত নকশা তৈরি করতে সওজ সিলেট কার্যালয়কে নির্দেশ দেন।

ওই প্রতিনিধি দল সিলেট নগরীর রায়নগরে সওজের রেস্টহাউজে রাজনীতিবিদ ও পেশাজীবীদের সঙ্গে সড়কটির অবস্থা নিয়ে মতবিনিময় করেন। প্রতিনিধি দলের প্রধান জাকির হোসেন সেখানে বলেছিলেন, “বাইপাস সড়কটির বাস্তবতা অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্যই আমরা সিলেটে এসেছি। আমাদের পর্যবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট দফতরে জানাবো। আগের প্রস্তাবিত নকশা সংশোধনের মাধ্যমে সড়কটির পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প প্রস্তাবনা তৈরি করা হবে। এতে ২-৩ মাস সময় লাগতে পারে। আর ছয় মাসের মধ্যে কাজ শুরু হওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।”

তবে ছয় মাসের মধ্যে কাজ আর শুরু হয়নি। চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপিত হয়ে অনুমোদন পায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ক চার লেন করার বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে একটি প্রস্তাবনা আসে। ওই বছরের ২৫ আগস্ট প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা থেকে আসা সুপারিশগুলো প্রতিপালন করার পর গত বছরের শেষ দিকে পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটি একনেকের বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করেছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পে উল্লেখ করা হয়েছে, কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা মহাসড়ক। সড়কটি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাতায়াতে প্রধান ও একমাত্র বিকল্প পথ। একইসঙ্গে সড়কটি সিলেট শহরের যানজট এড়ানোর জন্য বাণিজ্যিক যানবাহনের ডাইভারশন হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। সড়কটি সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের ছয় কিলোমিটার কুমারগাঁওয়ে শুরু হয়ে বাদাঘাট দিয়ে অতিবাহিত হয়ে ওসমানী বিমানবন্দর সড়কের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বাদাঘাট লিংক রোডসহ সড়কটির মোট দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক ৭৮০ কিলোমিটার এবং বিদ্যমান প্রস্থ পাঁচ দশমিক ৫০ মিটার।

আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ থেকে পাথর বহনকারী ট্রাকগুলোর সিলেট শহরের মধ্য দিয়ে যাতায়াত করে। এতে নগরীর অন্যতম কেন্দ্রস্থল আম্বরখানা ইন্টারসেকশনে দীর্ঘ যানজটের তৈরি হয়। এতে সময়ের অপচয় ছাড়াও আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে।

কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়কটিকে চার লেনে উন্নীত করা হলে পাথরবোঝাই ট্রাকগুলো সেই সড়ক দিয়ে জাতীয় মহাসড়ক এন-২’তে সহজেই পৌঁছাতে পারবে। এতে সিলেট নগরীর মধ্যে যানজট কমবে, ট্রাকের কারণে ঘটা দুর্ঘটানগুলোও কমে আসবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ওসমানী বিমানবন্দরে যাতায়াতকারীরাও উপকৃত হবেন। বর্তমানে এ বিমানবন্দরটি দুই লেন বিশিষ্ট সংযোগ সড়কের মাধ্যমে সিলেট নগরীর সাথে যুক্ত। কিন্তু বিমানবন্দরটি বিকল্প সংযোগ সড়ক থাকা প্রয়োজন। কুমারগাঁও-বাদাঘাট-এয়ারপোর্ট সড়কটি আপগ্রেডেশন হলে এই উদ্দেশ্য পূরণ হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রস্তাবিত প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২৭ কোটি ৬৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। প্রকল্পের আওতায় ভূমি অধিগ্রহণ, সড়কের বাঁধে মাটির কাজ, সয়েল ট্রিটমেন্ট, রিজিড, ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট, বাস-বে নির্মাণ, ইন্টারসেকশন উন্নয়ন, পিসি গার্ডার সেতু এবং আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে