পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, ‘আমাদের অভিন্ন সংস্কৃতি, ভাষা, শিল্প-সাহিত্য, পারস্পরিক উন্নয়ন-অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা এবং অভিন্ন অর্জনগুলো উদযাপনের গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে শিলচর-সিলেট উৎসব।’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ উৎসব নিয়মিত আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।

আসামের কাছাড় জেলার শিলচর পুলিশ গ্রাউন্ডে দুদিনব্যাপী শিলচর-সিলেট উৎসবের প্রথম দিন ছিল গতকাল শুক্রবার। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গতকাল সন্ধ্যায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন ড. মোমেন।


ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ভৌগোলিকভাবে পাশাপাশি অবস্থান, ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক বন্ধন, ভাষা, শিল্প-সাহিত্য, রন্ধন ঐতিহ্য ও দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্কের মতো বহু কারণে দুদেশের সুসম্পর্ক পর্যায়ক্রমে আরও দৃঢ় হচ্ছে।’
শুক্রবার শিলচর-সিলেট উৎসবের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রেখেছে। এটি ভারতীয় নেতৃত্বের মাধ্যমেও স্বীকৃত ও প্রশংসিত হয়েছে। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারলে দুদেশের জনগণ উপকৃত হবে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় দেশ। আমরা স্থিতিশীলতায় বিশ্বাসী। গত ১৪ বছর ধরে আমাদের দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বিদ্যমান আছে। যে কারণে দেশের বিপুল উন্নয়ন হয়েছে। মানুষের আয় ও জিডিপি বেড়েছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকায় বাংলাদেশের পাশাপাশি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোও লাভবান হয়েছে। বর্তমানে সরকার দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে কিছু উগ্রবাদী লোক আছে, যারা এগুলো দেখেও দেখে না। শুনেও শুনে না। এরা সব সময় সুযোগ খুঁজে। এদের ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।

এদিকে, সন্ধ্যায় শিলচর পুলিশ প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত মৈত্রী উৎসবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ছাড়াও মিজোরামের গভর্ণর হরি বাবু কাম্বাবপতি, ভারতের কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি, পর্যটন ও উন্নয়ন মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি, আসাম সরকারের যোগাযোগ, এক্সাইজ ও মৎস্য মন্ত্রী পরিমল শুল্ক বৈদ্য, বাংলাদেশের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, ইকবালুর রহিম ও দেওয়ান শাহনেওয়াজ মিলাদ গাজী, ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান ,সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমদ উদ্বোধনী মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন-লোকসভায় শিলচরের সংসদ সদস্য রাজদ্বীপ রায়।

আসাম রাজ্য সরকারের যোগাযোগ, এক্সাইজ ও মৎস্য মন্ত্রী পরিমল শুল্ক বৈদ্য বলেন, অতীতে ১২ থানার অধীনে ছিল সিলেট-শিলচর। এরমধ্যে বর্তমানে বদরপুর, করিমগঞ্জ ও পাথারকান্দি নিয়ে শিলচর গঠিত। সিলেট ও শিলচরের সংস্কৃতি প্রায় এক ও অভিন্ন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

লোকসভার সদস্য রাজদ্বীপ রায় বলেন, বাংলাদেশ তথা ভারতবর্ষের উত্থানের দিকে সারাবিশ্ব তাকিয়ে আছে। এই মোক্ষম সময়ের সুযোগ নিতে না পারলে আমরা উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে দাঁড়াতে পারবো না। এজন্য দুদেশকেই একযোগে কাজ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী বীরবিক্রম, রুপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আহমদ আল কবির, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রাজ উদ্দিন, সিলেট চেম্বারের সাবেক সভাপতি এটিএম শোয়েব, আওয়ামী লীগ নেতা জগলু চৌধুরী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফসর আজিজ, চেম্বারের বর্তমান সহ-সভাপতি আতিক হোসেন, সাবেক সহ-সভাপতি হিজকিল গুলজার ও চন্দন সাহা, পরিচালক দেবাংশু দাস মিঠু, উইমেন্স চেম্বারের প্রেসিডেন্ট স্বর্ণলতা রায়, সীমান্তিকের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ, দৈনিক সিলেটের ডাক-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান ওয়াহিদ, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রাহাত তরফদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপনের অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ মৈত্রী উৎসব। ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়, ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন, নতুন দিল্লী ও বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সহযোগিতায় আয়োজন করা হয়েছে এ মৈত্রী উৎসবের। বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শুরু হয়।

এই উৎসবে দুই অঞ্চলের আদিবাসী সংস্কৃতি তুলে ধরার পাশাপাশি আলোচনায় অংশ নেবেন দুই দেশের বিশিষ্টজনেরা। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পর্যটন, নদী, পানি ও জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়াদি আলোচনায় উঠে আসবে।

উৎসবটি ২ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শুরু হয়ে শেষ হবে ৪ ডিসেম্বর বিকেলে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের নেতৃত্বে ১৫০ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল সম্মেলনে যোগ দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্রবার বেলা ১টায় সুতারকান্দি ইমিগ্রেশন দিয়ে শিলচরে প্রবেশ করেন। এ সময় গৌহাটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার রুহুল আমিন, সাবেক সহকারী হাইকমিশনার শাহ মো. তানভীর হোসেন ও ভারতের প্রতিনিধিরা পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রতিনিধি দলে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য, শিক্ষাবিদ ও শিল্প উদ্যোক্তারা শিলচর এসেছেন। সিলেট চেম্বার সভাপতি তাহমিন আহমদের নেতৃত্বে ৩৫ সদস্যের ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক প্রতিনিধি দল উৎসবে যোগ দিয়েছে। সম্মেলনের তৃতীয় দিনের ‘ট্রেড ও কমার্স’ সংক্রান্ত সেশনে বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী অংশ নেবেন।

অপরদিকে, ভারতের তরফ থেকে দিল্লীর কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিসহ আসাম, মণিপুর ও মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রীরা থাকবেন এই উৎসবে। আসামের সঙ্গে ঢাকার সম্পর্কের যে নতুন দুয়ার খুলছে এটি তার প্রথম পদক্ষেপ বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/ইআ-০৩/আরআই-কে