গত কয়েক মাস থেকে বাংলাদেশ থেকে অনেকে যোগাযোগ করেছেন।ইউরোপে উনারা আসতে চাচ্ছেন। বেশির ভাগ ভাইরা বলছেন রোমানিয়া, ক্রোয়েশিয়া, পোল্যান্ড, পর্তুগাল এবং মাল্টার ভিসা নিয়ে আসবেন। ইতিমধ্যে অনেকে ভিসাও পেয়ে গেছেন। আমি কাউকেই বলবনা যে আপনারা আসবেন না, যদিও এখন ইউরোপের অবস্থা খুবই খারাপ যাচ্ছে।     

তবে যাদের পড়ালেখার করার ইচ্ছা আছে আপনাদের বলবো সেলফ ফান্ডে আসলে মাস্টার্সে আসবেন। অনার্সে যারা পড়ছেন, কখনো পড়ালেখা ছেড়ে এখন আসবেন না।এছাড়া অনার্সে যাঁদের ভাল রেজাল্ট আছে, আপনারা আইএলটিএস দিয়ে,এক্সট্রা-কালিকুলামে যোগ্যতা বাড়িয়ে ফুল-ফান্ডেড স্কলারশিপের জন্য চেষ্টা করতে পারেন। তাহলে মানসম্মান নিয়ে থাকবেন, ভাল করতে পারবেন নিজের-পরিবারের ও দেশের জন্য।তাছাড়া এখন ইউরোপে অনেক ধরণের স্কলারশিপের সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগ ভালভাবে কাজে লাগান। তবে অনার্সে আসতে পারেন বাবার প্রচুর টাকা পয়সা থাকলে। 


ওকে, এখন আসি যারা দেশে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছেন কিন্তু স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে এসে কাজ করতে চান।  এভাবে কেউ না আসাই উত্তম। কাজের জন্য আসতে চাইলে ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়েই আসলে অনেক ভাল। আর এখন এই মুহূর্তে ইতালি, পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক, পর্তুগাল, গ্রিস বাংলাদেশীদের ওয়ার্ক পারমিট ভিসা দিচ্ছে। তবে কখনো কাজের কোম্পানি ছেড়ে যাবেন না। যেখানে যাবেন ঐ জায়গায় কাজ  করবেন তাহলে ভালথাকবেন টাকা কম হলেও। 

এখন আসি যারা সেঙ্গেন জোনের বাহিরের দেশ রোমানিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, বুলগেরিয়া বা তুরস্ক দিয়ে এসে ইউরোপে প্রবেশ করতে চান।আপনাদেরকেও আসার জন্য বারণ করবো না। কারণ যদিও এই পথ অনেক কষ্টসাধ্য, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয় বহুল তারপরও আপনারা বাংলাদেশের বেকারত্বের অভিসপ্ত জীবন থেকে মুক্তি পেতে চান।পরিবারে মুখে হাসি ফুঁটাতে চান। কিন্তু যাঁদের আর অন্য কোন বিকল্প পথ নেই , আপানারা দয়াকরে সাবধানে এই পথে আগাবেন।  

এখন আসি মূল কথায়। সবার জন্য কিছু সাজেশন, আপনারা সবাই যে যে দেশে আসবেন অবশ্যই ইংরেজি ভাষার সাথে  ওই দেশের ভাষার অন্ততপক্ষে লেভেল (A2) এ২ শিখে আসবেন, সেই সাথে ড্রাইভিং ও কম্পিউটারের কাজ শিখে আসবেন। বিশেষ করে যারা দেশে পড়া লেখা করেছেন। আর যাদের কারি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করার ইচ্ছা আছে আপনারা ওই দেশের কারি/ কিউজিন জেনে নিয়ে শেফের কাজ শিখে আসবেন। তবে ড্রাইভিং, কম্পিউটারের কাজ, ইংরেজি ও ওই দেশের ভাষার লেভেল এ২ শিখে আসবেন এই কাজ গুলো আপনাদের জন্য ফরজ( আবশ্যক)। 

আর যারা লেখা পড়া করেন নি অথবা অল্প করেছেন। আপনারা প্রথমে ওই দেশের ভাষার লেভেল এ২ শিখে আসবেন তারপর বিল্ডিং কনস্ট্রাকশনের কাজ , ইলেকট্রিকের কাজ, পেইন্টিংর কাজ, সেফের কাজ, ক্লিনিংএর কাজ, লন্ড্রির কাজ, মোবাইল রিপেয়ারিং কাজ ইত্যাদি কাজ শিখে আসবেন এবং অবশ্যই এই সেক্টর গুলোতে কাজ করার মন মানসিকতা নিয়ে আসবেন। সেই সাথে সাবাইকে বলবো প্রথমে সারভাইভিংয়ের জন্য যে কোন কাজ করার  মনমানসিকতা নিয়ে আসতে হবে। না হয় বিদেশে না আসাই ভাল। বিদেশ নিয়ে চিন্তা ছেড়ে দেন। দেশে ছোটখাটো ব্যবসা করেন, মুরগির-গরু,ছাগলের-ফার্ম করেন, মাছের খামার ফলমূলের বাগান করেন। কাজ করেন এই সেক্টর গুলোতে সচ্ছলতা আসবে, নিজের কাজে কোন লজ্জা নেই, হীনমন্যতা নেই। সব কাজই গুরুত্বপূর্ণ। পাছে লোকে কিছু বলবে, এতে আপনার আমার কিছু জায় আসে না। কেউই আমার-আপনার মৌলিক প্রয়োজন পূর্ণ করে দিতে আসবে না। চিন্তা করে দেখবেন শহরের পরিচ্ছন কর্মী যদি একদিন কাজ না করে । তাহলে তথাকতিত সভ্য সমাজের কি অবস্থা হবে?। 
কারণ এখানে ইউরোপে আপনার বাবা-মা ভাই বোন আত্মীয় স্বজন কেউ নেই, বাড়ি-ঘর, জায়গা জমিও পুকুর কিছুই নেই।এমনকি অনেকের কেউই নেই। এখানে আসলে দেখবেন ইউরোপের লাল-নীল সোডিয়াম বাতির মতো প্রতিনিয়ত জীবনের রুপ বদলাবে। স্বপ্নের ইউরোপ স্বপ্নই থেকে যাবে । আর যাদের অমুক ভাই-তমুক ভাই আছেন। আসলে দেখবেন খুবই ব্যতিক্রম ছাড়া কাউকে খুজেই পাচ্ছেন না।উনারা আপনাকে এখানে কিছুই করবে না । এমনকি করারও তেমন কোন সুযোগ নেই। তাছাড়া আমাদের মাথায় রাখতে হবে। এখানে সবার সীমাবদ্ধতা আছে। সাবার ব্যস্ততা আছে।
সবশেষ  মহান আল্লাহর কাছে সবার জীবনের সফলতা, সচ্ছলতা ও মজ্ঞল কামনা করছি।

লেখক: তুর্কি গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ ফেলো
ফ্রান্স ও প্রবাসী সাংবাদিক।