পরিবারের হাল ধরতে পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরবে। কিন্তু ‘জিহাদ’র তাড়নায় ফিরে এলেন দেশে। দেশে ফিরে একবারের জন্যও যাননি নিজের বাড়িতে। বিমানবন্দর থেকেই সরাসরি চলে যান ‘জঙ্গি’ ক্যাম্পে।

‘বিপথগামী’ এই যুবকের নাম আব্দুর রউফ। তার বাড়ি সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জে এবং তিনি ছোট একটি ‘জঙ্গি’ দলের নেতা বলে সিলেটভিউ-কে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস শাখার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কে. এন. রায় নিয়তি।


সোমবার (২ জানুয়ারি) রাতে সিলেটভিউ’র সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয় এই পুলিশ কর্মকর্তার। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (সিটটিসি) মো. আসাদুজ্জামানের বরাত দিয়ে তিনি জানান, অনলাইনে আল-কায়েদার মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশে ‘কথিত জিহাদ’ করার পরিকল্পনা ছিল আব্দুর রউফের। সেই লক্ষ্যে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেন তিনি। তার বাড়ি সুনামগঞ্জে। তবে তিনি দেশে এসে বাড়ি না গিয়ে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি চলে যান জঙ্গি ক্যাম্পে। তিনি একটি জঙ্গি দলের নেতা। 

এর আগে সোমবার দুপুরে এ বিষয়ে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে প্রেস ব্রিফিং করেন অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান। তিনি জানান- রোববার রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিন্যাল, চট্টগ্রাম ও টেকনাফ থেকে আব্দুর রউফসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম বিভাগ (সিটিটিসি)।

আব্দুর রউফ (দলনেতা) ছাড়া বাকি গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- সাকিব, শামীম হোসেন, নাদিম শেখ, আবছার ও সাইদ উদ্দিন। 

সিটিটিসি প্রধান বলেন, আব্দুর রউফ সমন্বয়ক হয়ে সবাইকে অনলাইনে একত্রিত করে শরিয়াহভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন, জিহাদ, প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। পরবর্তী সময়ে অনলাইনের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত এক বাংলাদেশি সহযোগীর সঙ্গে পরিচয় হয় তাদের এবং অডিও-ভিডিও কলে যোগাযোগ স্থাপন করে। বিদেশে অবস্থানরত ওই ব্যক্তি সবাইকে হিজরত করে ‘জিহাদ’র জন্য উদ্বুদ্ধ করে। 

পরে সেই সদস্য লিবিয়ায় অবস্থানরত আরও একজন বাংলাদেশি এবং টেকনাফের স্থানীয় একজনের সঙ্গে সবার পরিচয় করিয়ে দেন। সম্মিলিত আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয় আব্দুর রউফ, শামীম, সাকিব, নাদিম, সাইদসহ অন্য যারা হিজরতে রাজি তারা প্রথমে টেকনাফ গিয়ে তাদের স্থানীয় সহযোগিদের মাধ্যমে ট্রেনিং গ্রহণ করবে। পরে তারা বাংলাদেশে ইসলামি শাসন কায়েমের জন্য ‘জিহাদ’ করবে। 

তিনি বলেন, গত বছরের নভেম্বর প্রথম সপ্তাহে সবাইকে নিজ নিজ ব্যবস্থাপনায় টেকনাফে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। সে অনুসারে গত ১৬ নভেম্বর সাকিব ও নাদিম টেকনাফ যান এবং স্থানীয় সহযোগী আবছার তাদের টেকনাফে ভাড়া বাসায় থাকার ব্যবস্থা করে দেন। 

আব্দুর রউফ ছুটি না পাওয়ায় যথাসময়ে দেশে আসতে ব্যর্থ হলে তারা টেকনাফের বাসায় অবস্থান করেন এবং রউফের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।  ২২ নভেম্বর গ্রেপ্তার রউফ দেশে এলে শামীম ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে তাকে রিসিভ করে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের অন্য সহযোগিদের ভাড়া করা বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থান করে বিভিন্ন শলা-পরামর্শ করেন তারা। দুদিন পর তাদের মধ্যে দুজন সাকিবের সঙ্গে যোগাযোগ করে অন্য সহযোগিদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।

সিটিটিসি বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানান- তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনভিত্তিক অ্যাপসে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে দল গঠন করেন। পরে স্থানীয় সহযোগিদের নিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশে জঙ্গিবাদের জন্য টেকনাফে হিজরত করে অবস্থান করছিলেন।

সিটিটিসি প্রধান আরও বলেন, এখনও তারা সাংগঠনিক কাঠামো দাঁড় করাতে পারে নাই। এটা ছিল তাদের প্রথম প্রচেষ্টা। তারা নিজেদের মধ্যে সশস্ত্র জিহাদের আলোচনা করে, এভাবে হিজরত করছিল। এদের প্রথমই তেমন সদস্য সংখ্যা থাকে না, এরা আস্তে আস্তে সদস্য সংখ্যা বাড়ায়। তারা টেকনাফ পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান নেওয়ার পরিকল্পনা করে। তবে আল কায়েদার সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই। গ্রেপ্তার জঙ্গিরা আল-কায়েদার মতাদর্শ অনুসরণ করে। অনলাইনে বিভিন্ন ভিডিও কনটেন্ট দেখে তারা মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।

এদিকে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধ আইনের মামলায় এই ছয় জঙ্গিকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

সোমবার তাদেরকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিটিটিসি’র উপ-পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম। এরপর তাদেরকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রশিদুল আলমের আদালত তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। 


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম