স্বাভাবিকভাবে একটা দেশের সব-খাতেই যদি ক্রমবর্ধমান হারে অরাজকতা চলতেই থাকে, তবে ঐ দেশের সরকারকে, এসব বিষয়ের দৃষ্টিগোচর করা সংবাদমাধ্যমের একটা বিশাল দায়িত্ব। কেননা গণতান্ত্রিক দেশে সবকিছুর ঊর্ধ্বে জনগন। আর এই জনগনের প্রাত্যহিক সমঅধিকার পাইয়ে দেওয়ার জন্য সদা-সর্বদা কাজ করে থাকেন সংবাদপত্র ও সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা।

 


গত বছরের জরিপ অনুযায়ী রাজনৈতিক দল, পুলিশ ও বিচারব্যবস্থার পর দুর্নীতিগ্রস্ত খাতের তালিকায় আছে সংসদ বা আইনসভা (৮৮ শতাংশ), সরকারি প্রশাসন (৮৪ শতাংশ), ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান (৮৩ শতাংশ), স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা (৮১ শতাংশ), গণমাধ্যম (৬০ শতাংশ), শিক্ষা (৫৫ শতাংশ), এনজিও (৩৯ শতাংশ), সামরিক বাহিনী (৩২ শতাংশ) এবং ধর্মীয় সংগঠন (৩২ শতাংশ)।

 

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে তা অস্বীকার করার উপায় নাই, কিন্তু কই উপরোক্ত কয়েকটি খাতের দুর্নীতি ঠেকানো গেল কি?


যে দেশের সংসদ বা আইনসভায় দুর্নীতির পরিমান ৮৮ শতাংশ। আর যাই হোক সে দেশের উন্নয়ন তখন বিশ্বের যেকোনো মানুষ অনুমান করতে পারেন দ্বিধাহীনভাবে।
বাংলার একটা বিখ্যাত প্রবাদ আছে “শুয়োর বড় হলেও হাতি হয়না”। সত্যিই দুর্নীতির নিজস্ব স্বভাবকে অতিক্রম করার সাধ্য বাংলাদেশে সিভিলিয়ান বলো আর যাই বলো কারো নেই। সেক্টর বা খাত সে তো “হরির লুট” ছড়িয়ে ছিটিয়ে খাওয়ার এক আরাম কেদারা। হঠাৎ যখন প্রতিবাদ আসে, কুপোকাত করা আর লাঞ্চিত করা যেন এক্তিয়ারের ভিতরেই।

 

প্রায়েই নিউজ দেখা যায় যে অমুক সাংবাদিক গ্রেফতার তমুক সাংবাদিক গ্রেফতার। গত বছরেই ঘটে যাওয়া সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা, রোজিনা ইসলাম নামে দৈনিক প্রথম আলোর একজন জ্যোষ্ঠ সাংবাদিককে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঁচ ঘন্টা আঁটকে রেখে থানায় নিয়ে অফিশিয়াল স্রিক্রেট অ্যাক্টে মামলা দেওয়া হল। অভিযোগ তিনি মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ নথি সরান। সাম্প্রতিক সময়ে রোজিনা ইসলাম এই মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা নিয়ে বেশ কিছু রিপোর্ট করছিলেন। যার মধ্যে নিয়োগ সংক্রান্ত দুর্নীতির রিপোর্ট ছিল। ছিল স্বাস্থ্যখাতের জন্য ৩৫০ কোটি টাকার জরুরী কেনাকাটায় অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত রিপোর্টও। প্রতিবাদের ফলস্বরূপ হেনস্তা, শারিরীক বা মানসিকভাবে পীড়া দেওয়া বাংলাদেশের কোন খাতে নেই? জনস্বার্থে দুর্নীতির গোমর ফাঁস করার জন্য মৃত্যুমুখে পতিত হওয়া তো মামুলী ব্যাপার। উদাহরণ দেখবেন! সাগর-রুনি হত্যা। কিছু হয়েছে এই খুনের জন্য? হবেনা, কেননা হাজারো সংসদের শূয়র ও সিভিলিয়রা এতে যুক্ত।

 

বাংলাদেশের মানুষ তো সংবাদপত্র ও সংবাদ মাধ্যমের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। একটি দেশের সবগুলো সংবাদমাধ্যম ও সংবাদপত্রকে যদি যেকোনোভাবে নিরাপত্তাহীনতার বাতাবরণে সরকারের করতলে রাখা হয়।


তখন আপনি আমি কেউ স্বচ্ছ থাকব না। জীবনের প্রয়োজনে জীবনের জন্য। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদের উন্নতিতে যে রাষ্ট্রগুলি বাতাসপ্রয়োগে সদা ব্যস্ত,তাদের বাতাসে রাষ্ট্রের গালফুলা ভাব বেশীদিন থাকবে না, চারদিকে থাকান অনেক দেখতে পাবেন।

 

এদেশের সব সরকারী সম্পত্তি কয়েকটি ধনীগোষ্ঠী দখল করে রয়েছে, সরকারের কি মানা ওদের আত্নসম্মানে সত্য আঘাত দেওয়ার? না হলে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় আত্নহত্যায় প্ররোচনা দিয়ে আসামি বাতাসে উড়ে কোন আসমানে? প্রথম দু-একদিন কোনো নিউজ হল না। চলে যাওয়ার পর চাপে পড়ে সংবাদপত্রে নিউজ? এই সবকিছুই কি নক্ষত্রপতনের আভাস নয়? দুর্নীতি তবু ও কি থামবে না, নাকি থামোনোর চেষ্টাকারীকে দমিয়ে রাখা পোয়াতি পূর্ব বাংলার নব্য সংস্করণ? এবং তারপর একজন স্বাস্থ্যকর্মী হয়ে সিনিয়র এক সাংবাদিককে এইভাবে গলা টিপে ধরতে দেখে আমি মোটেও বিচলিত হই নি! কারণ, তারা ১৪ বছর ধরেই দেশকে এভাবেই গলা টিপে ধরে রাখছে!

 

কারন আগেই বলেছি “মাছের মাথায় পচঁন ধরেছে লেজ ধরে টানাটানি করে কি লাভ“ তাই এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার হবে এটা আশা করা আর নর্দমায় ঘুমিয়ে ১০ তলা বিল্ডিংয়ের স্বপ্ন দেখার মতোই মনে হয় আমার কাছে।

 

লেখক: সাংবাদিক