ঝাঁকে উড়ে আকাশ জুড়ে, দেখতে কি সুন্দর! জালালের জালালি কইতর! মাজার এলাকায় ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ন্ত কবুতরের সৌন্দর্যদেখে অভিভূত হয়ে সত্তরের দশকের শেষের দিকে অপূর্বএ গান রচনা করেছিলেন আবদুল হামিদ বয়াতি। বাউল আব্দুল হামিদের এই গানে দোলেননি শাহজালালের এমন ভক্তের সংখ্যা খুবই কমই আছেন।
৩৬০ আউলিয়ার সিলেট নগরী ‘পূন্যভূমি’ হিসাবে খ্যাত। সিলেটের মাটিতে যেসব পীর, দরবেশ শায়িত আছেন এদের মধ্যে হযরত শাহজালাল (রঃ) অন্যতম। হযরত শাহজালাল (রঃ) সাথে আসা এসব কবুতিরগুলো তার নামানুসারে মানুষের মুখে মুখে হয়ে যায় জালালি কবুতর। তবে সিলেটের আঞ্চলিক উচ্চারণে সেটি ‘জালালি কইতর’ নামেই ব্যাপক পরিচিতি পায়। প্রতিদিন মাজার জিয়ার এবং জালালি কবুতর দেখতে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে অসংখ্য দর্শনার্থী আসেন মাজারে।
কিন্তু কালের বিবর্তনে ৭০০ বছরের ঐতিহ্যের প্রতীক এ কবুতর আজ হারাতে বসেছে তার অস্তিত্ব। মাজারের বিভিন্ন ভবন তৈরি করা, জালালি কবুতর ধরে খেয়ে ফেলা, খাদ্যের অভাবসহ বিভিন্ন কারনে বিলুপ্ত হতে চলেছে জালালি কবুতর।
মাজার গেইট এলাকার বাসিন্দা রুবেল জানান, জালালি কবুতর সিলেটের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যেরই অংশ। একটা সময় মাজারে প্রচুর জালালি কবুতর দেখতে পেতাম। মাজারের প্রতিটি কবুতরের খোপে শুধু জানালি কবুতর দেখাযেত। কিন্তু এখন আর সেই দৃশ্য দেখাযায় না। মাজারের ভিতরের খোপগুলোতে এখন ভিন্ন কবুতর দেখা যায়।
মাজার জেয়ারত করতে আসা রবিউল বলেন, ঢাকা থেকে এসেছি মাজার জিয়ারত করতে। হযরত শাহজালাল (রঃ) এবং তার জালালি কবুতরের কথা অনেক শুনেছি। এর আগেরও বেশ কয়েকবার মাজারে এসেছি। তখন জালালি কবুতরের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। কিন্তু এবার এই সংখ্যা অনেক কম দেখতে পাচ্ছি। অনেক দেশী কবুতর দেখতে পাচ্ছি। এর কারন বুঝতে পারছি না। সিলেটের এই ঐতিহ্যের প্রতীকে বাঁচিয়ে রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে তা না হলে এই কবুতর একসময় বিলীন হয়ে যাবে।
শাহজালাল (রহ.) দরগা মাজারের মোতাওয়াল্লি ফতেহ উল্লাহ আল আমান বলেন, জাললি কবুতরে সংখ্যা আগের থেকে অনেক কমেছে এটা ঠিক। মাজারে কিছু অন্য প্রজাতির কবুতর জালালি কবুতরের সাথে চলে আসে। আমরা মাঝে মধ্যে অন্য প্রজাতির কবুতর সরিয়ে ফেলি। জালালি কবুতরকে রক্ষা করতে হলে আমাদের সবাইকে সচেতন ভূমিকা রাখতে হবে।’
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স অ্যান্ড এনিম্যাল ব্রিডিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ডা. মো. নাজমুল হক সিলেটভিউ-কে জানান, জালালি কবুতর বিলুপ্তির মূলে রয়েছে মানুষ। একটা সময় শহরের বিভিন্ন জায়গায় এই জালালি কবুতরের বিচরণ ছিল। তাই মানুষ যেখানেই তাদের পেত, ধরে খেয়ে ফেলত। এটি একটি কারণ। আরেকটি কারণ হচ্ছে খাবারের অভাব। মাজারে যে খাবরা দেয়া হয়ে তা অতি সামান্য এবং পুষ্টিহীন।
তিনি বলেন, জালালি কবুতর খুব শক্ত প্রকৃতির তাই তাদের অন্যান্য কবুতরের তুলনা কম রোগ হয়। এই প্রজাতির কবতর গুলো খুব দূর থেকে খাবার খেয়ে আসতে পারে। জালালী কবুতর স্বতন্ত্র প্রজাতির না হলেও এর আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। মানুষের অসচেতনা এবং বিভিন্ন জায়গায় তাদের বাসন্থান নষ্ট কারা হচ্ছে। মূলত এসব কারনেই জালালি কবুতর বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে।
নাজমুল হক আরো জানান, জালালি কবুতর অনেকটা দেশী কবুতরের মতই। যদি তাদের বিরক্ত না করা হয় এবং তাদের নিদ্রিষ্ট একটি বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেয়া হয় তাহলে অল্প দিনেই এই কবুতর তার আগের অবস্থানে ফিরে যাবে। আর এই কবুতর বাঁচাতে এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তিনি।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / নাজাত / ডি.আর