বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য চলতি বছরটা নানা চড়াই-উতরাইয়ের বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সামনের দিনগুলোতে আরও তৎপর হয়ে ওঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাতীয় রাজনীতির আঁচ লাগবে সিলেটেও। তবে এখানে নিজেদের ও অঙ্গসংগঠনের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ ও অপূর্ণাঙ্গ থাকায় মাঠের রাজনীতিতে উভয় দল ধাক্কা খেতে পারে বলে মনে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অবশ্য বিভিন্ন কমিটির জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তৎপরতা বাড়বে বলেও মনে করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে আছে। আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সিলেট জেলা ও মহানগর কোনো ইউনিটেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। একই অবস্থা অঙ্গসংগঠন যুবলীগেরও। এ ছাড়া বহু আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের নতুন কমিটির গুঞ্জনও আছে।


সিলেটে আওয়ামী লীগের চেয়ে ‘খারাপ’ অবস্থায় আছে বিএনপি। দলটির জেলা ও মহানগর কোনো ইউনিটেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। জেলার সম্মেলন হলেও মহানগর চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। বিএনপির ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রদলের জেলা ও মহানগর শাখার কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। এ শাখায় নতুন কমিটি যাতে দ্রুত আসে, সেজন্য কমিটির দায়িত্বশীলরাই তদবির চালাচ্ছেন! এদিকে, জেলা ও মহানগর যুবদলের সম্মেলনের পর এখন পূর্ণাঙ্গ কমিটির অপেক্ষায় রয়েছেন নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলেও আছে সম্মেলন ও কমিটি পূর্ণাঙ্গ হওয়ার অপেক্ষা।

আওয়ামী লীগের চিত্র>>
২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে উভয় শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক। সেদিন থেকেই শুরু হয় জেলা-মহানগর শাখার নতুন কমিটির মেয়াদ। এক বছরের বেশি সময় পর, ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি উভয় শাখায় পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের এই কমিটির নির্ধারিত তিন বছরের মেয়াদ শেষ হয়েছে গেল ডিসেম্বরে। তবে আগামী নির্বাচনের আগে সিলেট আওয়ামী লীগে আর সম্মেলন বা নতুন কমিটি আসছে না, এমনটা প্রায় নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীল এক নেতা।

দীর্ঘ অপেক্ষার পর সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রলীগের নতুন কমিটি এসেছিল ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর। তবে সেদিন দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। জেলা শাখায় নাজমুল ইসলামকে সভাপতি ও রাহেল সিরাজকে সাধারণ সম্পাদক এবং মহানগর শাখায় কিশোয়ার জাহান সৌরভকে সভাপতি ও নাঈম আহমদকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেছে নেওয়া হয়। নেতা-কর্মীরা শিগগিরই পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের আশায় ছিলেন। তবে তাদের আশা পরিণত হয়েছে হতাশায়। নির্দিষ্ট এক বছর মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও সিলেট ছাত্রলীগ পায়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি।

সিলেটে ছাত্রলীগের চেয়ে যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অপেক্ষা আরও দীর্ঘ। সিলেট মহানগর যুবলীগের সম্মেলন ২০১৯ সালের ২৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়। একদিন পর, ২৯ জুলাই সম্মেলন হয় জেলা শাখার। সম্মেলনে ভোটের মাধ্যমে উভয় শাখায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। জেলায় সভাপতি হন শামীম আহমদ (ভিপি শামীম), মহানগরে হন আলম খান মুক্তি। জেলায় সাধারণ সম্পাদক হন শামীম আহমদ (সীমান্তিক শামীম), মহানগরে সাধারণ সম্পাদক হন মুশফিক জায়গীরদার। এই কমিটির নির্ধারিত তিন বছরের মেয়াদ ২০২২ সালের জুলাইয়ে শেষ হয়। কিন্তু কমিটি আর পূর্ণাঙ্গ হয়নি। হতাশ হলেও পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীরা আশায় আছেন পূর্ণাঙ্গ কমিটির।

সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ। ২০১৭ সালের ১৪ জুন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্র। আর সে বছরের ১৭ জুন জেলা শাখায় ৯৯ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। এ দুই কমিটির নির্ধারিত দুই বছরের মেয়াদ পেরিয়ে গেছে ২০১৯ সালে। এরপর আর সম্মেলন বা নতুন কমিটির কোনো তৎপরতা দৃশ্যমান নয়। তবে সিলেটে নতুন কমিটি নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাবনা আছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বশীল এক নেতা।

বিএনপির চিত্র>>
সিলেট জেলা বিএনপির সম্মেলন হয় ২০২২ সালের ২৯ মার্চ। সম্মেলনে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী সভাপতি, ইমরান আহমদ চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক ও শামীম আহমদ সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর প্রায় এক বছর ধরে জেলা বিএনপিতে পূর্ণাঙ্গ কমিটির অপেক্ষা। তবে এ অপেক্ষা আর বেশি দীর্ঘায়িত হবে না বলেই জানিয়েছেন বিএনপির এক নেতা।

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দিয়ে সিলেট মহানগর বিএনপিতে ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আহ্বায়ক কমিটি দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকীকে আহ্বায়ক ও মিফতাহ সিদ্দিকীকে করা হয় সদস্যসচিব। প্রায় দেড় বছর পর এই আহ্বায়ক কমিটি আগামী ৪ মার্চ সম্মেলনের আয়োজন করছে। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে মহানগর বিএনপিতে আসবে নতুন নেতৃত্ব।

সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের আংশিক কমিটি গঠিত হয় ২০১৮ সালের ১৩ জুন। সেদিন জেলা শাখায় আলতাফ হোসেন সুমনকে সভাপতি ও দেলোয়ার হোসেন দিনারকে সাধারণ সম্পাদক এবং মহানগর শাখায় সুদীপ জ্যোতি এষকে সভাপতি ও ফজলে রাব্বি আহসানকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক কমিটি দিয়েছিল কেন্দ্র। দুই বছর মেয়াদী এই কমিটির মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ার পর, ২০২১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি উভয় শাখায় পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। জেলায় ৩২১ সদস্যের এবং মহানগরে ২৬৬ সদস্যের কমিটি দেয় কেন্দ্র। জেলা-মহানগর ছাত্রদলের কমিটি প্রায় আড়াই বছর ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ। এ দুই শাখায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এখন দ্রুত নতুন কমিটি আসুক, এমনটাই চাইছেন। এজন্য তারা কেন্দ্রেও তদবির চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নেতা।

প্রায় দুই দশক পর সিলেটে যুবদলের সম্মেলন হয় গেল বছরের সেপ্টেম্বরে। ১০ সেপ্টেম্বর জেলা যুবদলের সম্মেলনে সরাসরি ভোটে সভাপতি পদে অ্যাডভোকেট মুমিনুল ইসলাম মুমিন ও সাধারণ সম্পাদক পদে মকসুদ আহমদ নির্বাচিত হন। ১১ সেপ্টেম্বর প্রত্যক্ষ ভোটে নেওয়াজ বখত চৌধুরী তারেক সভাপতি ও মির্জা সম্রাট সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। উভয় শাখার এই আংশিক কমিটি বর্তমানে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ করছে।

সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল চলছে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে। ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট রাতে সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। সেদিন জেলা ও মহানগরে ৬১ সদস্যবিশিষ্ট ঢাউস আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই আহ্বায়ক কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের আগেই বিলুপ্ত হয়ে যায়। গেল বছরের ৯ অক্টোবর জেলা-মহানগরে ফের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। এই নতুন আহ্বায়ক কমিটি উপজেলা, পৌর ও মহানগরের ওয়ার্ড শাখাগুলোতে সাংগঠনিক তৎপরতা জোরদার করেছে। এরপর তারা জেলা ও মহানগর শাখার সম্মেলন ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে কাজ শুরু করবেন বলে জানা গেছে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে