মৌলভীবাজারের বড়লেখায় পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্টের আওতাধীন সমনভাগ বিটের মাখালজুড়া ও ধলছড়া এলাকার বনাঞ্চলে আগুন লাগার ঘটনায় গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা থাকলেও এখনও জমা হয়নি। 

তবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তদন্ত কাজ শেষে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। তদন্তে তারা ১ দশমিক ৮৫ হেক্টর বন পুড়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছেন। এছাড়া কোনো দুস্কৃতিকারীরা জবর-দখলের উদ্দেশ্যে বনে আগুন লাগাতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন। 


তদন্ত কমিটির প্রধান সহকারী বন সংরক্ষক (শ্রীমঙ্গল) মো. মারুফ হাসান রোববার সন্ধ্যা সাতটায় বলেন, ‘আমাদের তদন্ত কাজ শেষ হয়েছে। প্রতিবেদনও প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিবেদন এখনও অফিসিয়ালি জমা দেওয়া হয়নি।’ 

তিনি বলেন, ‘বনে আগুন লাগার ঘটনায় সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিওএফ) ঘটনাটি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। তিন কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছিল। গত ১৩ মার্চ চিঠি হাতে পেয়েছি। ওইদিনই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ১৬ তারিখের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা ছিল।’ 

তাহলে প্রতিবেদন জমা দিতে এত সময় লাগছে কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একটি ট্রেনিংয়ের কারণে এক-দুইদিন একটু লেট হচ্ছে। আশা করছি আগামীকাল (সোমবার) এখান (ট্রেনিং) থেকে গিয়ে বিকেলের দিকে প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।’

তদন্তে আপনারা কী পেয়েছেন-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তদন্তে ১ দশমিক ৮৫ হেক্টর বন পুড়েছে বলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি। গাছপালার তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিছু গাছের পাতা পুড়ে গেছে এবং আগুনে ঝলসে গেছে। বন্যপ্রাণীরও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।’ 

বনে কারা আগুন লাগিয়েছে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটাতো আমরা দেখিনি। এবিষয়ে বড়লেখা থানায় বিট অফিসার জিডিও করেছেন। তবে আমরা সাসপেক্ট করছি যে, কোনো দুস্কৃতিকারীরা জবর-দখলের উদ্দেশ্যে আগুন লাগাতে পারে।’  

এর আগে গত ৭ মার্চ দুপুরে সমনভাগ বিটের মাখালজুড়া ও ধলছড়া এলাকার বনাঞ্চলে আগুন লাগে। এতে কয়েক হেক্টর বনভূমির বাঁশ-গাছ ও ঝোপঝাড় পুড়ে যায়। ফলে হুমকিতে পড়েছে পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।  ঘটনাটি তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই ঘটনায় বন বিভাগের সমনভাগ বিটের কর্মকর্তা নুরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করে সিলেট অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে। 

স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, বনায়নের জন্য পরিকল্পিতভাবে সংরক্ষিত বনে আগুন লাগানো হয়েছে। এতে বনবিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের মদদে উপকারভোগীরা বনে আগুন দিয়েছেন। আগুনে বনের প্রায় ৪০ হেক্টর বনভূমির বাঁশ-গাছ ও ঝোপঝাড় পুড়ে গেছে বলে তারা ধারণা করছেন। এতে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে পরিবেশের। হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য। বনবিভাগ ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।  তবে বনবিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, কারও ফেলা সিগারেটের অবশিষ্ট অংশ থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। আগুনে বনের প্রায় ১ দশমিক ৮৫ হেক্টর বনভূমি পুড়ে গেছে। 

স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, বনে গাছ লাগানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে। এতে বনবিভাগের লোকজনের মদদে উপকারভোগীরা বনে আগুন দিয়েছেন। আগুনে বনের ভেতরে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ-গাছ ও ঝোপঝাড় পুড়ে গেছে। জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। প্রাণের ভয়ে বনে থাকা কয়েকটি হাতি ভারতের দিকে পালিয়েছে। পাঁচ-ছয় দিন বন আগুনে পুড়েছে। বনবিভাগের লোকজনদের জানানোর পরও তারা তাতে গুরুত্ব দেননি। শুরুতে গুরুত্ব দিলে এত বন পুড়ত না। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাথারিয়া হিলস রিজার্ভ ফরেস্টের আওতাধীন সমনভাগ বিটের সমনভাগ সংরক্ষিত বনের আয়তন ১ হাজার ৮৫০ হেক্টর। সমনভাগ বনাঞ্চলটি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মিলে চিরসবুজ একটি বনাঞ্চল এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীবৈচিত্র্য রক্ষায় বাংলাদেশের মধ্যে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অবস্থান অন্যতম। গত ৭ মার্চ দুপুরে সমনভাগ বিটের মাখালজুড়া ও ধলছড়া এলাকার বনাঞ্চলে আগুন লাগে। আগুনে বনের কয়েক হেক্টর বনভূমির বাঁশ-গাছ ও ঝোপঝাড় পুড়ে ছাই হয়ে যায়। খবর পেয়ে বনবিভাগের লোকজন দীর্ঘ চেষ্টা চালিয়ে আগুন নেভান। তবে আগুনে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে বনভূমির প্রাকৃতিক পরিবেশ, ধ্বংস হয়েছে বন্যপ্রাণির আবাসস্থল। বনে আগুন লাগার ঘটনায় গত ১১ মার্চ বড়লেখা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন বন বিভাগের সমনভাগ বিটের কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম। 


সিলেটভিউ২৪ডটকম / লাভলু / ডি.আর