প্রশ্ন করতে পারেন জাতি কি অভিশাপে নিমজ্জিত? সিয়াম সাধনার মাস রামাদ্বান আমাদের মাঝে এসে উপস্থিত। এই সময়কে নেকি অর্জনের মৌসুম বলা যেতে পারে। আমাদের দেশের কয়েকটি জেলায় (এর মধ্যে আমাদের সিলেট সহ) যুগ যুগ ধরে চলে আসছে রামাদ্বানকে কেন্দ্র করে ইফতারি নামক একটি প্রথা।
 

যেটি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। যেটি মেয়েদের বাবার বাড়ি থেকে শশুরবাড়িতে দেওয়া হয়। ইফতারি নিয়ে আমাদের সমাজে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। প্রথম রামাদ্বানে ইফতারি কয়েক কেজি, রামাদ্বান মাসের মাঝামাঝি সময়ে বেশি করে যা অনেক সময় শত কেজির বেশি হয়ে যায়।
 


বলতে পারেন ইফতার করানো তো সওয়াবের  কাজ মেয়েদের শশুর বাড়িতে ইফতারি পাঠালে সওয়াব হবে। আপনাদের কাছে প্রশ্ন সওয়াব কি শুধু আপনার প্রয়োজন? আপনার মেয়ের শশুরবাড়ির লোকদের কি সওয়াবের প্রয়োজন নেই? আপনার মেয়ের জামাইতো সওয়াবের উদ্দেশ্যে আপনার বাড়িতে ইফতারি পাঠাতে পারেন। সওয়াবের উদ্দেশ্যে ইফতারি দিবেন ভালো কথা এর জন্য ট্রাক, পিকাপ ভরে কি ইফতারি পাঠাবেন।
 

ইফতার করানোর উদ্দেশ্যে চাইলেতো ইফতারির জিনিস সামান্য পাঠানো যেতে পারে। এছাড়া মেয়ের শশুরবাড়ির ইফতারির বিভিন্ন চাহিদা অনুযায়ী পাঠানো লাগে।

আপনি প্রশ্ন করতে পারেন আমার মেয়ের বাড়িতে ইফতারি পাঠাবো তোমার সমস্যা কি?

আপনার টাকা আছে চাইলে শত কেজি ইফতারি পাঠাতে পারেন। কিন্তু সমাজের উপর যে চাপ সৃষ্টি করছেন এটা কি খেয়াল করেছেন। সবার তো আর্থিক অবস্থা সমান নয়। আপনাদের এই বিলাসিতার জন্য কত গরীব বাবার উপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, ঋণের ভারে নিমজ্জিত হচ্ছেন সে দিকে কি আপনার দৃষ্টি আছে। আর যদি একাধিক মেয়ের বাবা হয়ে  থাকেন তাহলে তো অসহায় বাবার কস্টের শেষ থাকেনা।
 

মেয়ের শশুরবাড়ির চাহিদার কথা কি বলবো। অনেকেতো বলে দেন আমাদের এত কেজি লাগবে আমাদের আত্নীয় স্বজন বেশি কম দিলে  আমাদের মুখ থাকবেনা বলে চাপ সৃষ্টি করেন। এর ফলে মেয়ের বাবা মেয়ের সুখের জন্য শত কষ্টের মধ্যে তাঁর বেয়াইর বাড়ির চাহিদা মেটাতে বাধ্য থাকেন। না মেটালে অনেক গৃহবধু নির্যাতনের শিকার হোন, আত্নহত্যার মতো নির্মম ঘটনা আমরা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারি। এটি আমাদের জন্য একটি অভিশাপ রুপে আবির্ভূত হয়েছে।
 

তবে আশার কথা হলো বিগত কয়েক বছর থেকে আমাদের মধ্যে এই প্রথা নিয়ে এক বিরুপ প্রক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে লেখা-লেখি কিংবা গণসচেতনতা সৃষ্টির কারণে। বিশেষ করে তরূণ প্রজন্মের অধিকাংশের ইফতারি নামক প্রথার বিরুদ্ধে অবস্থান। শেষ কয়েক বছর কথা বিবেচনা করলে দেখতে পারবেন ইফতারি দেওয়ার প্রথা অনেকাংশে কমেছে শতাংশের হিসাব করলে ২০-৩০ শতাংশ কিংবা আরো বেশি হতে পারে।
 

যেভাবে সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে কিংবা জনমত সৃষ্টি হচ্ছে যার যার অবস্থান থেকে ইফতারি নামক প্রথার বিরুদ্ধে  প্রচারণা চালিয়ে গেলে জাতি এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে বলে আমার বিশ্বাস।
 


লেখক: চাকুরীজীবি, সিলেট।