ছবি : পল্লব ভট্টাচার্য্য

ইফতারের কথা শুনলেই মনে পড়ে প্লেটভর্তি পেঁয়াজু, বেগুনি, চপ, ছোলা, জিলাপি সহ বিভন্ন ভাজা পোড়া কখা। বাসায় তৈরি ইফতারে মন ভরে না, তাই রেস্তোরাঁর বাহারি ভাজা পোড়া ইফতার ছাড়া যেন তৃপ্তি মেটাবার নয়। তাইতো রোজার শুরু থেকেই সিলেট নগরের রেস্টুরেন্টগুলোতে তৈরি হচ্ছে বাহারি ইফতার।

 


কিন্তু রোজাদারের স্বাস্থ্যের পক্ষে এসব খাবার কতটুকু উপকারী? স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকার পর সন্ধ্যায় ইফতারিতে ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। রমজানকে ঘিরে ইফতারের বাজারে যেসব মুখরোচক খাবারের আয়োজন করা হয়, তার স্বাস্থ্য ও গুণগত মান নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইফতারে সবসময় স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন। কিন্তু বেশিরভাগ রোজাদার ইফতারের সময় যেসব খাবার গ্রহণ করে তা স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর।

মহানগরীর বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট ঘুরে দেখা যায়, ইফতারের আগে বাহরি নামে বিভিন্ন ভাজা পোড়ার আইটেম নিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। যেগুলোর মধ্যে রয়েছে- আস্তো খাসির রান দিয়ে তৈরি বড় বাপের পোলায় খায়, আস্ত মোরগের রোস্ট, কাবাব, কোয়েল-কবুতর ভুনা, মোরগ পোলাও, পেস্তা বাদামের শরবত, মোরগ মুসাল্লাম, বটি কাবাব, টিকিয়া কাবাব, কোফতা, চিকেন কাঠি, শামি কাবাব, শিকের কাবাব, কোয়েল পাখির রোস্ট, কবুতরের রোস্ট, বিফ আখনি, মুরগির আখনি, হালুয়া, হালিম, কাশ্মীরি শরবত, ইসবগুলের ভূষি, পরোটাসহ অর্ধশতাধিক জাতের ইফতারসামগ্রী।

আর সেগুলো কিনতে ভিড় জমিয়েছেন রোজাদাররা। 

সালাউদ্দিন নামের একজন জানান, চপ আর বেগুনী কিনতে এসেছে তিনি। ইফতারে ভাজা পোড়া থাকাটা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ইফতারের আগমুহূর্তে টেবিলে ভাজা পোড়া খাবার সাজানো থাকে তা দেখে লোভ সামলানো দায় হয়ে পরে।

মুহিত নামের আরেকজন জানা, এসব খাবার স্বস্থসম্মত নয় জেনেও কিনতে এসেছি। টানা ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টা না খেয়ে থাকার পর একটু ভাজ পেড়া না খেলে কি চলে।


রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা বলছেন, রোজ উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের আইটেম করছেন তারা। আর সিলেটের মানুষের কাছে এগুলোর চাহিদাও ব্যপক। ভাজা পোড়া আইটেমগুলো মনসম্মত ভাবে তৈরি করার চেষ্টা করেন বলে জানান তারা।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ড. মাসুম আহমদ জানান, ভাজাপোড়া বা তৈলাক্ত খারার পরিহার করে প্রচুর পরিমাণ পানি পান ও ফল দিয়ে ইফতার করা ভালো। একই সঙ্গে, রোজায় সুস্থ থাকতে মুখরোচক খাবারের ঝোক কমিয়ে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। ভেজাল খাবারের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। এখন আধুনিক খাবারের নামে বাজারে যা বিক্রি হচ্ছে তা পুরোপুরি স্বাস্থ্যকর নয়। এছাড়া ফুটপাতের খাবারেও অতিরিক্ত মাত্রায় চর্বি থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো নয়।

তিনি আরো জানান, যারা বিভিন্ন পেটের পীড়ায় ভুগছেন, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছ, পুরনো আমাশয় রোগ আছে তাদের একটু সতর্ক হয়ে খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। তারা তেলে ভাজা খাবার, দুধ জাতীয় খাবার, শসা, টমেটো এগুলো খাবেন না।
যারা ডায়াবেটিস, রক্তচাপ, হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন, তাদের জন্য ডাক্তাররা খাওয়ার একটি নির্দিষ্ট মেনু দিয়ে থাকেন। তাদের জন্য রমজানের ইফতারে ও সেহরিতে ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী খাওয়াটা জরুরি।
শরবত, গ্লুকোজ, ইসবগুলের ভুসি, ওরস্যালাইন, ডাবসহ পানি জাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ করতে হবে। ইফতারে কলা, আপেল, খেজুর, কমলাসহ যে কোনো ফলমূল রাখতে পারেন।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ নাজাত