ডোনাল্ড ট্রাম্পই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট যার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আনা হলো। তবে বিশ্বের অন্য অনেক দেশে সাবেক নেতাদের এমন বিচারের আওতায় আনার উদাহরণ অনেক আছে। এসব নেতাদের কারও কারও ক্ষেত্রে বিচার তাদের আবারও ক্ষমতায় ফিরে আসার পথে কোনো বাধা হতে পারেনি।

 


ইটালি- সিলভিও বারলুসকোনি


চারবারের এই প্রধানমন্ত্রীকে অনেকবার আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে এবং এক সময় বলা হতো ‘বিশ্বের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে বেশি নিপীড়িত ব্যক্তি।’

২০১৩ সালে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছিলো কমবয়সী একজন যৌনকর্মীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগে। পরে ২০১৫ সালে তিনি ওই মামলা থেকে খালাস পান।


ওই মামলার কৌঁসুলিরা দাবি করেছেন, মামলার সাক্ষীরা বিক্রি হয়ে গিয়েছিলেন এবং সে কারণে বারলুসকোনি অব্যাহতি পান।

এছাড়া ২০১২ সালে তার বিরুদ্ধে কর প্রতারণার মামলা ছাড়াও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অফিসে আঁড়ি পেতে তা সংবাদপত্রে প্রকাশের অভিযোগে এক বছর জেল খেটেছেন তিনি।

তবে বয়সের কারণে তাকে ঠিক সেভাবে জেল খাটতে হয়নি। বারলুসকোনি অবশ্য বলেছেন, তিনি ছিলেন বামপন্থী প্রসিকিউটরদের টার্গেট এবং তারা তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার বহি:প্রকাশ ঘটিয়েছেন।

 


ব্রাজিল-লুলা ডি সিলভা

 

লুইজ ইনাসিও লুলা ডি সিলভা (লুলা) দু'দফায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এরপর ব্রাজিলের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানির কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য একটি নির্মাণ কোম্পানির কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে দণ্ডিত হন।

সাবেক এই ইস্পাত কর্মী ৫৮০ দিন জেল খাটেন এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে নিষিদ্ধ হন। পরে তার সাজা বাতিল হয় এবং তিনি রাজনীতির মাঠে ফিরে আসেন।


লুলা ডি সিলভা
পরবর্তীতে ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আবারও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন লুলা ডি সিলভা।

গত বছর ডানপন্থী প্রতিদ্বন্দ্বী জেইর বলসোনারাওকে নির্বাচনে হারিয়ে দারুণভাবে রাজনীতিতে ফিরে আসার পর তিনি বলছিলেন, “তারা আমাকে জীবন্ত কবর দিতে চেয়েছিল কিন্তু আজ আমি এখানে।’

দক্ষিণ কোরিয়া- পার্ক গিউন হে

পার্ক গিউন হে ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট এবং গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম নেতা যাকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করা হয়।

পার্ক ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। দুর্নীতির কেলেঙ্কারির কারণে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিলেন এবং তাকে কারাগারে যেতে হয়েছিল।

 


সাবেক প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হে যে দুর্নীতির কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছিলেন তার সঙ্গে স্যামসাং গ্রুপের উত্তরাধিকারীর সম্পৃক্ততা ছিল।

 


পার্ক গিউন হে 


২০১৭ সালে তাকে অভিসংশিত করা হয়। এরপর ক্ষমতা অপব্যবহার এবং দীর্ঘ দিনের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু চই থায়ে মিনের কাছে গোপন নথি ফাঁসের দায়ে তাকে অভিযুক্ত করা হয়।

চই পার্কের সঙ্গে তার যোগাযোগকে ব্যবহার করে ধনকুবেরদের চাঁদা দিতে বাধ্য করেছিলেন।

তবে ২০২১ সালে পার্ককে ক্ষমা করে দেন প্রেসিডেন্ট মুন জা ইন। পরে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান।

 

ফ্রান্স- নিকোলাস সারকোজি

 

নিকোলাস সারকোজি ছিলেন ফ্রান্সের প্রথম নেতা যিনি দুর্নীতি মামলায় জেল খেটেছেন। ২০২১ সালে তিনি জেলে যান। একজন বিচারকে ঘুষ দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে সারকোজির তিন বছরের কারাদণ্ড হয়।

তবে তিনি আপিল করার পর দণ্ড স্থগিত হয়েছে। যদিও এই আপিল শুনানিতে অনেক বছর সময় লাগবে।

এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট জ্যাকুয়াস শিরাক ২০১১ সালে দুর্নীতির দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। তবে তাকে দু’বছরের স্থগিত কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।

 

দক্ষিণ আফ্রিকা- জ্যাকব জুমা

সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে পনের মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল দুর্নীতির একটি মামলার তদন্তে সহযোগিতা না করায়।

তিনি নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। তবে সেটি হয়েছিল গণবিক্ষোভের পর। সহিংস সে বিক্ষোভে তিন শ’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।


পরে তার বিরুদ্ধে আরও দুর্নীতি ও প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়। ক্ষমতায় থাকার সময় সংগঠিত অরাধের জন্য ৭০ বছর বয়সে জেলে যেতে হয়েছিল জুমাকে। তিনি ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন।

 

মালয়েশিয়া – নাজিব রাজাক

মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দুর্নীতির কয়েকটি মামলার মধ্যে একটিতে ১২ বছরের জেল হয়েছে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের।

রাজাক অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, তার আর্থিক উপদেষ্টারা তাকে ভুল পথে পরিচালিত করেছে।

তার বিরুদ্ধে বিশ্বাস ভঙ্গ, অর্থ পাচার ও ক্ষমতার অপব্যবহারের যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তাতে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলও করেছিলেন।

কিন্তু আদালতে তার আপিল আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর অগাস্টে তিনি দণ্ড ভোগ করতে শুরু করেন।

 

ইসরায়েল- এহুদ ওলমার্ট

প্রতারণার অভিযোগে দু'বছর তিন মাসের কারাদণ্ড হয়েছিলো এহুদ ওলমার্টের। এরপর ২০১৭ সালের শুরুর দিকে তিনি ছাড়া পান।

রাজনীতি থেকে বিদায় নিলেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সম্পর্কে একটি মন্তব্যের জের ধরে মানহানির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন তিনি।

নেতানিয়াহু নিজেও এখন ঘুষ, দুর্নীতির অভিযোগে বিচারের আওতায় রয়েছেন।

 

থাইল্যান্ড- ইংলাক সিনাওয়াত্রা

 

ক্ষমতায় থাকার সময় চালে ভর্তুকির একটি দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছিলো থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার।

২০১৪ সালে তার সরকারকে উৎখাত করে সামরিক বাহিনী। এক বছর পরেই তাকে অভিশংসন করা হয় চালে দুর্নীতির অভিযোগ এনে। যদিও ইংলাক তার বিচারকে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' বলে আখ্যায়িত করেছেন।

২০১৭ সালের অগাস্টে তিনি গোপনে দেশ ছাড়েন। পরে তার অনুপস্থিতিতে তাকে পাঁচ বছরের জেল দেওয়া হয়।

ইংলাক ছিলেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার বোন। থাকসিনকে ২০০৬ সালে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছিল সামরিক বাহিনী।

 

বলিভিয়া- জিনাইন আনেজ

প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেসকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাতের দায়ে ১০ বছরের সাজা ভোগ করছেন জিনাইন আনেজ।

২০১৯ সালের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগে প্রতিবাদ বিক্ষোভের জের ধরে সামরিক বাহিনী প্রধান মোরালেসকে ক্ষমতা ছাড়তে অনুরোধ করলে জিনাইন আনেজ প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

মোরালেস ক্ষমতা থেকে সরে যান ও দেশত্যাগ করেন।

কিন্তু পরে তার দল নির্বাচনে জয়ী হলে তিনি আর্জেন্টিনা থেকে ফিরে এসে তার দলের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এরপর তার সহকর্মী লুইস আর্চ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

আনেজ অবশ্য বারবারই বলে আসছেন যে তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।

 

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/এনটি


সূত্র : ঢাকা মেইল