কারও কাছে ফোন আসছে শিশু সন্তান অপহরণের। কেউ ফোন পাচ্ছেন অনলাইনে লটারি জয়ের। কাউকে অনলাইনে ভয় দেখানো হচ্ছে ব্ল্যাকমেলের। ফেসবুক ও এনআইডি কার্ডের তথ্য হ্যাক করেও চলছে প্রতারণা। সিলেটে প্রতিদিনই এসব অপরাধী ও প্রতারক চক্রের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যেন প্রতারক চক্র চারদিকে ওঁত পেতে আছে।
 

আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ভুক্তভোগীরা আইনের আশ্রয় নিলেও এসব চক্রের সদস্যরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে দিন দিন এই প্রতারণার জাল আরও বিস্তৃত হচ্ছে।
 


সিলেট নগরীর জেলরোড এলাকার গৃহিণী হেলেনা আক্তার চৌধুরীকে গত মাসে ফোন দিয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তি বিকাশে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে তার স্কুলপড়ুয়া একমাত্র মেয়েকে অপহরণের হুমকি দেয় ওই ব্যক্তি। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি হলে তদন্ত করে পুলিশ জানতে পারে হুমকি ও বিকাশের জন্য ব্যবহৃত নম্বরগুলো সাতক্ষীরার বয়োজ্যেষ্ঠ তিন ব্যক্তির নামে নিবন্ধিত।
 

সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাজন দাশসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষককে গত ২৮ মার্চ ফোন দেয় প্রতারক চক্র। চারজনকে তাদের শিশু সন্তান অপহরণ করার হুমকি দেয় প্রতারক চক্র। শিক্ষকরা জিডি করলে পুলিশ তদন্তে জানতে পারে কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে প্রতারকরা তাদের ফোন দিয়েছিল।
 

একইভাবে নগরীর ইলেকট্রিক সাপ্লাই রোডের এক নারীকে ফোন দেয় প্রতারক চক্র। ফোনে জানায় তার স্কুলপড়ুয়া ছেলে অপহরণের শিকার হয়েছে। ফোন না কেটে বিকাশের দোকানে গিয়ে ৫০ হাজার টাকা পাঠালে ছেলেকে তারা স্কুলের গেটে ছেড়ে যাবে। আতঙ্কিত হয়ে ওই নারী প্রতারকদের দেওয়া নম্বরে ৫০ হাজার টাকা বিকাশ করেন। পরে জানতে পারেন তার ছেলে অপহরণ হয়নি, স্কুলেই আছে। ভয় ও লজ্জায় তিনি বিষয়টি পুলিশকেও জানাননি।
 

এভাবেই সিলেটে প্রতিদিনই ঘটছে প্রতারণার এমন ঘটনা। এ ক্ষেত্রে প্রতারকদের টার্গেটে বেশি থাকেন নারীরা। লটারিতে ১০ লাখ টাকা জেতার কথা বলে বড়বাজারের এক নারীর কাছ থেকে প্রতারক চক্র হাতিয়ে নেয় ২০ হাজার টাকা।
 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিলেটসহ সারা দেশে অপরাধীদের অসংখ্য চক্র গড়ে উঠেছে। ওইসব চক্রের স্থানীয় সদস্যরা মোবাইল নম্বর ও বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে পাঠায়। পরে দেশের অন্য জেলা থেকে ফোন করে অর্থ দাবি করা হয়। ২৬ মার্চ নগরীর শামীমাবাদ এলাকা থেকে রুমেন হোসেন নামে এক যুবককে আটক করে র‍্যাব। তিনি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার কুমারকান্দি গ্রামের মৃত আফরোজ মিয়ার ছেলে।
 

র‍্যাব-৯ এর মিডিয়া অফিসার সিনিয়র এএসপি আফসান আল আলম জানান, রুমেন শামীমাবাদে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সাইবার ক্রাইম করে আসছিলেন। তিনি প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের ফোন কলের ডাটা (সিডিআর) ও জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য হ্যাকড করে একটি চক্রের কাছে বিক্রি করতেন। ওই চক্র নানা অপরাধ কর্মকান্ডে এসব তথ্য ব্যবহার করতেন।
 

সিলেট জেলা পুলিশের সহকারী মিডিয়া অফিসার (পরিদর্শক) শ্যামল বণিক জানান, প্রতারণার ঘটনায় প্রতিদিনই সিলেটের কোনো না কোনো থানায় জিডি হচ্ছে।


 

সিলেটভিউ২৪ডটকম / শাদিআচৌ /এসডি-২০