কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, তিনি পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চাকরীপ্রত্যাশিদের মসিহা হয়ে উঠেছিলেন। তার বিচার ব্যবস্থায় আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছিলেন ৭০০ দিনের বেশি অনশনরত চাকরিপ্রত্যাশিরা।
কিন্তু শুক্রবার (২৮ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নিয়োগ দুর্নীতির আর কোনও মামলা শুনতে পারবেন না বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসের নিয়োগ দুর্নীতির সব মামলা অন্য বিচারপতিকে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের শীর্ষ আদালত। এদিন চাঞ্চল্যকর এই রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি পি নরসিংহের ডিভিশন বেঞ্চ।
সম্প্রতি এবিপি (আনন্দবাজার প্রত্রিকা) টিভি চ্যানেলে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বিচারাধীন বিষয়ে সাক্ষাৎকার দেওয়ার জেরে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত সব মামলা থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে।
শুরু থেকেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্যের নিয়োগ দুর্নীতির মামলাগুলো শুনছিলেন। গত দেড় বছরে নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলাগুলোয় তার দেওয়া রায়েই প্রকাশ্যে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের একের পর এক দুর্নীতি। গ্রেপ্তার হতে হয়েছে রাজ্যের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। তার নির্দেশে জেল খাটছেন শাসকদলের একাধিক বিধায়ক, উচ্চপদস্থ কর্তারা। আরও একাধিক তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের র্যাডারে। বস্তুত, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের দেওয়া একাধিক রায়কে রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসাবেও ব্যবহার করছে বিরোধীরা। এবার সেই বিচারপতিকেই সরে যেতে হলো নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা থেকে।
সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ার পরই মমতার ভাতিজা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা এক মামলায় সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তার আইনজীবীরা। বিষয়টি নজরে আসতেই হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে এ বিষয়ে রিপোর্ট তলব করেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। গত সোমবার (২৪ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে মামলাটি উঠেছিল। যা শুনে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, বিচারপতিরা কোনও ভাবেই তাদের বিচারাধীন বিষয় নিয়ে টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিতে পারেন না। উনি যদি সাক্ষাৎকার দিয়ে থাকেন, তা হলে তিনি ওই মামলা শোনার অধিকার হারিয়েছেন। সেক্ষেত্রে নতুন কোনও বিচারপতিকে দায়িত্ব দিতে হবে।
এরপর শীর্ষ আদালত সেই সাক্ষাৎকার খতিয়ে দেখে। এদিন (২৮ এপ্রিল) রায়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আর নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত কোনও মামলা শুনতে পারবেন না। এমনকি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সিবিআই বা ইডির তদন্ত সংক্রান্ত কোনও মামলা হলে, সেগুলোও শুনতে পারবেন না বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। ফলে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত থেকে রেহাই পেয়ে কিছুটা স্বস্তি পেল পশ্চিমবঙ্গের শাশকদল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের শতাধিক বৈধ চাকরিপ্রত্যাশি এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। এখন দেখার নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের দেওয়া রায়গুলোর ভবিষ্যত কী হতে চলেছে?
সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/পল্লব-২০