সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুরে মানুষ চলাচলের রাস্তা ও সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড-এর জায়গা দীর্ঘ ৪ বছর ধরে জবরদখল করে রাখার অভিযোগ উঠেছে একটি প্রভাবশালী চক্রের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে একাধিক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেও সুফল মিলছে না।  

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের চাঁন্দঘাট গ্রামের শিকারখাঁ হতে সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড-এর ৫নং কুপ এবং চাঁন্দঘাট স্কুল হতে শাহ আহমদ আলী মাজারের রাস্তা ও সরকারি খাঁস জমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ ও জনসাধারনের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে একটি মহল। ১৯৬২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চাঁন্দঘাট ও আশপাশ গ্রামের জনসাধারণ “শিকারখাঁ টু সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের ৫নং কুপ রাস্তা” এবং “চাঁন্দঘাট স্কুল হতে শাহ আহমদ আলী মাজারের রাস্তা” ব্যবহার করে আসছেন। কিন্তু ২০১৮ সালের পর থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রের সদস্য চাঁন্দঘাট গ্রামের মৃত মুছা মিয়ার ছেলে মইন উদ্দিন, শামসুর উদ্দিন, মজিদ আলীর ছেলে মাস্টার মুছা মিয়া, হজু মিয়া, মৃত আমই মিয়া ছেলে সাহাব উদ্দিন ও মেনাফর আলীর ছেলে ফখরুল ইসলাম টিলা কেটে ফসলি জমি ভরাট করে জনসাধারণের চলাচলের রাস্তা দখলে নিয়ে যান। এখনও তারা এমন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে।


তাদের এ কর্মকাণ্ডের কারণে “শিকারখাঁ টু সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের ৫নং কুপ রাস্তা” বিলীন হয়ে গেছে এবং “চাঁন্দঘাট স্কুল হতে শাহ আহমদ আলী মাজারের রাস্তা” চলাচলের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে স্থানীয়রা ২০২০ সালের ১ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এছাড়া ২০২১ সালের ১০ আগস্ট সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. শওকত আলম কাদরী গ্যাস ফিল্ডের অধিগ্রহণকৃত ভূমিতে অবৈধভাবে নির্মিত স্থাপনা অপসারণ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার জৈন্তাপুর বরাবরে আবেদন করেন।

এলাকাবাসী ও গ্যাস ফিন্ড কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে দুদিন তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত হরিপুর ইউনিয়ন (ভূমি) কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুকন আহমদ সরজমিন পরিদর্শন করে সহকারী কমিশনার (ভূমি) জৈন্তাপুর বরাবরে প্রতিবেদন প্রেরণ করেন। প্রতিবেদনে একসাথে দুইজন ব্যক্তি চলাচল করা যাবে না এবং সরকারি খাঁস ভূমি দখল করে হয়েছে উল্লেখ করে জনসাধারণ চলাচলের উপযোগী করার জন্য আবেদন করা হয়।
 
পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন একাধিক বার “শিকারখাঁ টু সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেডের ৫নং কুপ রাস্তা” এবং “চাঁন্দঘাট স্কুল হতে শাহ আহমদ আলী মাজারের রাস্তা” চলাচলের জন্য অবৈধ স্থাপনা অপসারণের নোটিশ জারি করলেও প্রভাবশালী দখলকারীরা অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করেনি।

এলাকাবাসী জানান, এক সময় ৫নং কুপ হতে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক পর্যন্ত গ্যাস কুপের কাজে নিয়োজিত বড় বড় ট্যাংক-লরি আসা-যাওয়া করতো। রাস্তার প্রস্ত ছিল ৫০ থেকে ৬০ফিট। কিন্তু রাস্তার একটি অংশ দখল হয়ে যাওয়ার ফলে এখন রাস্তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এবং কিছু অংশ জমির আইলে পরিণত হয়েছে। যার কারনে ৫নং কুপটিতে যাতায়াতের কোনো রাস্তা অবশিষ্ট নেই। চাঁন্দঘাট স্কুল হতে শাহ আহমদ আলী মাজারের রাস্তাটি ধরে বর্তমানে ২জন মানুষ একসাথে যাতায়াত করতে পারবেন না।

তারা আরও বলেন- জরুরি রোগীবাহী ও পণ্য পরিবহন কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে আসা গাড়ি ওই রাস্তায় চলাচল করা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে, গত শনিবার (৬ মে) দুপুরে দখলকারীরা তাদের অবৈধ স্থাপনা অপসারণ এবং রাস্তা দখল ত্যাগ করেছে কিনা দেখতে সরেজমিন পরিদর্শন করেন উপজেলা ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার আব্দুর রাকিব।

এসময় তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ভূমি অফিসের নির্দেশনায় আমি বর্তমান পরিস্থিতি কী অবস্থায় আছে তা দেখার জন্য এসেছি। দখলকারীরা কৌশলে রাস্তা ও সরকারি খাঁস ভূমি দখলে রেখেছে। তারা দখল ত্যাগ করেনি মর্মে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবো।

সিলেটভিউ২৪ডটকম / সাব্বির / ডি.আর