সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার আর কাউন্সিলর প্রার্থী হচ্ছেন না ৪ নং ওয়ার্ডের চার বারের কাউন্সিলর রেজাউল হাসান লোদী (কয়েস লোদী)।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেন মহানগর বিএনপির এই নেতা।
মহানগরের লামাবাজারস্থ একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কয়েস লোদী জানান- দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তবে এসময় কয়েস লোদী তাঁর ওয়ার্ডবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
রেজাউল হাসান লোদী বলেন, ২০০২ সালে সিলেট সিটি কর্পোরেশন ঘোষিত হওয়ার পর ২০০৩ সালেরর প্রথম নির্বাচন থেকে অদ্যাবধি আমি নগর ভবনে ৪ নং ওয়ার্ডের জনগনের প্রতিনিধিত্ব করে আসছি। দীর্ঘ এই ২০ বছরে ওয়ার্ডবাসী টানা ৪বার আমাকে বিপুল ভোটে কাউন্সিলর নির্বাচিত করেছেন। সিসিকের প্রথম নির্বাচনে অল্প বয়সে মানুষ আমার প্রতি যে আস্তা আর বিশ্বাস রেখেছিলেন তা আজ পর্যন্ত অব্যাহত রেখেছেন। ৪ নং ওয়ার্ডবাসী আমাকে যে ভালোবাসা ও সম্মান দিয়েছেন এই ঋণ আমি কোন দিনই শোধ করতে পারব না। যত দিন বেঁচে থাকব তা আমার জন্য বাকি জীবনের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
লোদী বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বাক স্বাধীনতা ও সুশাসন বলতে কিছু নেই। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে মানুষ আজ দিশেহারা, সাধারণ মানুষ অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। বাংলাশের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রী, বিএনপির চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনো মুক্ত নন। তিনি বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারছেন না। আমাদের নেতা জনাব তারেক রহমান সরকারের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে দেশে ফিরতে পারছেন না। মানুষ নিজের ইচ্ছে মতো ভোট দিতে পারছে না, নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড নেই, নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ।
এসময় তিনি অভিযোগ করেন বলেন, সিলেট সিটি কর্পোরশেন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে সিলেট সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাশেম, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক শামীম মজুমদার এমনকি সিসিকের ৪নং ওয়ার্ডের পানি শাখার কর্মচারী সাইফুর রহমান ইমন সহ নগরীর প্রায় ৪২ টি ওয়ার্ডের বহুসংখ্যক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামীলীগ ও আওয়ামী লীগের আজ্ঞাবহ এই নির্বাচন কমিশনের অধিনে কোন ভাবেই সুষ্ট নির্বাচন সম্ভব নয়।
বিএনপির এই নেতা আরো অভিযোগ করে বলেন, চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অসংখ্য নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এমন অবস্থায় নির্বাচনে অংশ নেয়া মানে দলের শহীদ হওয়া নেতাকর্মীদের রক্তের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা, দল ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে এমনকি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবার ও বিএনপির বিশ্বাসঘাতকতা করা। সর্বোপোরী দেশের মুক্তিকামী কোটি কোটি জনগনের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা। তাই এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক জনাব তারেক রহমানের নির্দেশক্রমে আমি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী আসন্ন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন বর্জন করার ঘোষনা দিলাম। বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই সরকার ও সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধিনে আমি কোন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করব না।
কয়েস লোদী বলেন, দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর থেকে বিএনপির রাজনীতির সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছি। বিএনপির সাথে আমার সম্পর্ক মা ও সন্তানের মতো। আমি যেহেতু বিএনপির কর্মী, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ বুকে লালন করি, সেহেতু আমার ব্যাক্তিগত চাওয়া পাওয়ার চেয়ে আমার দল ও আমার দেশ বড়। আমার কাছে দলের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত।
এসময় তিনি দলের সকল নেতাকর্মীসহ সিলেটবাসীর কাছে আহবান জানিয়ে বলেন, সকলে মিলে এই প্রহসনের নির্বাচন বর্জন করি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি রেখে, দেশনায়ক জনাব তারেক রহমানকে দেশের বাহিরে রেখে, সর্বোপরি এদেশের মানুষকে চরম নির্যাতনের মধ্যে রেখে দেশে কোন নির্বাচন হতে পারে না।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / পল্লব / সুব্রত / ডালিম