স্পেস এক্সের মাধ্যমে মহাকাশযাত্রায় ইতিহাস তৈরির পরে এবার মানুষের রোগ সারাতে নতুন উদ্ভাবনে নেমেছেন বিশ্বের অন্যতম ধনী ইলন মাস্ক। এ নিয়ে কাজ করছে তার সংস্থা নিউরোলিঙ্ক। এরই মধ্যে মানুষের মস্তিষ্কে চিপ বসানোর অনুমতি দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। 
 

ইলন মাস্কের এই নিউরোটেকনোলজির সংস্থার মানুষের মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের জটিল রোগ নিয়ে গবেষণা করছে।  অবসাদ, উদ্বেগ, অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিসঅর্ডার থেকে স্লিপিং ডিসঅর্ডার—মস্তিষ্কের জটিল রোগ সারাতে নতুন ‘ব্রেন-মেশিন’ তৈরি করছে নিউরোলিঙ্ক। এই মেশিনের ট্রায়াল করার আবেদন করেছিলেন ইলন মাস্ক, এতে সায় দিয়েছে বাইডেন সরকার। খবর দ্য ওয়ালের



মানুষের মস্তিষ্কে মেশিন বসিয়ে জটিল রোগ সারানোর পদ্ধতি এই প্রথম। ইলন মাস্কের নিউরোলিঙ্ক কর্পোরেশন এমন যন্ত্র তৈরি করছে যা কিনা মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি দেবে মানুষকে। মস্তিষ্কের ক্ষতও সারাবে। মানুষের শরীরে এই মেশিনের ট্রায়াল করার অনুমতি দিয়েছে মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।
 

নিউরোলিঙ্ক কী আবিষ্কার করেছে?
নিউরোটেকনোলজিতে এমন ডিভাইস তৈরি হচ্ছে যা যেকোনও অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার, অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার, বাইপোলার সিন্ড্রোম থেকে ট্রমাটিক ব্রেন ইনজুরিও সারাতে পারবে। স্নায়ুর দুরারোগ্য রোগ থেকেও মুক্তি দেবে এমন ডিভাইস তৈরি করছে নিউরোলিঙ্ক।
নিউরোলিঙ্কের এই গবেষণায় সহযোগিতা করছে ডিফেন্স অ্যাডভান্সড রিসার্চ প্রোজেক্ট এজেন্সি। 
 

গবেষণার সঙ্গে জড়িত জাস্টিন স্যানচেজ জানিয়েছেন, বিশ্বজুড়ে দুই লাখের বেশি মানুষ মস্তিষ্কের রোগে ভোগেন। ‘অ্যাংজাইটি অ্যান্ড ডিপ্রেসন অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা’ (ADAA) তাদের একটি গবেষণার রিপোর্টে বলেছিল, অতিরিক্ত উদ্বেগ থেকেই ‘জেনারালাইজড অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার’ (GAD) হয়।
 

প্রতি বছর বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষ এই রোগে ভোগেন। এই ডিসঅর্ডার ছ’মাসের বেশিও স্থায়ী হয়। তখন তাকে ক্রনিক ডিসঅর্ডার বলে। তাছাড়া  ‘অবসেসিভ-কমপালসিভ ডিসঅর্ডার’ (OCD) কমবয়সীদের একটা বড় সমস্যা। সব কিছুতেই বাতিক তৈরি হয়। একটা আতঙ্ক বা ফোবিয়া কাজ করে। 
 

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উদ্বেগ থেকে ফোবিয়া বা আতঙ্ক তৈরি হয় মনে। যার থেকেই উৎকণ্ঠা বাড়ে। ‘প্যানিক ডিসঅর্ডার’ এ আক্রান্ত হয় রোগী। ওষুধে এই রোগ সারে না। দীর্ঘদিনের কাউন্সেলিং করাতে হবে। বাইপোলার ডিসঅর্ডারের মতো রোগ অনেক সময় কাউন্সেলিংয়েও পুরোপুরি নির্মূল হয় না।
 

নিউরোলিঙ্কের ডিভাইস মস্তিষ্কের সমস্ত জটিল রোগ সারাতে পারবে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। এই ডিভাইস তৈরি হবে ছোট ইলেকট্রোড দিয়ে। তার মধ্যে এমন প্রোব থাকবে যা সহজেই মস্তিষ্কের কোষে ঢুকিয়ে দেওয়া যাবে।
 

গবেষকদের দাবি, এই ডিভাইস মস্তিষ্কের ভেতরে কোনও ক্ষতি করবে না বা এর কোনও প্রতিক্রিয়াও দেখা যাবে না। মস্তিষ্কের কোষে প্রতিস্থাপন করলে এই যন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ কোষগুলিকে সারাতে পারবে। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক ক্রিয়া ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে। ব্রেন সার্জারির মতো ঝুঁকিপূর্ণ অস্ত্রোপচারের দরকার পড়বে না। পাশাপাশি, মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকেও রোগীকে রেহাই দেবে।
 

তবে নিউরোলিঙ্কের এই যন্ত্র নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) দাবি করেছে, এমন যন্ত্র একবার মস্তিষ্কের কোষে প্রতিস্থাপন করলে সেটা আর বের করার উপায় থাকবে কিনা সেটা দেখতে হবে। রোগ সারার পরেও দীর্ঘসময় মস্কিষ্কের ভেতরে থাকলে তার কোনও খারাপ প্রভাব পড়বে কিনা সেটাও চিন্তার বিষয়।
 

নিউরোওয়ান মেডিক্যাল টেকনোলজি গ্রুপের সিইও ডেভ রোজা বলেছেন, এর আগে অটিস্টিক রোগীদের মস্তিষ্কে ইলেকট্রোড প্রতিস্থাপন করে ভাল ফল পাওয়া গিয়েছিল। এই ডিভাইসে সব রকম মস্তিষ্কের রোগ সারাবার দাবি করেছে নিউরোলিঙ্ক। সব ঠিকঠাক থাকলে এটি ভবিষ্যতে নিউরোসায়েন্সে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।
 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/এনটি