সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ৩নং বাহাড়া ইউপির সদর সংলগ্ন ঐতিহাসিক ডুমরা রামকৃষ্ণ গোসাই আখড়ার ভূ-সম্পত্তির হিসাব দিতে রাজি হননি ওই আখড়ার পূজারী গুরুচরণ দাস মোহন্ত। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজমান।
 

তার বিরুদ্ধে রয়েছে দেবোত্তর সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ। ওই পূজারী আখড়ার পরিচালনা কমিটি মানেন না, আখড়ার সম্পত্তির হিসাব কাউকে দিতে রাজি নন, তার দাম্ভিকতায় রয়েছে শুধুই মামলার হুঙ্কার! যা শুনে উপস্থিত সবাই চমকে উঠেন। তার ভাষায়ও রয়েছে অশ্লীলতা।
 


অন্যদিকে আখড়ার এই সেবায়েত কোনো কারণ ছাড়াই গত ২জুন থানায় অভিযোগ করে রেখেছেন কমিটির বেশ ক'জনের বিরুদ্ধে। এমন পরিস্থিতিতে আখড়ার ওই পূজারী গুরুচরণ দাসের প্রতি সংক্ষুব্ধ হয়ে উঠে ডুমরা গ্রামসহ এলাকাবাসী। পরে শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম ঘটনাটি ইউএনওকে অবগত করেন। আবার গত ৩ জুন পূজারী আখড়ার হিসাব না দেয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে আবেদন করেন আখড়া পরিচালনা কমিটি।
 

এব্যাপারে ৭ জুন বুধবার বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ শাল্লা শাখার সভাপতি অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাস বলেন, আমরা কমিটির পক্ষে গত ৩জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে আখড়ার আয়-ব্যয়ের হিসাব সংক্রান্ত বিষয়ের জানার জন্য একটি আবেদন করা হয়। সেই আলোকে গত ৬জুন মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে আখড়া পরিচালনা কমিটিসহ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় পূজারী ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। যা সমাজের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক।
 

সেই মোতাবেক শান্তি শৃঙ্খলা বজায় ও আখড়া পরিচালনা কমিটির আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টি সামাজিকভাবে নিষ্পত্তির জন্য মঙ্গলবার (৬ জুন) বিকেলে উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে এক সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও ডুমরা রামকৃষ্ণ আখড়া পরিচালনা কমিটির সভাপতি অ্যাডঃ দিপু রঞ্জন দাস, সাধারণ সম্পাদক পলাশ চৌধুরী, শাল্লা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাস, বাহাড়া ইউপি চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টু, সালিস ব্যক্তিত্ব রবীন্দ্র চন্দ্র দাস, শাল্লা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি জয়ন্ত সেন, শাল্লা সদর ওয়ার্ড সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সদস্য সচিব অজয় তালুকদার, আখড়া পরিচালনা কমিটির অন্যান্য সদস্যবৃন্দ, উপজেলার বিভিন্ন ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি ও ডুমরা রামকৃষ্ণ গোসাই আখড়ার পূজারী গুরুচরণ দাস মোহন্তসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
 

সভায় আখড়ার বিষয়াদি সম্পর্কে এলাকাবাসী ও কমিটির অনেকই তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। সবার মতামত শুনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব সেবায়ত গুরুচরণ দাস মোহন্তের কাছে জানতে চান তিনি কীভাবে ডুমরা রামকৃষ্ণ আখড়ায় এসেছেন, আখড়ার সম্পত্তির পরিমাণ বা কী, কতটুকু তার নিজের নামে রয়েছে, কতটুকু দেবোত্তর, বিক্রিই বা করেছেন কতটুকু ? এবং তিনি আসার পর থেকে আখড়ার কোনো উন্নয়ন হয়েছে কিনা? পাশাপাশি এসব দেবোত্তর সম্পত্তির হিসাব দিতে বলা হয়। ইউএনও'র প্রশ্নের উত্তরে সেবায়েত গুরুচরণ দাস মোহন্ত বলেন তার গুরুপিতা কৃষ্ণকান্ত দাস মোহন্ত শিশুকালে তাকে ডুমরা আখড়ায় নিয়ে এসেছেন। নিজের নামে কতটুকু সম্পত্তি আছে তা তিনি নিজেই জানেন না! কীভাবে সম্পদের অধিকারী হলেন এমন প্রশ্নেরও সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। তার আমলে আখড়ার কোনো উন্নতি হয়নি বলেও জানান ওই সেবায়েত মোহন্ত। তবে আখড়ার সম্পদের হিসাব কাউকেই তিনি দেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। তিনি বলেন মামলা চলবে! এবিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে ওই সেবায়েত আখড়া কমিটি ও অন্যান্য বৈষ্ণবের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন।
 

এব্যাপারে আখড়া পরিচালনা কমিটির সভাপতি অ্যাডঃ দিপু রঞ্জন দাস বলেন, মামলাবাজ এই সেবায়েত গ্রামের মানুষকে মামলা দিয়ে রীতিমত নির্যাতন করে যাচ্ছেন। আখড়ায় কোনো পূজার্চনা বা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়না, উন্নয়ন হয়না। অথচ কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে আখড়ায়। এসব কোটি টাকার দেবোত্তর সম্পত্তিকে কৌশলে নিজের নামে করে তা বিক্রি করে আসছে দিনের পর দিন।

এ ব্যাপারে কমিটির সাধারণ সম্পাদক পলাশ চৌধুরী বলেন, ডুমরা আখড়ার সম্পত্তি বিক্রি করে ওই মোহন্ত দিরাই উপজেলার আখাউড়া গ্রামে তার বৈরাগনির নামে একটি বাড়ি তৈরি করেছে। এই বৈরাগীকে আমরা চাই না।
 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন, তিনি তো নিজে কোনো সম্পদ এখানে নিয়ে আসেননি। তাহলে এই সম্পদ কীভাবে তার নিজের নামে হলো ? দেবোত্তর সম্পত্তি দিয়ে উন্নয়ন করার সুযোগ থাকলেও, বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। আবেদন করায় আমি উপস্থিত সবার সামনে আখড়ার সম্পদের হিসাব চেয়েছি ওই গুরুচরণ দাস মোহন্তের কাছে। তিনি হিসাব দিবেন না বলে জানিয়েছেন। তার আচরণ ত্যাগী মানুষের ন্যায় ছিলো না। সুষ্ঠু ও সমাধানযোগ্য আমাদের মহৎ উদ্যোগকে অসহযোগীতা করেছেন তিনি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানাবেন বলে জানান তিনি।
 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডুমরা রামকৃষ্ণ গোসাই আখড়ার স্থাবর সম্পদের পরিমাণ আনুমানিক ১৫ একর। এর মধ্যে ৩ একর জায়গা তার নিজ নামেই নিয়ে নেন বলে অভিযোগ করেন সভায় উপস্থিত স্থানীয়রা। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে ওই ঐতিহাসিক ডুমরা রামকৃষ্ণ আখড়ায় ঘাটি গেড়ে চার্টার সেল তৈরি করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী।


 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/সন্দীপন/এসডি-১৪৪