ছবি: সংগৃহিত।

বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (ডিএসএ) প্রণীত হওয়ার পর থেকেই সমালোচনা চলছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তো বটেই, জাতিসংঘের পদস্থ কর্মকর্তা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা এই আইনের বিপক্ষে বলেছে। আইনটি বাতিলের দাবিও করা হয়েছে সবসময়।

বিতর্কিত এই আইনটি বাংলাদেশে সরকার বিরোধী ও সমালোচকদের মুখ বন্ধ রাখা এবং তাদেরকে আটক করতে ব্যবহার করা হয় বলে মন্তব্য করে যুক্তরাষ্ট্র।


অবশেষে বাংলাদেশ এই বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করছে। নতুন করে আসছে সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ)।

এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সাথে তারা প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিতের আহ্বান।

সোমবার (৭ আগস্ট) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটেও ওই ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।

ওয়াশিংটনে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশি এক সাংবাদিক ম্যাথিউ মিলারের কাছে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করে নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইন গঠন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগের বিষয়টি উত্থাপন করেন।

ওই সাংবাদিক বলেন, বাংলাদেশ সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কার করতে চলেছে। বিতর্কিত এই আইনের ব্যবহার ও প্রয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বেশ সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। (এই আইনের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সিদ্ধান্তের পর) এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনোও মূল্যায়ন আছে কিনা এবং আইনটি কোন দিকে যেতে পারে বলে তারা মনে করছেন?

প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, “বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তাকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা আগেই বলেছি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সমালোচকদের গ্রেপ্তার, আটক এবং মুখ বন্ধ করতে ব্যবহৃত হয়েছে।”

“এই আইনটি সংস্কারের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের দীর্ঘদিনের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে সেটিকে আমরা স্বাগত জানাই। সকল অংশীদারকে (স্টেকহোল্ডার) যেন নতুন খসড়া সাইবার নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনা করার সুযোগ দেওয়া হয় এবং এই আইনটিতে যেন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিত করা হয়, সে বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করি।”

বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে। ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫টি ধারা বিলুপ্ত করে জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮’ পাস হয়। আইন পাস হওয়ার পর থেকেই শুরু হয় সমালোচনা।

সমালোচকরা দাবি করেন, এ আইনে দায়ের হওয়া মামলার সবচেয়ে বিতর্কিত দুটি বিষয় রয়েছে। প্রথমত, এখানে মতপ্রকাশকে অপরাধ হিসেবে দেখা হয়। দ্বিতীয়ত, আইনের বেশ কয়েকটি ধারা জামিন অযোগ্য।

উল্লেখ করা যেতে পারে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মোট ৫৩টি ধারা রয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি ধারা অজামিনযোগ্য।

এদিকে, বাংলাদেশে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম ও বিষয়বস্তুতে পরিবর্তন এনে সাইবার নিরাপত্তা আইন করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থাটি সোমবার (৭ আগস্ট) টুইটারে এক বার্তায় নতুন সাইবার আইনে আগের আইনের একই ধরনের ‘দমনমূলক’ বৈশিষ্ট্য না রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।

প্রসঙ্গত, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ এর পরিবর্তে নতুন ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ‘মিসইউজ’ ও ‘অ্যাবিউজ’ বন্ধ করার জন্য নতুন আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে