যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডন আর লন্ডন মানেই সিলেটীদের ধাপট। লন্ডনকে বলা হয় যেন এক খন্ড সিলেট। আর এই সিলেটীদের কাছেই দীর্ঘদিন ধরে থাকছেন সিলেটের জামাই খ্যাত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেখানকার বিএনপির রাজনীতিতেও সিলেটীদের অবস্থান অত্যান্ত পাকপোক্ত। যার কারণে বরাবরই সিলেটীরাই যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের পদোন্নোতিও হচ্ছে সময়ে সময়ে।
আজ শবিবারও (১৬ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাজ্য বিএনপির তিন নেতা এবং সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দলীয় পদোন্নতি পেয়েছেন। এতে যুক্তরাজ্য ও সিলেট অঞ্চলের বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে আনন্দ উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে।
পদোন্নতি পাওয়া নেতাদের মধ্যে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বিএনপি'র জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এম এ মালিক-কে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ-কে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে।
পদোন্নতি পাওয়া যুক্তরাজ্য প্রবাসী তিন নেতাদের মধ্যে মাহিদুর রহমানের বাড়ি মৌলভীবাজার, এম এ মালিক সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় এবং কয়ছর এম আহমেদ সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় বাড়ি।
আজ শনিবার দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পদোন্নতির এই তথ্য জানানো হয়। তাঁরা ছাড়াও সুইডেন বিএনপি'র সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আবেদিন মোহনকে সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাঈদ সোহরাবকে সহ-সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি'র সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদুর রহমান সুমনকে সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ সম্রাটকে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। শনিবার বিএনপির মোট ১০ নেতাকে পদোন্নতি দেয়া হয়।
দলীয় সুত্রে জানা গেছে, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দীর্ঘদিন থেকে পদোন্নতি পাচ্ছেন এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু বারবারই তাঁর দলীয় পদোন্নতি অজ্ঞাত কারণে আটকে যায়। বিএনপি আমলের সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের হাত ধরে রাজীতিতে উত্থান আরিফুল হক চৌধুরীর। সাইফুর রহমান তাকে বলতেন ‘ডিপলোমেটিক লিডার’। রাজনীতিতে এই ‘ডিপলোমেটিক ক্যারিশমা’ অনেকবারই দেখিয়েছেন আরিফ। সম্প্রতি দলের ভাইস চেয়ারম্যান হচ্ছেন এমন খবর চাউর হয় সিলেটে। কিন্তু সেটিও হয়নি। অবশেষে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য পদে পদোন্নতি পান দলের সিনিয়র নেতা আরিফুল হক। অবশ্য দলে সিলেটের উপদেষ্টা কাউন্সিলের আরো তিন সদস্য আরো রয়েছেন। তাঁরা হলেন-ইলিয়াস পত্নী তাহসিনা রুশদির লুনা, ড. এনামুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির।
দলের নেতাকর্মীরা বলছেন- গেল সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ায় এই পুরূষ্কার তাঁর (আরিফ) কপালে জোটে।
এ প্রসঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ সিলেটভিউকে বলেন-মেয়র আরিফুল হকের পদোন্নতি নিশ্চয় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরো শক্তিশালী হবে।
এদিকে শনিবার বিকেল তিনটার দিকে আরিফুল হকের কুমারপাড়ার বাসায় তাঁর সমর্থিত নেতাকর্মীরা মিষ্টি বিতরণ করেন। এসময় তাঁদেরকে উচ্ছ্বসিত দেখা যায়। মিষ্টি বিতরণের সময় দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি সালেহ আহমদ খসরু, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সমাপদক ইশতিয়াক সিদ্দিকী, সাবেক কাউন্সিলর দিনার খান হাসু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তবে সবচেয়ে ফেসবুকে আনন্দিত দেখা গেছে যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে। তাঁরা পদোন্নতি পাওয়া নেতাদের ছবি দিয়ে ফেসবুকে পোষ্টের ঝড় তুলছেন। শনিবার বিকেলে পূর্ব লন্ডনে বাঙ্গালী অধ্যুষিত এলাকায় একে অপরকে মিষ্টি মুখ করাতে দেখা গেছে।
এ প্রসঙ্গে যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ইউরোপের সমন্বয়কারী কামাল উদ্দিন সিলেটভিউকে বলেন-বহির্বিশ্বে দলের এসব নেতারা প্রবাসীদের নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। তাঁদের কষ্টের ফসল হিসেবে দলের ভারপ্রাপ্ত তারেক রমমান মূল্যায়ন করেছেন। তাঁদের এ মূল্যায়ন আগামী দিনে নতুন শক্তি নিয়ে তাঁরা দলের কার্যক্রমে নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মামুন সিলেটভিউকে বলেন- সম্প্রতি বহির্বিশ্বের ইতিহাসে আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্ববধায়ক সরকারের এক দফা দাবিতে লন্ডনে ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি এন্ড হিউমান রাইটস’ গণপদযাত্রা কর্মসূচিতে সফল নেতৃত্ব দিয়েছে যুক্তরাজ্য বিএনপি। সেখানে হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী জড়ো করতে সক্ষম হয়েছিল বিএনপি। মূলতঃ আন্দোলন সংগ্রামের ফসল হিসেবেই যুক্তরাজ্যের তিন নেতাকে মূল্যায়ন করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এমন মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা মামুন।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/ জুনেদ