৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অসুস্থ খালেদা জিয়ার মুক্তির পাশাপাশি তাকে দ্রুত বিদেশে পাঠনোর আল্টিমেটাম দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া এত অসুস্থ যে, অবিলম্বে যদি তার চিকিৎসা না করা হয় বিদেশে… বাংলাদেশে তার সেই চিকিৎসা সম্ভব নয়। তা না হলে তাকে বাঁচানো দুষ্কর হয়ে যাবে। যদিও দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে আদালতের অনুমতি লাগবে। আদালতের অনুমতি ছাড়া এটা সম্ভব নয়।

সম্প্রতি খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে রয়েছেন। মাঝে মাঝে তাকে সিসিইউতে নেওয়া হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে। বিএনপি নেতারা তাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন সরকারের প্রতি। শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে মানবিক আবেদন করতে হলে প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করতে হবে। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে মতামত চাইতে পারে।


এর প্র্রেক্ষিতে রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বিদেশে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে কোনও আবেদন করা হয়নি। খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হচ্ছে। আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, তিনি দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হলে আদালতের অনুমতি লাগবে। আদালতের অনুমতি ছাড়া এটা সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমানে শর্তসাপেক্ষ মুক্ত আছেন। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ থেকে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষ মুক্তি দেওয়া হয় তাকে। প্রতি ছয় মাস পর পর আবেদন করা হলে নতুন করে মুক্তির আদেশ নবায়ন করা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সূত্র জানায়, গত ৫ সেপ্টেম্বর পরিবারের পক্ষ থেকে একটি আবেদন পেয়েছে। তবে সেটি মুক্তির বা বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে না। সেটি শর্তসাপেক্ষ মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে। যদি তাকে বিদেশে নেওয়ার বিষয় থাকে তবে সেটা আদালতের মাধ্যমেই যেতে হবে। কোর্টে যেতে হবে। কোর্ট থেকে আইনসম্মতভাবেই করা হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের একজন দায়িত্বশীল এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে উল্লেখ করেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা এখন যে পর্যায়ে, তাতে তাকে বিদেশেও নেওয়া যাবে না। শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ।’যদিও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেসময়ে প্রতিক্রিয়ায় উল্লেখ করেছিলেন, বেগম জিয়া বিমানযাত্রা করতে সক্ষম। ‘ম্যাডামের চিকিৎসকেরা বলছেন তিনি ট্রাভেল করতে পারবেন। চিকিৎসকেরা বহু দিন ধরেই তা বলে আসছেন। আর বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে পরিবারের আবেদনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, সরকারের নির্বাহী আদেশে কারাগার থেকে বাসায় এনে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। তাহলে তাকে একই পদ্ধতিতে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো যাবে না কেনো। সরকারের হাত তো অনেক লম্বা। আদালতের রায় সরকার নির্বাহী আদেশে স্থগিত করে অনুমতি দিচ্ছে। সেটা ছয় মাস পরপর আবেদনের ভিত্তিতে মেয়াদ বাড়ছে। তাহলে মুক্তি দিতে আল্টিমেটামতো সরকারকেই দিতে হবে। সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা রাজনীতি করবে নাকি মানবিক হবে।

খালেদা জিয়াকে সরকারের পক্ষ থেকে মূলত দুটি শর্তে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। একটি হচ্ছে, ঢাকায় থেকে চিকিৎসা সেবাগ্রহণ। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, দেশের বাইরে যেতে পারবেন না। তিনি মুক্তি পেয়ে গুলশানে ফিরোজায় থাকা শুরুর পর থেকেই বিএনপির পক্ষ থেকে তাকে বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়ে আসা হচ্ছিলো। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় থেকে বারবারই বলা হয়েছে, আইনি জটিলতার কারণে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।