সাকিব আউট, খুলনার উল্লাস। সংগৃহিত।

ঢাকা পর্বে দারুণ সূচনা করে খুলনা টাইগার্স। দুটি ম্যাচেই জয় তুলে নিয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থেকে তারা আসে সিলেটে। এখানেও দেখা গেল ‘বাঘের গর্জন’। যে গর্জনে ম্রিয়মাণ তারকাখচিত রংপুর রাইডার্স।

ম্যাচে ব্যাটে-বলে লড়েছেন দুই ‘বাঘ’ দাসুন শানাকা ও মোহাম্মদ নাওয়াজ। খুলনা টাইগার্সের এ দুজনের অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্সের কাছে মলিন রংপুর রাইডার্স। বিপিএলের সিলেট পর্বের প্রথম ম্যাচে খুলনার কাছে ২৮ রানে হেরেছে রংপুর।


টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনা শানাকা ও নাওয়াজের ব্যাটে ভর করে ৬ উইকেটে ১৬০ রানের স্কোর দাঁড় করায়। জবাবে ১৩২ রানেই গুটিয়ে যায় রংপুর।

ব্যাট হাতে ৩৩ বলে ৪০ রান করা লঙ্কান অলরাউন্ডার দাসুন শানাকা বল হাতে আরও দুর্বার। ৩ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচায় শিকার করেন ৪টি উইকেট। দারুণ এ পারফরম্যান্সে ম্যাচসেরাও তিনি।

পাকিস্তানি অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নাওয়াজ ব্যাট হাতে ছিলেন দুর্দান্ত; ৩৪ বলে করেন ৫৫ রান। পরে বল হাতেও তিনি সফল; ২ ওভারে ১৩ রান দিয়ে নিয়েছেন ২ উইকেট।

১৬১ রানের জয়ের লক্ষ্যে শুরু থেকেই মুখ থুবড়ে পড়ে রংপুরের তারকাখচিত ব্যাটিং লাইন আপ। আগের ম্যাচে দলকে জেতানো বাবর আজম এবার ব্যর্থ। ৮ বলে ২ রান করা বাবর স্বদেশি মোহাম্মদ ওয়াসিমের বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে ফিরেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্র্যান্ডন কিংও ব্যর্থ। বোলিংয়ে এসেই তাঁকে বোল্ড করে দেন মোহাম্মদ নাওয়াজ। ব্যাকফুটে খেলতে চেয়েছিলেন কিং; কিন্তু বল খানিকটা নিচু হয়ে তার স্টাম্প ভেঙে দেয়।

দলের রান যখন ৪৯, ধুঁকতে থাকা রনি তালুকদার (২৫ বলে ১৫) লঙ্কান অলরাউন্ডার দাসুন শানাকার বলে লং অফে মুকিদুল ইসলামের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন। ভালোই খেলছিলেন শামীম হোসেন। তার ২২ বলে ৩০ রানের ইনিংসে বাউন্ডারি চারটি। এর মধ্যে লেগ সাইড দিয়েই তিনটি। পুল করতে গিয়ে আউটও হয়েছেন ডিপ স্কয়ার লেগে নাওয়াজের বলে ক্যাচ দিয়ে।

৬৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়েছিল খুলনা টাইগার্স। রংপুর ৪ উইকেট হারায় ৬১ রানে। এ পর্যন্ত মিল থাকলেও বাদবাকি সব অমিলে ভরা। পঞ্চম উইকেট জুটিতে বড় সংগ্রহ পায় খুলনা। এখানে ব্যর্থ রংপুর। খুলনার পঞ্চম উইকেট পড়েছিল ১৪১ রানে; রংপুর পঞ্চম উইকেট হারায় ৭৪ রানে। নাসুম আহমেদের টসড আপ ডেলিভারিতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই (৩ বলে ৪)। শানাকার ডিরেক্ট থ্রোতে রান আউটে কাটা পড়েন দলপতি নুরুল হাসান সোহান (৩ বলে ১)।

দলের রান তখন ৭৫! আরও ৫ রান যোগ হওয়ার পর নেই সাকিবও। শানাকার বলে উইকেটের পেছনে বিজয়ের হাতে ক্যাচ দেন সাকিব (২)। রিভিউ নিয়ে তাঁকে ফেরায় খুলনা।

৮০ রানে সপ্তম উইকেট হারানো রংপুর মোহাম্মদ নবী ও মেহেদি হাসানের ব্যাটে স্বপ্ন দেখছিল। অষ্টম উইকেটে এ দুজন গড়েন ১৮ বলে ৩৬ রানের জুটি। তাতে অবশ্য সিংহভাগ অবদানই নবীর, ১০ বলে ২৩। চূড়ান্ত বিপদ হয়ে ওঠার আগেই এ জুটি ভাঙতে সক্ষম হয় খুলনা। শানাকার বলে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন মেহেদি (৮ বলে ১২)। রিপন মণ্ডল এসেই দুই বলে শানাকাকে দুটি চার হাঁকান। কিন্তু নিজের তৃতীয় বলেই লং অফে ক্যাচ দিয়ে তিনিও শেষ।

সতীর্থদের যাওয়া-আসার মিছিল অসহায়ভাবে দেখলেও লড়াই ছাড়েননি মোহাম্মদ নবী। একপ্রান্ত আগলে ছোটান স্ট্রোকের ফুলঝুরি। তবে ২৯ বলে ফিফটি তুলে নেওয়া নবী সেখানেই থেমে যান হাসান মাহমুদের বলে। ১৬৭ স্ট্রাইক রেটে তার ৫০ রানের ইনিংসে ছিল তিনটি ছয় ও চারটি চার।

১৩২ রানে অলআউট হয় রংপুর রাইডার্স। ২৮ রানের জয়ে এবারের বিপিএলে টানা তিন জয় পেল খুলনা।

দাসুন শানাকা ৪টি, মোহাম্মদ নাওয়াজ ২টি, মোহাম্মদ ওয়াসিম দুটি ও নাসুম আহমেদ একটি উইকেট শিকার করেন।

এর আগে শুরুতে বিপর্যয়ে পড়লেও মিডল অর্ডারের দৃঢ়তায় ১৬০ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর পায় খুলনা টাইগার্স।

মেহেদি হাসানের টসড আপ ডেলিভারিতে মিড উইকেটে রনি তালুকদারের ক্যাচ হয়ে ৭ বলে শূন্যতে কাটা পড়েন এনামুল হক বিজয়। মাহমুদুল হাসান জয়ও টিকতে পারেননি। ৭ রান করা জয়কে তুলে নেন মেহেদি।

দলীয় ৫০ রানে হাসান মাহমুদের বলে পুল করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন বাঁহাতি আফিফ হোসেন (৪)। এক প্রান্তে পাল্টা আক্রমণে জবাব দিচ্ছিলেন এভিন লুইস। তাঁর জন্য ‘ঘাতক’ হয়ে আসেন হাসান মাহমুদ। ২৫ বলে সমান তিনটি করে চার ও ছয়ে ৩৭ রান লুইস ক্যাচ দেন সোহানের হাতে।

৬৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে হতোদ্যম খুলনাকে পথ দেখান দাসুন শানাকা ও মোহাম্মদ নওয়াজ। পঞ্চম জুটিতে এ দুজন প্রতি-আক্রমণে ৫৩ বলে গড়েন ৭৭ রানের দুর্দান্ত জুটি। জুটির শুরুটা রয়েসয়ে থাকলেও পরে হাত খুলেছেন দুজনেই। খুলনার ব্যাটিংয়ের ভিত গড়ে দেওয়া এ জুটি ভাঙে শানাকার বিদায়ে। ১৯তম ওভারে হাসান মাহমুদের বলে বোল্ড হয়ে ফেরার আগে ৩৩ বলে এক ছয় ও পাঁচ চারে ৪০ রান করেন লঙ্কান এই ব্যাটার।

ইনিংসের শেষ ওভারে ফিরে যান নওয়াজও। রিপন মণ্ডলের বলে রনি তালুকদারের ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে ৩৪ বলে ৫৫ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন তিনি। শেষ ওভারেই ফিফটি তুলে নেওয়া নওয়াজের ইনিংসে ছিল তিনটি ছয় ও পাঁচটি চার।

৬ উইকেটে ১৬০ রানে থামে খুলনা টাইগার্স। রংপুরের হাসান মাহমুদ ৪ ওভারে ২৯ রান দিয়ে ৩টি, মেহেদি হাসান ৪ ওভারে ২০ রানে ২টি উইকেট নেন। উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে মাত্র ২১ রান খরচ করেন সাকিব আল হাসান।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে