এবার রাজধানীর কল্যাণপুর ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। তবে নবজাতক সুস্থ আছে। স্বজনদের দাবি, চিকিৎসকের অবহেলায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে পলি সাহা (২৫) নামে ওই প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। 

 


বুধবার রাতে গণমাধ্যমে এ অভিযোগ করেন পলির চাচা সুবীর সাহা। 

 

এর আগে বিকাল ৪টায় কল্যাণপুর ইবনে সিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে মৃত ঘোষণা করে। পরে তাকে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে স্বামীর বাড়িতে সৎকার করা হয়।

 

জানা যায়, সোমবার দুপুরে স্ত্রী পলিকে প্রসবজনিত সিজার করাতে ইবনে সিনা হাসপাতালে আসেন স্বামী আশীষ রায় মুন্না। সিজারের মাধ্যমে পলি পুত্রসন্তান প্রসব করেন। মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় পলি সাহাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

 

পলির চাচা সুবীর সাহা বলেন, সোমবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে পলির সিজার করা হয়। চিকিৎসক আমাদের জানান, রোগী এবং নবজাতক ভালো আছে। বিকাল ৫টায় পলিকে পোস্ট অপারেটিভ রুমে নিয়ে আসা হয়, তখনও চিকিৎসক জানান, রোগী ভালো আছে, তবে কিছুটা ব্লিডিং (রক্তপাত) হচ্ছে।

 

পলির চাচা সুবীর আরও বলেন, সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার দিকে যে চিকিৎসক সার্জারি করেছেন, তিনি এসে দেখেন এবং রোগীর জন্য এক ব্যাগ রক্ত লাগবে বলে জানান। রাত ৯টায় আমরা ফের রোগীর অবস্থা জানতে চাই, তারা জানান রোগীর ব্লিডিং আগের চেয়ে কমেছে, আপাতত শঙ্কা নেই। এভাবেই রাত একটা পর্যন্ত সময় গড়ায়। পরে চিকিৎসকরা জানান, ব্লিডিং কমে গেছে। তবে ব্লাড প্রেশার নিয়ে চিন্তিত। এরপর রাতে আর আমাদেরকে রোগীর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।

 

তিনি আরও বলেন, যে চিকিৎসক সার্জারি করেছিলেন, তিনি পলির স্বামীকে ফোন করে বলেন, রোগীর অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হচ্ছে, আইসিইউতে নিতে হবে। এর ১০ মিনিট পর তিনি আবার আমাকে বলেন, রোগীর ব্লিডিং ইন্টারনাল কোথাও হচ্ছে কি না, সেটা দেখতে আরেকটা সার্জারি করতে হবে। তখন রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। অক্সিজেন ও হার্টবিট পাচ্ছিল না। ওই অবস্থায় তাকে আবার নতুন করে সার্জারি করা হয়। সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে চিকিৎসকরা জানান রোগীর জরায়ু কাজ করছে না, এজন্য ব্লিডিং হচ্ছে। তাকে বাঁচাতে হলে জরায়ু কেটে ফেলতে হবে। তারপর আমরা সম্মতি দিলে তার জরায়ু কেটে ফেলা হয়। একপর্যায়ে মঙ্গলবার দুপুর ১টায় পলির স্বামীকে জানায় পেশেন্টের কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে, আমাদের আর কিছুই করার নেই। সবশেষে বিকাল ৪টায় পলিকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এ বিষয়ে অভিযুক্ত চিকিৎসক হাসপাতালটির প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শারমিন মাহমুদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

 

তবে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার বিষয়টি অস্বীকার করেন ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জনসংযোগ শাখার কর্মকর্তা ফারুক খান। বলেন, পলি সাহা গর্ভধারণের পর দীর্ঘ ৮ মাস ওই চিকিৎসকের ফলোআপে ছিলেন। শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে সিজার করাতে এসেছিলেন। প্রতিটি পদক্ষেপে চিকিৎসকরা রোগীর স্বামী ও স্বজনদের রোগীর সার্বক্ষণিক আপপেড দিয়েছেন। সুতরাং এখানে অপারেশন করতে গিয়ে জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে; এটা পুরোপুরি ভুল অভিযোগ। হাসপাতাল ছাড়ার সময়ও চিকিৎসক ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় তারা কোনো অভিযোগ করেননি। তবে এ ঘটনা খতিয়ে দেখতে কলেজ কর্তৃপক্ষ ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/ যুগান্তর/ এনএফ