বাবা ও মায়ের সঙ্গে সৌরভ চক্রবর্তী

বাবা ছিলেন একজন পুরোহিত ও পন্ডিত । যিনি সর্বদা স্বপ্ন দেখতেন ছেলে তাঁর অনেক বড়ো কিছু করবে। বাবার সেই স্বপ্ন আজ বাস্তব রূপ পেয়েছে। দেশের প্রথম শ্রেণির চাকরি বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। বলছিলাম ৪১ তম বিসিএস পরীক্ষায় শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত সৌরভ চক্রবর্তীর কথা । সম্প্রতি গেজেটও প্রকাশিত হয়েছে। 


তিনি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ৭নং লক্ষনাবন্দ ইউনিয়নে প্রত্যন্ত এক গ্রাম ‘নোওয়াই দক্ষিণ ভাগের সমর চক্রবর্তীর সন্তান। এ গ্রামেই জন্ম-বেড়ে ওঠেন তিনি। ছেলেবেলা হতে বাবার স্বপ্নকে নিজের স্বপ্নে পরিণত করতে অধ্যবসায় হয়ে উঠে যার তাপস্য। দুরন্তপনা ছেলেটি মনে মনে ভাবতো তাকে এমন কিছু করতে হবে পরিচিত সবাই গর্ব করে যাতে বলে, ‘আমাদের সৌরভ এখন এই চাকরি করছে।’



সৌরভ ঠাকুর বাড়ি’র ছেলে, নিজ এলাকায় অন্যতম শিক্ষিত বাড়ি হিসেবে পরিচিত এই পরিবারটি। বাবা ও মা পূর্নিমা চক্রবর্তীর পাশাপাশি চার ভাই ও এক বোন রয়েছে তাঁর।ছোটবেলা থেকেই উপন্যাস পড়তে ভালোবাসতেন তিনি। আবুল কালাম একাডেমি বিদ্যালয় হতে প্রাথমিক এবং ফুলসাইন্দ দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় হতে মাধ্যমিক শিক্ষা লাভ করেন তিনি । সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে নিজেকে সর্বদা জড়িত রাখার মাঝেই যেন আনন্দ খুঁজে পেতেন। অন্যদের সহায়তায় নিজেকে ব্যস্ত রাখার মাঝেও পড়াশোনা থেকে দূরত্ব তৈরি করেননি তিনি। ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান হওয়াতে পুরোহিতের দায়িত্বও পালন করেছেন দীর্ঘসময়। 

 

২০১৩ সালে সিলেটের ঢাকাদক্ষিন বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান সৌরভ। পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগ থেকে তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। স্নাতক শ্রেণিতে অধ্যয়নরত থেকেই কিছু সময় ব্যয় করতেন চাকরির পড়াশোনার জন্য। বাকি সময়ে বিভাগে, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় কিংবা সহ-শিক্ষা কার্যক্রমে কাটাতেন। পরবর্তীতে করোনার সময় থেকে পড়াশোনায় সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করেন তিনি। যখন যেখানে পড়ার জন্য কিছু পেতেন পড়ে শেষ করতেন।

 

সৌরভের ভাষ্যমতে, বিসিএসের জন্য অনেকে শুধু সিলেবাসভিত্তিক পড়াশোনা করে থাকেন। তবে তিনি মনে করেন, পড়াশানা যাই হোক না কেন সেটা জীবনের কোনো  একদিন কাজে দিবে। পড়াশোনা কখনো হতাশ করে না।

 

তিনি বলেন, “চোখের সামনে অনেক পরিশ্রমী মেধাবীদের দেখছি। যারা এখনও কিছু করতে পারছেন না। তাই নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। নিজের লক্ষ্য ঠিক রেখে রুটিন অনুযায়ী কাজ করতে থাকলে ভালো কিছু হবে। কারণ বিসিএস কিংবা যেকোনো সফলতার  জন্য দরকার পরিশ্রম ও ধৈর্য।”

 

চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সৌরভ বলেন, “পড়াশোনার সময় শুধুই পড়াশোনা করতে হবে। যখন টেবিলের সামনে বই নিয়ে বসা হবে দুনিয়ার বাকি সব কিছু ভুলে থাকতে হবে। কতক্ষণ পড়লাম এর থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কতোটুকু জানতে পারলাম। নোট করে পড়াশোনা করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। আর কনফিউশনিং টপিকস নিয়ে বন্ধুদের সাথে আলোচনা করলে বিষয়গুলো মনে থাকে ভালো।” 

 

জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনায় সবার আশীর্বাদ কামনা করেন তিনি। বিএসএসের এই দীর্ঘযাত্রায় পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, এলাকার সর্বস্তরের জনগন এবং শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের প্রতিও ধন্যবাদ জানান সৌরভ। 

 

সৌরভের এমন সাফল্যে লক্ষনাবন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খলকুর রহমান বলেন, “সৌরভ চক্রবর্তীর জন্ম আমাদের ইউনিয়নের অবহেলিত এক গ্রামে যেখানে শিক্ষার হার খুবই কম। এই গ্রামের আলোচিত পরিবার হলো ঠাকুর পরিবার। পরিবারটির অধিকাংশ সদস্যরা উচ্চ শিক্ষিত, কেউবা উচ্চ শিক্ষার জন দেশের বাইরে গিয়েছেন। সৌরভ আমাদের নতুন প্রজন্মের আলোর মশাল হিসেবে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন। এটা আমাদের জন্য গৌরবের। তাঁর কৃতিত্ব পরবর্তী প্রজন্মের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।”
 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ নোমান