হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বদলপুর ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামের মৃত সুপেন্দ্র চন্দ্র দাসের স্ত্রী নির্মলা দাস (৬৭)। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধের বছর বার কি তের বছর বয়সে কিশোরী অবস্থায় বিয়ে হয়েছিল তার। স্বামী আর দুই পুত্র সন্তান নিয়ে সুখের সংসার ছিল নির্মলা দাসের । কিন্তু জন্মের কয়েক বছরের মধ্যে দুই পুত্র সন্তান অসুস্থ হয়ে মারা যায় তার। 


এরপর বিয়ের মাত্র বছর ছয়েক না যেতেই নির্মলার স্বামী সুপেন্দ্র দাসও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন । তারপরই নির্মলার জীবনে যেনো নেমে আসে ঘোর অমাবস্যা। আগে কাজর্কম করে জীবন কোন রকম চালাতে পারলেও এখন বৃদ্ধ বয়সে এসে ক্ষুধা নিবারণসহ জীবন চালনার জন্য পাড়া প্রতিবেশীর দয়ার উপরই একমাত্র ভরসা অসহায় নির্মলা দাসের।



জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরী করার সময় সঠিকভাবে জন্ম তারিখ বলতে না পারায় জাতীয় পরিচয়পত্রে নির্মলার বয়স এখন ৫৬ বছর । স্বামী মারা যাওয়ার চার দশকের বেশী সময় পেড়িয়ে গেলেও অসহায় নির্মলার ভাগ্যে এখনও জুটেনি সরকারি বিধবা কিংবা বয়স্ক ভাতা। কিছুদিন আগে বয়স্ক ভাতার একটি কার্ড পেলেও বয়স না হওয়ার অজুহাতে স্থানীয় ইউপি সদস্য সেই কার্ড নিয়ে গেছেন বিধবা ভাতা পাইয়ে দেয়ার আশ্বাসে।

 

সরেজমিনে মাহমুদপুর গ্রামে নির্মলার দাসের বসত ঘরে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে মাটির চুলোয় রান্না করছেন নির্মলা দাস। চাল ফুটানো শেষে তেল পেঁয়াজ ও মরিচ ছাড়া শুধু লবন দিয়ে কচুশাক সেদ্ধ করছেন খাওয়ার জন্য। বসতঘরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়লো নির্মলার মানবেতর জীবন কাটে জরাজীর্ণ এই কুঁড়ে ঘরে। ভাঙা ঘরে নেই প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। বসবাস অযোগ্য বসতঘরের ভিতরটাও।
 


আলাপকালে নির্মলা দাস জানান, “স্বামী মারা যাবার পর থেকেই জীবনের সাথে প্রতিনিয়তই যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন তিনি। বৃষ্টির দিনে ঘরের চালার বিভিন্ন ফুটো দিয়ে পানি পড়ে। তখন মাথায় পলিথিন দিয়ে ঘরের এক কোণে বসে থাকতে হয়। বয়স হয়েছে তেমন কাজও করতে পারেন না এখন। প্রতিবেশীদের সহযোগীতায় এখন খেয়ে পড়ে কোন রকমে দিন কাটে তার। ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় একটি এনজিও থেকে কয়েক হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ঝুপড়ি ঘরের মধ্যে বিস্কিট, চানাচুর, চিপসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তুলে একটি দোকান বসিয়েছেন। কিন্তু ঠিকমত বিক্রি না হওয়ায় ঋণের কিস্তি শোধ করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে তার।”
 


তিনি আরও জানান, “বয়স্ক ভাতা পাওয়ার একটি বই পেয়েছিলেন কিন্তু বয়স হয়নি বলে অরুণ মেম্বার সেই বই নিয়ে গেছেন। আশ্বাস দিয়ে গেছেন বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করে দিবেন। এছাড়া আর কোন সরকারি সহায়তা জুটেনি।”


ইউপি সদস্য অরুণ কুমার তালুকদার বলেন, বয়স কম হওয়াতে বয়স্ক ভাতার তালিকা থেকে নির্মলা দাসের নাম বাদ পড়েছে। উনাকে বিধবা ভাতা ভোগীদের তালিকায় যুক্ত করা হবে।

বদলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুসেনজিৎ চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। খোঁজ নিয়ে উনাকে সর্বোচ্চ সহযোগীতা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুয়েল ভৌমিক বলেন, উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে যোগাযোগ করে নির্মলা দাসের বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করা হবে এবং উনাকে প্রয়োজনীয় সর্বাত্বক সহযোগিতার করা হবে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/ এনামুল/ নোমান