নতুন সীমান্ত ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য আরো শর্ত আরোপসহ অভিবাসন আইনকে কঠোর করার লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি সংস্কার প্রস্তাব এনেছে ফিনল্যান্ডের ডানপন্থি জোট সরকার। ১৮ জুলাই দেশটির সরকার অভিবাসন আইন কঠোর করার লক্ষ্যে নেয়া প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করেছে। খবর ইনফো মাইগ্র্যান্টসের।

 


গত বছর ক্ষমতায় আসা এই রক্ষণশীল সরকারের প্রধান লক্ষ্যগুলোর একটি ছিল দেশটির আশ্রয়নীতি কঠোর করা।


প্রধানমন্ত্রী পেত্তেরি অরপোর নেতৃত্বাধীন সরকার জানিয়েছে, তারা প্রতিবেশী নর্ডিক দেশগুলোর আদলে অভিবাসন আইনে সংস্কার আনতে চায়।

 

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মারি রান্তানেন বলেন, ‘আইনের প্রস্তাবিত সংস্কারগুলোর মধ্য দিয়ে ফিনল্যান্ডের নিরাপত্তা জোরদার করা, অভিবাসন-সম্পর্কিত অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণ এবং সমাজের প্রচলিত নিয়মকে আরো শক্তিশালী করতে চায় সরকার৷’


এক বিবৃতিতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকার আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য একটি নতুন সীমান্ত পদ্ধতির কথা ভাবছে, যার মধ্য দিয়ে ‘আশ্রয় আবেদন যাচাই-বাছাই এবং যাদের আবেদন বাতিল হয়েছে তাদের দ্রুত ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে৷’

 

নতুন এই সীমান্ত পদ্ধতি অনুসারে, একজন আশ্রয়প্রার্থীকে ‘আবেদন প্রক্রিয়াকরণের সময় সীমান্তে বা সীমান্তের কাছাকাছি থাকতে হবে৷’

প্রস্তাবিত আইনটি বাস্তবায়ন করা হলে, আবেদন প্রক্রিয়াকরণের সময় আশ্রয়প্রার্থীদের ফিনল্যান্ডে ঘুরে বেড়ানোর অধিকার সীমিত হয়ে আসবে৷

 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অভিবাসন আইনের এই পরিবর্তনগুলো জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসাবে বিবেচিত ব্যক্তিদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াকে গতিশীল করার পাশাপাশি আশ্রয় প্রক্রিয়াকেও ত্বরান্বিত করবে৷

অভিবাসন আইনটিতে পরিবর্তন আনা হলে দেশটির নাগরিকত্ব পাওয়ার শর্তগুলোও বদলে যাবে৷ ফিনল্যান্ডের নাগরিকত্ব পেতে বর্তমানে পাঁচ বছর দেশটিতে বসবাস করতে হয়৷ সেটি বাড়িয়ে আট বছর করার প্রস্তাব করেছে সরকার।

এছাড়াও, রেসিডেন্স পারমিট বা বসবাসের অনুমতি পাওয়ার আবদনের সময় আশ্রয়প্রার্থীরা নিজেদের স্ট্যাটাস বদলে কর্মভিত্তিক বা শিক্ষাভিত্তিক ক্যাটাগরি নিতে পারতেন৷ প্রস্তাবিত আইনে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য সেই সুযোগ আর থাকবে না।

 

ফিনল্যান্ডের সরকার আরো জানিয়েছে, দেশটির পূর্ব সীমান্তে অনিয়মিত অভিবাসীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় আরো একটি বিল তৈরি করা হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক সুরক্ষার আবেদন গ্রহণকে সীমিত করবে৷


গেল বছরের আগস্ট থেকে রাশিয়ার সঙ্গে থাকা সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে অন্তত হাজারখানেক অভিবাসী কোনো নথিপত্র ছাড়াই ঢুকে পড়ে নর্ডিক দেশটিতে। এর জের ধরে ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে রাশিয়ার সঙ্গে থাকা পূর্ব সীমান্ত বন্ধ করে দেয় ফিনল্যান্ড৷ রাশিয়া ও ফিনল্যান্ডের মধ্যে এক হাজার ৩৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে।

হেলসিংকি জানিয়েছে, রাশিয়া ‘হাইব্রিড আক্রমণের’ অংশ হিসাবে অভিবাসীদের ফিনল্যান্ডের দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷ তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মস্কো৷ শুরুতে নির্ধারিত মেয়াদে সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা দিয়ে আসছিল ফিনল্যান্ড৷ কিন্তু চলতি এপ্রিলে এসে পরিস্থিতির উন্নয়ন না হওয়ায় প্রতিবেশী রাশিয়ার সঙ্গে থাকা পূর্ব সীমান্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে দেশটি৷

 

২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণের পর দুই দেশের সম্পর্কের কিছুটা অবনতি দেখা গেছে৷ কয়েক দশকের সামরিক নিরপেক্ষতা ভেঙে ফিনল্যান্ড ন্যাটোতে যোগ দেয়ার পর এই টানাপড়েন শুরু হয়৷

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/নাজাত