(প্রতীকি ছবি)

সিলেটের জকিগঞ্জে সৌদি আরব প্রবাসীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির দায়েরকৃত মামলায় ১০ ডাকাতকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২ জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি দণ্ডপ্রাপ্ত ১০ আসামীকে ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

 


 

 

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪র্থ আদালতের বিচারক শায়লা শারমিন এ রায় ঘোষনা করেন। ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. কবির হোসেন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

 

 

 

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হচ্ছেন- জকিগঞ্জ থানার সাতঘরি হিলাবাজের আব্দুর রহমানের ছেলে আব্দুস শহিদ (৩২), একই থানার মজলি গ্রামের আব্দুল খালিকের ছেলে সেলিম (৪০), শরীফাবাদের মৃত মাহমুদ আলী উরফে মকই মিয়ার ছেলে হেলাল উদ্দিন (৪৮), একই এলাকার মখলিছুর রহমানের ছেলে জামাল উদ্দিন উরফে কাটা জামাল (৪০), ভরন সুলতানপুর গ্রামের মৃত ইব্রাহিম আলীর ছেলে আহমদ সাবু উরফে সাবুল (২৮), কানাইঘাট থানার জয়পুর গ্রামের গোটাই মিয়ার ছেলে ছয়ফুল আলম (৩৫), জকিগঞ্জ থানার চাঁনপুর গ্রামের আব্দুল মানিকের ছেলে আব্দুল আহাদ (৩৫), তার সহোদর ভাই আব্দুস সামাদ উরফে বদরুল (৩০), একই থানার খাসেরা গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে মজু (৩০) ও বিয়ানীবাজার থানার বরইআল গ্রামের ইলিয়াস আলীর ছেলে মো. সোনা মিয়া উরফে সোনা উল্লাহ (৫৮)। এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত আসামী মজু, আব্দুস শহিদ, আহমদ সাবু উরফে সাবুল, জামাল উদ্দিন উরফে কাটা জামাল, সোনা মিয়া উরফে সোনা উল্লাহ কারাগারে রয়েছেন। বাকী ৫ আসামী বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।

 

 


খালাসপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- জকিগঞ্জ থানার চাঁনপুর (দরিয়াপুর) গ্রামের মৃত ওহাব আলীর ছেলে রাজু আহমদ ও একই থানার হাড়িকান্দি গ্রামের মৃত সবু মিয়ার ছেলে আলী আহমদ (৩০)।

 

 

 

আদালত ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, জকিগঞ্জ থানার ৬নং সুলতানপুর ইউনিয়নের ইলাবাজ (সাতঘরি) গ্রামের মৃত আছদ্দর আলী তাপাদারের ছেলে প্রবাসী ফজলুর রহমান তাপাদার ২০১২ সালের ৫ ডিসেম্বর সৌদি আরব থেকে বাড়ীতে আসেন। ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারী বুধবার রাত ১১ টার দিকে প্রতিদিনের ন্যায় রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে পরিবার নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ওইদিন (১০ জানুয়ারি) রাত ২ টার দিকে ফজলুর রহমান তার কক্ষের দরজা ভেঙ্গে ৫/৬ জনের মুখোশধারী ডাকাতদল আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হানা দেয় এবং পরে তার ভাই ফারুক আহমদ তাপাদারের কক্ষে ডাকাতদল প্রবেশ করে এবং পরিবারের লোকজনকে বেধড়ত মারধর করে গুরুতর আহত করে।

 

 

 


এসময় ডাকাতরা পুরো পরিবারের সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ ৬৫ হাজার টাকা, সাড়ে ১৬ ভরি স্বণালংকার ও একটি মোবাইলসহ মোট ৯ লাখ ৮০ হাজার ৫ শত টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। তখন পরিবারের মহিলা ও ছেলে-মেয়েরা কান্নাকাটি আরম্ভ করলে ডাকাতদল পরিবারের সদস্যদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে বন্দুক দিয়ে গুলি ছুড়লে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ঘরের দেয়ালে গুলি পড়ে যায়। গুলির শব্দে গ্রামের লোকজন এগিয়ে আসলে ডাকাতদল পালিয়ে যাওয়ার সময় ৪টি তাজা গুলি উঠানে ফেলে যায়। এ ঘটনায় ফারুক আহমদ তাপাদার বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা ১৫/১৬ জনকে আসামী করে জকিগঞ্জ থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। যার নং- ৬ (১৭-০১-২০১৩)।

 

 

 

দীর্ঘ তদন্ত শেষে একই বছরের ৩১ আগষ্ট জকিগঞ্জ থানার এসআই মো. নজরুল ইসলাম ১২ জনকে আসামী করে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র নং-১১০) দাখিল করেন এবং ২০১৫ সালের ১৮ এপ্রিল ওই ১২ জনের বিরুদ্ধে চার্জগঠন (অভিযোগগঠন) করে আদালত এ মামলার বিচারকার্য্য শুরু করেন।

 

 

 

দীর্ঘ শুনানি ও ৯ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) আদালত আসামী আব্দুস শহিদ, সেলিম, হেলাল উদ্দিন, জামাল উদ্দিন উরফে কাটা জামাল, আহমদ সাবু উরফে সাবুল, ছয়ফুল আলম, আব্দুল আহাদ, আব্দুস সামাদ উরফে বদরুল, মজু ও মো. সোনা মিয়া উরফে সোনা উল্লাহকে ১৮৬০ সালের দ্যা পেনাল কোড এর ৩৯৫ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করেন। এছাড়া এ মামলার আসামী রাজু আহমদ ও আলী আহমদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আদালতে প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে এ মামলা থেকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন।

 

 

 

রাষ্ট্রপক্ষে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুছ ছাত্তার ও এডিপিপি অ্যাডভোকেট দীনা ইয়াছমিন এবং আসামীপক্ষে অ্যাডভোকেট আব্দুল খালিক, অ্যাডভোকেট কিবরিয়া ও অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন মামলাটি পরিচালনা করেন।

 

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডি.আর