হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় শুরু হয়েছে চলতি মৌসুমের বোরো ধান কাটা-মাড়াইয়ের উৎসব। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। 
 

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) উপজেলা সদর ইউনিয়নের জাজিউতাসহ কয়েকটি ইউনিয়নে মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকরা উৎসাহ নিয়ে ধান কাটছেন। কেউ-কেউ ধান ঘরে তুলছেন। কৃষকের আঙিনায় ধান মাড়াইও চলছে পুরো পল্লী অঞ্চলে।


উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চুনারুঘাটে বোরো ধান আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা ছাড়িয়ে গেছে। এবার ফলনও বেশ ভালোই হচ্ছে। এবার বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিলো ১১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি। তবে তা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ১২ হাজার ২‘শত ৮০ হেক্টর। যা লক্ষ্য মাত্রার চেয়ে ৪‘শত ৮০ হেক্টর বেশি জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষকরা উৎসাহ নিয়ে নতুন ধান ঘরে তুলতে নেমেছেন মাঠে-মাঠে। 
 

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার বোরো মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন বেশ ভালোই হয়েছে। তবে তাপদাহের কারণে কষ্ট হচ্ছে বেশি। কৃষক মধু মিয়া জানান, অতিরিক্ত গরমে কৃষি জমিতে বেশি পরিমাণ সেচ দিতে হয়েছে। ডিপটিউবওয়েলগুলোতে পানি কম উঠায় কৃষকদের দিনরাত জেগে পানি দিতে হয়েছে। মিরাশি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো: রমিজ উদ্দিন জানান, ৮৯ ও ২৯ জাতের ২০ একর জমি আবাদ করেছেন। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। কিন্তু কিছু জমিতে মাজরা পোকার আক্রমণে বিপাকে পড়েছি। আমারসহ এ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ধানের ক্ষতি হয়েছে। এতে করে ধানের ফলন কমে যাবে। 
 

তবে বিঘা প্রতি এবার ধানের ফলন হচ্ছে ২০-২৫ মনের মধ্যে। এই ফলনও কম নয়। তবে বোরো মৌসুমে ধানের সরকারি মূল্য ধরা হয়েছে ১২‘শত ৮০ টাকা হওয়ায় সন্তুষ্ট প্রকাশ করেন এই কৃষক। কৃষক আলমগীর হোসেন জানান, সকল প্রকার সারের দাম বস্তা প্রতি ২‘শত ৫০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় ধানের আবাদের খরচ বেড়ে গেছে এবার। তবে ধানের দাম ভালো পেলে কৃষকরা লাভবান হবেন। বর্তমানে বাজারে ধানের যে দাম তা নিয়ে খুশি নন কৃষকরা। 


উপজেলার শানখলা ইউনিয়নের কৃষক মোহাম্মদ সুমন মিয়া বলেন, এবার তিনি ৪ বিঘা জমিতে ব্রি-৮৮ ও ব্রি-ধান ১০০ জাতের ধান আবাদ করেছিলেন। বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে তার সাত থেকে আট হাজার টাকা। আবহাওয়া ভালো থাকায় ধানের ফলন বেশ ভালই হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। আশা করছি বিঘা প্রতি ধানের ফলন ২৫-২৮ মন হবে। উপজেলার মিরাশি ইউনিয়নের পরাজার গ্রামের কৃষক মো: আকছির মিয়া জানান, ব্রি-ধান ৮৯, ৯৬, বঙ্গবন্ধু ধান ১০০, বিনা ধান ২৫ জাতের ৭৫ খের  জমিতে ধান লাগিয়েছেন তিনি। খের প্রতি খরচ ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। প্রতি খেরে ধানের ফলন হচ্ছে ২২ থেকে ২৭ মনের মধ্যে। 
 

এদিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের জাজিউতা গ্রামে বোরো ধানের কর্তনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চুনারুঘাট উপজেলার নবাগত ইউএনও আয়েশা আক্তার। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মাহিদুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার ভূমি মো: মাহবুব আলম মাহবুব, প্রাণীসম্পদ অফিসার মো: আনোয়ারুল ইসলাম, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) প্লাবন পাল।  
 

ইউএনও আয়েশা আক্তার বলেন, উপজেলার এবার বোরো ধান আবাদের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা ছাড়িয়ে গেছে, ধানের ফলনও বেশ ভালোই হচ্ছে। 
 

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মাহিদুল ইসলাম বলেন, ধান কাটা-মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ ভাগ ধান পরিপক্ক হয়েছে। তাপদাহের কারণে জমিতে পানি বেশি লেগেছে। গত বছরের তুলনায় এবার ৪‘শত ৮০ হেক্টর বেশি জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। ধানের ফলন বেশ ভালোই হয়েছে। আশা করা যায় কৃষকরা যথাসময়ে তাদের ফসল ঘরে তুলতে পারবে এবং এবারে সরকারি বোরো ধানের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১২‘শত ৮০ টাকা, কৃষকেরা সরকারি গোডাউনে ধান সরবরাহ করলে এবারে বেশি লাভবান হবেন।
 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ নোমান