দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনপদ সিলেট বৃষ্টিবলয়ের মধ্যে প্রবেশ করতে যাচ্ছে, কয়েকদিন আগে এমন একটি পূর্বাভাস দিয়েছিলো বেসরকারি আবহাওয়া সংস্থা বাংলাদেশ আবহাওয়া অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি)। এই পূর্বাভাস যেন বাস্তব রূপ নিতে শুরু করেছে। রবিবার থেকেই সিলেটে তীব্র বজ্রপাত, কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টি হচ্ছে। সোমবার (৬ মে) সকাল থেকে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়েছে। সিলেটের নদ-নদীর পানি এখনো বিপৎসীমা অতিক্রম না করলেও এবছর বড় বন্যার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। যার ফলে আতঙ্কে রয়েছেন সিলেটের মানুষ।

 


সিলেটে অধিকাংশ হাওরের ধান কাটা এখনো শেষ হয়নি। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বাড়বে নদ-নদীর পানি। উজানের পাহাড়ি ঢল নেমে সিলেটে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়ার এমন পূর্বাভাসের কথা জানিয়ে হাওরের বোরো ধান দ্রুত কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

 


সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে রবিবার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সিলেটে ১২৫ মি. মি. বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্তই বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ মি. মি.। সিলেটের আগমী ৪৮ ঘন্টায় ভাড়ি বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে জানিয়েছে তারা।

 

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে শুষ্ক মৌসুমের বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮০ মিটার। বর্ষা মৌসুমে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৭৫ মিটার। আজ নদীর ওই পয়েন্টে পানি ৯ দশমিক ৫৩ মিটারে অবস্থান করছিল। সারি নদের জৈন্তাপুরের সারিঘাট পয়েন্ট শুষ্ক মৌসুমে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৭০ মিটার। বর্ষা মৌসুমে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৩৫ মিটার। আজ নদের ওই পয়েন্ট পানি ৮ দশমিক ১৬ মিটারে অবস্থান করছিল। এ ছাড়া সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্ট এবং কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টেও পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।


সিলেট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা সিলেটভিউকে জানান, এ বছর সিলেটে ৩ লক্ষ ৪০ হাজার মেট্রিক টন বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সিলেটের ৮৬ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। সিলেটে আগাম বন্যার পূর্বাভাসের কারণে হাওরের বোরো ধান দ্রুত কেটে ঘরে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কৃষকদের। আমরাও তাদের নানা ভাবে সাহায্য করছি। হঠাৎ করে যদি এমন ঘটনা ঘটে তবে বোরো ধানের ক্ষতি হবে।

 


এর আগে ২০২২ ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছিল সিলেট বিভাগের মানুষ। সেই সময় বন্যায় সিলেট বিভাগের ৭২ শতাংশ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত হয়। বিভাগজুড়ে ৮২ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল। কেবল সিলেটেই মারা যায় ৫১ জন। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিপুল সংখ্যক বাড়িঘর ও গবাদিপশুর।

 

সিলেট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ সিলেটভিউকে জানান, প্রতি ২ থেকে ৩ বছর পর পর বড় বন্যার আশঙ্কা করা হয়। সেই হিসাবে এ বছর বর্ষায় বড় বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে সিলেটে বৃষ্টির কারণে আগাম বন্যা হয় না। মূলত বাংলাদেশের উজানে ভারতের মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টি হলে আগাম বন্যা হতে পারে। সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্ট এবং কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টেও পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। যদি ভারতে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আগাম বন্যা দেখা দিতে পারে।

 

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/নাজাত