সিলেটে করোনাকালে জনমনে উদ্বেগ-আতঙ্ক ছিলো- কোনদিন কতজন মারা গেলেন এই প্রাণঘাতি ভাই ভাইরাসে। এখন করোনা নেই, সেই ভয়ও নেই। তবে আছে অন্য আতঙ্ক। ঘর থেকে হলেই যদি আকাশ থেকে ছুটে আসেন মৃত্যুদূত! বাড়ির উঠোনেই তো সেই ‘মৃত্যুদূত’ কাড়ছেন কারো প্রাণ।


বজ্রপাত। এ বছর গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুমে সিলেটে বেশি বজ্রপাত হওয়ার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদ ও বিশ্লেষকরা। এ আশঙ্কা সত্যি করে সিলেট বিভাগে গত কয়েক দিনে একরে পর একের এক বজ্রপাত কাড়ছে তাজা প্রাণ। গত দুই দিনে এ বিভাগে বজ্রপাতে মারা গেছেন ছয় জন।


৬ মে : সিলেট 


কানাইঘাটে মাঠে গরু চরাতে গিয়ে বজ্রপাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে উপজেলার ৩নং দীঘিরপার পূর্ব ইউনিয়নে এ মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে।  বজ্রপাতে নিহত ব্যক্তি  উপজেলার দর্পনগর পশ্চিম করচটি গ্রামের রফিকুল হকের পুত্র ওমান প্রবাসী মোহাম্মদ মাহতাব  উদ্দিন উরফে মাতাই। 

স্থানীয়রা জানান, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিহত মাহতাব উদ্দিন সুরমা নদী তীরবর্তী  মাঠে গরু চরাতে যান। একপর্যায়ে হঠাৎ বজ্রপাত হলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। 
 
হবিগঞ্জ :


হবিগঞ্জের বাহুবলে বজ্রপাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকালে হবিগঞ্জে দানিছ মিয়া (৫৫) নামে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে।


নিহত দানিছ মিয়া সাতপাড়িয়া গ্রামের রহিম উল্লাহর ছেলে।


জানা যায়, বাহুবল উপজেলার সাতপাড়িয়া গ্রামে বাড়ির পাশের জমি থেকে গরু আনতে গিয়ে বজ্রাঘাতে দানিছ মিয়া নামে (৫৫) মৃত্যু হয়। দানিছ উপজেলার চলিতাতলা মাদরাসার শিক্ষক।


মৌলভীবাজার :

কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে বজ্রপাতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় নিজ বাড়ির পাশে মাছ ধরতে গেলে বজ্রপাতে মারা যায়।
 

স্থানীয়রা জানান, সকাল থেকেও বৃষ্টির সাথে সাথে বজ্রপাত শুরু হয় এসময়ে ছনোয়ার মিয়ার ছেলে সমুজ মিয়া (৩০) জমির সাথে ছড়ায় মাছ ধরতে গেলে আকস্মিক বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই সমুজ মিয়া মারা যান। সে সদ্য বিবাহিত। তাঁর অকাল মৃত্যুতে পরিবারে শোকের ছায়া নেমে আসে।

 

৫ মে : সিলেট 

 সিলেটের গোয়াইনঘাটে বজ্রপাতে করম আলী (৬৭) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ব্যক্তি উপজেলার ছৈলাখেল এলাকার মৃত আফসর উদ্দিন মোল্লার ছেলে। রবিবার দুপুরে উপজেলার ছৈলাখেল গ্রামে বাড়ির পাশেই খোলা ময়দানে পালিত গরু আনতে গিয়ে এই ঘটনা ঘটে। 
 

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রবিবার দুপুরে  বৃষ্টির মধ্যে বাড়ির পাশে একটি খোলা ময়দানে করম আলী পালিত গরু আনতে যান। এসময় হঠাৎ করে আকস্মিক বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।


মৌলভীবাজার :

মৌলভীবাজারের সদর উপজেলায় বজ্রপাতে আব্দুল হাই নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। রবিবার বিকালে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার আপার কাগাবালা ইউনিয়নের পুদিনাপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 


আপার কাগাবালা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইমন মোস্তফা জানান, কৃষক আব্দুল হাই হাওড়ে ধান কাটছিলেন। এ সময় কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে বজ্রবৃষ্টি শুরু হয়। বজ্রপাতের আঘাতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

 
হবিগঞ্জ :

হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে বজ্রপাতে হালিমা খাতুন (৪৪) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার সাটিয়াজুড়ি ইউনিয়নের দারাগাও গ্রামের নজরুল ইসলামের স্ত্রী। রবিবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়ির উঠানে বজ্রাঘাতে তার মৃত্যু হয়। 

পুলিশ সূত্র জানায়, রবিবার বিকেল থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে ঝড়ো হাওয়াসহ বজ্রপাত শুরু হয়। হালিমা খাতুন নামের ওই নারী তার বাড়ির উঠানে কাজ করছিলেন। হঠাৎ করে তার উপর বজ্রপাত হলে তিনি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যান।


পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।


উল্লেখ্য, আবহাওয়াবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার তাপ বেশি হওয়ার কারণে বজ্রপাত বেশি হবে। আর একই সঙ্গে বর্ষাকালের দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ার কারণে বজ্রপাতের পরিমাণ বেশি হবে। অন্যদিকে বজ্র প্রতিরোধ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা এবং অসচেতনতার কারণে মৃত্যুও বেশি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
 

ডিজাস্টার ফোরাম বলছে, বালাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যু এড়াতে আগাম সতর্কতা এবং আবহাওয়া বার্তা খুব জরুরি।
 

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম পিয়ার-রিভিউ জার্নাল হেলিয়ন-এ ‘বাংলাদেশে বজ্রপাত পরিস্থিতির ওপর জিআইএস (জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম)-ভিত্তিক স্থানিক বিশ্লেষণ’ প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বেশিরভাগ প্রাণহানি বর্ষা পূর্ববর্তী মৌসুম এবং বর্ষা ঋতুতে ঘটে, যার মধ্যে উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল ( সিলেট) সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে আবহাওয়ার ধরণ ও বৈশিষ্ট্য ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে। যার ফলে দীর্ঘস্থায়ী তাপপ্রবাহ, শৈত্যপ্রবাহ এবং ঋতু পরিবর্তনের মতো ঘটনা ঘটছে। এ কারণেই বজ্রপাত বাড়ছে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম/ নোমান