সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় যুদ্ধসংক্রান্ত নানা আলোচনা ও গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। দুই দেশের মধ্যে সংঘাত মানেই হলো রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সশস্ত্র লড়াই, যেখানে ব্যবহৃত হয় সৈন্য, অস্ত্র, ট্যাংক, যুদ্ধবিমানসহ নানা সামরিক উপকরণ। সাধারণত এই ধরনের যুদ্ধ সংঘটিত হয় ভূখণ্ড, সীমান্ত, ক্ষমতা বা রাজনৈতিক বিরোধকে কেন্দ্র করে।


একটি যুদ্ধ শুরু করা যত সহজ, তা থেকে বেরিয়ে আসা ততটাই কঠিন।কারণ যুদ্ধের সূচনা হতে পারে মাত্র কিছু রাগ বা বিরোধ থেকে কিন্তু একবার যুদ্ধ শুরু হলে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।এতে প্রাণহানি ঘটে, ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়, অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় এবং সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়ে। শুধু সংশ্লিষ্ট দুই দেশ নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপরও পড়ে এই যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব।
 


বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব হবে সরাসরি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে ৬২৭.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে এবং ভারত থেকে আমদানি করেছে ১১.৩২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। অন্যদিকে, পাকিস্তানে রপ্তানি হয়েছে ৬১.৯৮ মিলিয়ন ডলারের পণ্য এবং ভারতে ১.৫৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বড় ধরনের যুদ্ধ হলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও বড় ধাক্কা লাগবে। শুধু তাই নয়, দেখা দিতে পারে খাদ্য সংকট,বাড়বে সীমান্ত অঞ্চলে নিরাপত্তা ঝুঁকি।
 

দুঃখজনকভাবে,আমাদের দেশের অনেকেই না বুঝেই একপাক্ষিক সমর্থন দিচ্ছেন বা যুদ্ধ দেখার একধরনের অদ্ভুত উত্তেজনায় উদ্বেলিত হচ্ছেন। কেউ কেউ আবার কারো ধ্বংস কামনা করছেন, যা মানবতার পরিপন্থী। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী,অন্যের ক্ষতি বা ধ্বংস কামনা করা গুনাহর কাজ এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি ডেকে আনে।যারা যুদ্ধ চায়,তারা মূলত মানবতার শত্রু।যুদ্ধ কখনো সমাধান নয়, বরং এটি নতুন সংকটের জন্ম দেয়। যদি অতি উৎসাহী কোনো পক্ষের কারণে বাংলাদেশ এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে, তবে তা হবে আমাদের জন্য চরম বিপর্যয়।এতে আমরা হারাতে পারি আমাদের সার্বভৌমত্ব,সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো সুযোগ নিতে পারে আমাদের দুর্বলতাকে পুঁজি করে এবং দেশটি হয়ে উঠতে পারে অস্থিতিশীল।

অতএব,যুদ্ধ নয় আমাদের উচিত শান্তির পথে এগিয়ে যাওয়া।বাংলাদেশ একটি নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ অবস্থান থেকে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানাক যেন তারা এই যুদ্ধ থামাতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেন।শান্তিই হোক আমাদের পথ,মানবতা হোক আমাদের অঙ্গীকার।

 

 

লেখক: আরিফ রশিদ (শিক্ষার্থী), আইন ও বিচার বিভাগ, মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি, সিলেট।