এক বছর আগে সিলেট নগরীর হকারদের পুনর্বাসনে উদ্যোগ নিয়েছিল সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)। হকারদের নেওয়া হয় নগরভবনের পেছনে লালদীঘি পাড় মাঠে। কিন্তু সম্প্রতি এ মাঠ থেকে ওঠে এসে আবারও নগরীর রাস্তা-ফুটপাত দখল করেছেন হকাররা।

গত বেশ কয়েকদিন ধরে দেখা যাচ্ছে- ভ্রাম্যমাণ এসব হকার আবার দখল করে নিয়েছেন নগরীর ফুটপাতগুলো। লালদীঘি পাড় মাঠে পড়ে আছে ভাঙাচোরা কিছু খুপড়ি ঘর। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে উদাসীন সিসিক ও এসএমপি।


সিলেট নগরীর বন্দরবাজার-জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা রাস্তাটি সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়ক। দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এই গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম সড়কের দুপাশেই পুরো ফুটপাত দখল করে গত কয়েকদিন থেকে পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা। এমনকি সড়কের অর্ধেক পর্যন্ত দখল করে রাখেন হকাররা। ফলে রাত-দিন ওই সড়কে দেখা দেয় দীর্ঘ যানজট। দুর্ভোগ পোহাতে হয় সড়কের যাত্রী ও পথচারীদের। বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করা হলেও তাতে মিলছে না স্থায়ী সমাধান।

এছাড়াও সড়কটিতে রয়েছে অবৈধ গাড়ি পার্কিং। বার বার অভিযান চালিয়েও এ রাস্তার পাশে গাড়ি রাখা থামাতে পারছে না সিসিক ও পুলিশ।

জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বরে হকারদের স্থায়ী পুনর্বাসনের জন্য সিসিক ও এসএমপি যৌথভাবে কাজ শুরু করে। প্রাথমিকভাবে লালদীঘি পাড় খালি মাঠে ১২ শ হকার পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ বছরের শুরুতে ১ হাজার ৭০ জন হকার ওই মাঠে ঘর বরাদ্দ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। এতে প্রাধান্য পান বন্দরবাজার-চৌহাট্টা সড়কের হকাররা। এ প্রকল্পে সিসিকের ব্যয় হয় প্রায় অর্ধকোটি টাকা।

হকারদের নাম তালিকাভুক্ত করে বাঁশ দিয়ে দোকান বানিয়ে দেওয়া হয়। প্রথমদিকে লোকজন সেখানে কম গেলেও ধীরে ধীরে জমে ওঠে লালদীঘি পাড়ের মাঠের মার্কেটটি। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে বাজারটি পরিচিতি পেতে শুরু করে। এভাবেই চলে বেশ কয়েক মাস। কিন্তু গত মাসখানেক ধরে মাঠে নেই প্রায় ৮০ ভাগ হকার। তারা ফের উঠে এসেছেন বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার ও চৌহাট্টার সড়ক-ফুটপাতে।

এদিকে, গত কয়েক দিন নগরীতে বেড়েছে যানজট। এর প্রধান কারণ হচ্ছে- ব্যস্ততম বন্দরবাজার ও জিন্দাবাজার সড়কের দু'পাশ হকারদের দখলে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নগরভবনের প্রধান ফটকের সামনের ফুটপাত থাকে তালা-চাবি মেরামতকারী ও চশমা ব্যবসায়ীদের দখলে। আর রাতে চলে যায় ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতাদের দখলে। ফলে মানুষ চলাচলে কষ্ট তো হয়-ই, তৈরি হয় তীব্র যানজট। যা থাকে মধ্যরাত পর্যন্ত।

কুদরত উল্লাহ মার্কেট ও জিন্দাবাজারের প্রতিটি দোকানের সামনে অস্থায়ীভাবে পসরা সাজিয়ে বসেন হকাররা। এছাড়া আদালত পাড়া, জেলা প্রশাসকের বাসভবনের ফটক, পুলিশ সুপার কার্যালয়, বন্দরবাজার ফাঁড়ি, জেলা পরিষদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনের ফুটপাত ও সড়ক রাতদিন থাকে হকারদের দখলে। এ পরিস্থিতিতে সচেতন নগরবাসীর মন্তব্য- লালদীঘি পাড় মাঠে হকার ধরে রাখতে রীতিমতো ব্যর্থ সিসিক ও পুলিশ।

তবে এ ব্যাপারে হকারদের বক্তব্য হচ্ছে- ওই মাঠের দোকানগুলো বাঁশ আর পলিথিন দিয়ে মোড়ানো থাকায় সেখানে লোকজন যায় না। ফলে মাসে পর মাস লোকসানে থাকতে হয় হকারদের। যে কারণে সেখানে তারা থাকতে চান না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সিলেট মহানগর উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদের ফোন কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। তবে এসএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) বি এম আশরাফ উল্যাহ তাহের সিলেটভিউ-কে বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ট্রাফিক বিভাগকে এ বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বুধবার (৮ ডিসেম্বর) বিকিলে মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি বর্তমানে ঢাকায়। সিলেটে ফিরেই অভিযানে নামবো।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম