উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশনে যাওয়া সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে না খেয়ে ৯ ঘণ্টা পার করেছেন।  

উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছেন তারা। রাত ১ টা ৪০ মিনিটে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অনশনকারী কেউই কোনো খাবার গ্রহণ করেননি। এমন কি দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সমাধানও আসেনি।


গতকাল মঙ্গলবার সারা দিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে এক দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে পদত্যাগের জন্য বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুর ১২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন। এর মধ্যে পদত্যাগ না করলে আমরণ অনশন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
 
সমাধানকল্পে শাবির বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা এসেছিলেন অনশনকারী শিক্ষার্থীদের বোঝাতে। কিন্তু কোনো কিছুতেই কর্ণপাত করেননি আন্দোলনকারীরা। স্লোগান বদলে এখন একটি স্লোগান দিচ্ছেন তারা। ইয়েস অর নো!  ইয়েস অর নো। মূলত এ স্লোগানের মাধ্যমে ভিসিকে গদি ছাড়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

এদিকে মূল গেইট থেকে বেশ ভেতরে ভিসির বাসভবন। সেই মূল গেইট থেকে শিক্ষকদের জন্য আসা মাইকসহ রিকশা ফেরত পাঠিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তারা শিক্ষকদের কথা শুনতে রাজি নন। সময় বাড়ার সাথে ভিসি পদত্যাগ আন্দোলন আরো তীব্র হচ্ছে। ভিসির বাসভবনের সামনে বেড়ে গেছে শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও।

সূত্র মতে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ‘অযৌক্তিক’ কিছু সিদ্ধান্তে আগে থেকেই শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ ছিলেন। করোনায় দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর গত বছরের ২ নভেম্বর ক্লাস শুরু হয়। এর আগে পাঁচটি হলও খুলে দেওয়া হয়েছিল। ক্যাম্পাস খোলার পর কর্তৃপক্ষের কিছু সিদ্ধান্তে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হন। পরে ছাত্রীদের তিন দফা দাবির আন্দোলনে প্রথমে ছাত্রলীগ এবং পরে পুলিশের হামলায় সেই ক্ষোভ আরও বেড়ে যায়।

মূলত তৃতীয় বর্ষের ছাত্রীরা হলে থাকার সুযোগ পান। এর আগে কেউ চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের দুটি হলের অধীনে ভাড়ায় নেওয়া চারটি বহুতল মেসে ব্যক্তিগত খরচে থাকতে পারেন। ওই মেসে থাকতে ছাত্রীদের প্রচুর ব্যয় হয়। করোনা পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এসব মেসে ছাত্রীরা থাকেননি; কিন্তু এরপরও পুরো অর্থ পরিশোধ করতে হয় ছাত্রীদের। যদিও বাকি পড়া ভাড়াসহ বিভিন্ন খরচ কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু ছাত্রীদের অভিযোগ, প্রভোস্ট  জাফরিন আহমেদ লিজা তাঁর অধীনে থাকা দুটো মেসের জমে থাকা টাকা ছাত্রীদের এককালীন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেন। এতে একেকজন শিক্ষার্থীকে কমবেশি ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। এ ছাড়া সিরাজুন্নেসা হলে ইন্টারনেটের ধীরগতি, খাওয়ার পানি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সংকটসহ নানা ধরনের সমস্যায় ক্ষুব্ধ ছিলেন ছাত্রীরা।

এ ছাড়া একাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, গত ২ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে থাকা ১৫ থেকে ২০টি টংদোকান চালুর অনুমতি দেয়নি কর্তৃপক্ষ। এতে শিক্ষার্থীদের খাবারের সমস্যা হচ্ছিল। বারবার অভিযোগ করেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এর সমাধানে তাৎক্ষণিক কোনো উদ্যোগ নেয়নি। যদিও প্রশাসন বারবার শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়ে বলেছে, দৃষ্টিনন্দন ও আধুনিক সুবিধাসংবলিত ফুডকোর্ট জোন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা হয়নি।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/শামীম/শিপু-১৪