আসছে মুসলমানদের পবিত্র মাস রামাদ্বান। আমাদের দেশের কয়েকটি অঞ্চলে রামাদ্বান মাসে মেয়েদের শশুড়বাড়ীতে ইফতারী দেওয়ার প্রচলন রয়েছে। এনিয়ে বিরাট প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এনিয়ে অনেক মেয়েদের শশুরবাড়ী থেকে চাপ দেওয়া হয়। তাদের দাবী অনুযায়ী দিতে না পারলে অনেক কটু কথা শুনতে হয় মেয়েকে। অনেকের সামর্থ থাকা না সত্ত্বেও মেয়েদের সুখের জন্য মেয়েদের শশুরবাড়ীর দাবী পুরণ করা হয় অনেক কষ্ট করে। রামাদ্বানে শশুরবাড়ী থেকে ইফতারী না বলার সামাজিক উদ্যোগ নেয়া হোক। অনেকের শশুরবাড়ী হয়ত অনেক পয়সাওয়ালা। তাদের জন্য হয়তো এসব কিছু না। কিন্তু এই কুসংস্কার আমাদের এমন বর্বর বানিয়েছে যে, অনেক পরিবারকে মেয়ের বাড়ীতে ইফতারী পাঠানোর জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে দেখা যায়। কাতর হয়ে বলতে শুনা যায়, মেয়ের বাড়ীতে ইফতারী না পাঠালে মেয়ে শশুরবাড়ীতে থাকতে পারবেনা। শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার সইতে হবে মেয়েটিকে। ইফতারীর ক্ষেত্রে আরেকটি আরেকটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা হচ্ছে, ইফতারী কি দিয়ে নিয়ে যাবেন। মাইক্রো ভাড়া করবেন? না পিকআপ ভ্যান ভরে নিয়ে যাবেন? যত বড় পরিবহন ব্যবহার করা হবে, বিয়াই বাড়ীর এলাকায় তাদের মুখ ততো বেশী উজ্জ্বল হবে। এসব অসুস্থ মানসিকতা।

যেহেতু অনেকাংশে ছেলে পক্ষের চাহিদাই মেয়ে পক্ষকে এসব করতে বাধ্য করে, তাই এসব বন্ধের উদ্যোগ ছেলে পক্ষকেই আগে নিতে হবে৷ ছেলে পক্ষ থেকে মেয়ে পক্ষকে জানিয়ে দিতে হবে, “ইফতারীর এই সংস্কৃতি ঠিক না৷ এটি একটি কুসংস্কার৷ সামাজিক অনাচার৷ আপনাদের হয়ত দেয়ার মতো সচ্ছলতা আছে৷ কিন্তু এখানে সচ্ছলতা থাকা না থাকার প্রশ্ন না; এই যুলুমবান্ধব সংস্কৃতি বন্ধের লক্ষেই আমরা ইফতারি খাবো না৷ একদিন আপনারা এমনিতেই চলে আসবেন৷ সকলে মিলে ঘরোয়াভাবে ইফতার করে নিবো৷”


সামাজিক প্রথার নামে এই জোরপুর্বক ইফতার আদানপ্রদান বন্ধ হউক। একজন দরিদ্র বাবা কষ্ট করে তার মেয়েকে বড় করলো, আবার বিয়ের জন্য মোটা অংকের টাকা বায়না মিটিয়ে, আসবাবপত্র দিয়ে ও অনেক অতিথিকে রসালো খাবার খাইয়ে বিয়ে দিতে হয়। আবার এই দরিদ্র বাবা দারদেনা করে রমজান মাসে বড় পক্ষের চাহিদা মতো ইফতার দিতে হয় । কিন্তু দরিদ্র বাবার হাতে টাকা নেই তাই এখন সুদের বিনিময়ে টাকা এনে আবারো চাহিদা মতো ইফতারী দিতে হয়। কিন্তু সারাটা বছর জুড়ে সুদের ঘানী টানতে হয়। এই কুসুংস্কার বন্ধ করা হউক না হলে অসংখ্য দরিদ্র বাবারা কষ্টে নীল হয়ে যাবে।

সমাজের সব শ্রেণী পেশার মানুষের উপর জেঁকে বসা এই কঠিন সামাজিক অনাচার বন্ধে এভাবেই উদ্যোগ নিতে হবে৷ সর্বত্র সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে৷ আজও মেয়ে জন্ম নিলে এক শ্রেণীর পিতা-মাতার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায় এসব কারণেই৷

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষিত সৌভাগ্যের বার্তাবাহী মেয়ে জাতিকে অন্ধকার যুগের অভিশাপের লিস্ট থেকে নিষ্কৃতি দিতে সকলেরই এগিয়ে আসা উচিত৷

লেখকঃ চাকুরীজীবি, সিলেট।