মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীনের একজন বড় ও মর্যাদাশীল রাসূল হচ্ছেন হযরত ইব্রাহীম (আঃ)। তিনি আরও অনেক বড় বড় নবী (আঃ) এর পূর্বপুরুষ। তাঁর জন্ম হয়েছিলব্যাবিলনে (বর্তমান ইরাকের অন্তর্ভূক্ত একটি এলাকা) আজ থেকে প্রায় ৪০০০ বছর পূর্বে।

তাঁকে ইহুদীরাও মানে, খ্রীষ্টানরাও মানে, আর, সুবহানাল্লাহ্, আমরা মুসলিমরা তো মানি-ই। ক্বোরআনে বর্ণিত ২৫ জন আম্বিয়া (আঃ) এর মধ্যে তিনি তো আছেন-ই। মহা-কিতাব কালামুল্লাহ শরীফে ৫ জন নবী (আঃ) এর নাম বিশেষভাবে বার বার এসেছে। তাঁরা হলেনঃ হযরত নূহ (আঃ), হযরত ইব্রাহীম (আঃ), হযরত মূসা (আঃ), হযরত ঈ’সা (আঃ) ও হযরত মোহাম্মাদুররাসূলুল্লাহ (সাঃ। পবিত্র ক্বোরআনে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর নাম এসেছে মোট ৬৯ বার।


আমাদের মুফাস্সীরে ক্বোরআনের অনেকের মতে, হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ১৬৯ বছর বেঁচেছিলেন। আবার অনেকে বলেছেন১৭৫ বছর, আবার অনেকে মতামত দিয়েছেন-১৯৫ বছর। মতামত যত-ই এসে থাকুক, অন্ততঃ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) যে কমপক্ষে ১৫০/১৬০ বছর এ পৃথিবীতে বেঁচেছিলেন, তা অবশ্যই সঠিক হবে, যেহেতু ১৫০ বছরের নিচে কেউ বলেননি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লার পক্ষ থেকে আমাদের নবীজির পরেসব চাইতে বেশি এবং কঠিন কঠিন পরীক্ষা এসেছে হযরত ইব্রাহীম খলীলুল্লাহর উপর। তাই, তাঁর শানে মহান রাব্বুল আ’লামীনক্বোরআনে পাকের সূরাহ্ আন-নাজমের ৩৭ নম্বরের ছোট্ট আয়াতটিতে এরশাদ করছেনঃ“ওয়া ইব্রাহীমাল্লাযী ওয়াফ্ফা…”, অর্থাৎ - “আল্লাহ তা’লা যা যা করতে হুকুম করেছেন, ইব্রাহীম তার সবগুলোই পূর্ণাঙ্গরূপে পালন করেছেন”, আমরা সকলে বলি – ‘আলহামদুলিল্লাহ্’। আর সবাই মিলে এক সাথে দোয়া করিঃ আমরা কমজোর মুসলমানগুলোকেওআল্লাহ যেন তাঁর যাবতীয় হুকুম-আহকামসঠিকভাবে পালন করার তৌফীক দান করেন, আমীন।

হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর পিতার নাম ছিল আযর, আর তাঁর দাদার নাম ছিল নাহুর। পিতা ছিলেন একজন বিখ্যাত ও নামকরা ভাষ্কর (স্কাপ্টর)। তিনি পাথর এবং কাট দিয়ে বিভিন্ন মূর্তি বানাতেন এবং ওগুলো বাজারে নিয়ে বিক্রি করতেন। ঐ যুগে মূর্তি-আরাধনা ছাড়াও মানুষ গ্রহ, তারা, চাঁদ, সূর্য্য ইত্যাদিরও উপাসনা করত। অনেকে আবার উপাসনা করত ঐ সময়কার রাজা-বাদশাহ ও রাণীদের। আল্লাহ সুবহানাহূ ওয়া তা’লা ইব্রাহীম (আঃ)কে আসমানি জ্ঞান-ই’লিম দান করেছিলেন তাঁর ছোটবেলা থেকেই। আল্লাহ তাঁর কালাম শরীফে এরশাদ ফরমিয়েছেন, সূরাহতুল “আম্বিয়াতে” (২১: ৫১ – ) “আর আমি ইহারও পূর্বে ইব্রাহীমকে তাঁহার মর্যাদা অনুযায়ী সুবুদ্ধি দান করিয়াছিলাম, এবং আমি তাঁহাকে ভালভাবে জানিতাম। আমি আল্লাহ এ-ওঅবগত ছিলাম যে, ইব্রাহীমের অটল বিশ্বাস/ঈমান ছিল এক আল্লাহর একত্ববাদের উপর”।

ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর শৈশবকাল থেকেই দেখতেন, তাঁর পিতা সুন্দর সুন্দর মূর্তি বানান। একদিন পিতাকে জিজ্ঞেস করে জানলেন – এগুলো তাদের খোদা বা উপাস্য। কিন্তু, তাঁর মাথায় ধরে না, কিভাবে মানুষের হাতে বানানো ঐ মূর্তিসমূহ আবার মনুষেরই উপাস্য হতে পারে? তাই, পিতার ধারণা খণ্ডন করে তৎক্ষনাথ তিনি ওখান থেকে বেরিয়ে যান। পরবর্তীতে,যখন ইব্রাহীম (আঃ) তাঁর পিতা ও সম্প্রদায়কে বলিলেন,“এই ভাষ্কর বা মূর্তিগুলো কি, তোমরা যাহাদের ভক্ত ও অনুরক্ত রহিয়াছ”? তাহারা বলিতে লাগিল, “আমরা আমাদের পিতৃ-পুরুষদেরকে ইহাদের উপাসনা করিতে দেখিয়াছি”। ইব্রাহীম (আঃ) বলিলেন, “নিঃসন্দেহে তোমরা এবং তোমাদের পিতৃ-পুরুষগণস্পষ্ট ভ্রমের/ভুলের মধ্যে রহিয়াছ”। তাহারা বলিল, “তুমি কি আমাদের সম্মুখে সত্য কথা উপস্থিৎ করিতেছ, নাকি খেল-তামাশা করিতেছ”? ইব্রাহীম (আঃ) বলিলেন, “না, অবশ্যই না,আমাদের রব্ব তিনিই, যিনি আসমানসমূহ ও জমিনের রব্ব, যিনি সেই সমুদয়কে সৃষ্টি করিয়াছেন, এবং আমার নিকট উহার প্রমানও রহিয়াছে”।

ইব্রাহীম (আঃ) এর পিতা-পরিবার,ও তাদের ক্বওম ইরাকের বাবেল শহর ও অন্যান্য আশ-পাশ অঞ্চলে বসবাস করিতেন। তাদের বাদশাহ ছিলেন নমরূদ, এক প্রতাপশালী বাদশাহ। এই ক্ষমতাধর বাদশাহের সাথে যুক্তি-তর্কে দাঁড়াতে পারাও নবী হিসেবে ইব্রাহীম (আঃ) এর একটি মু’জেযাহ। বাদশাহ নমরূদ ইব্রাহীম (আঃ) এর ব্যাপারে উল্টা-পাল্টা কথা শুনতে শুনতেএকদিন তাঁকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার প্রতিপালক কে”? উত্তরে ইব্রহীম (আঃ) বললেন, “আমার প্রতিপালক সেই মহান সত্তা, যিনি জন্ম ও মৃত্যু দান করেন”। বাদশাহ বললেন, “জন্ম-মৃত্যু আমিও তো দান করি”। “কী ভাবে”? “তুমি কি সত্যিই দেখতে চাও? তা হলে দাঁড়াও, এক্ষুনি আমি তোমাকে দেখাচ্ছি”।

এই বলে নমরূদ তার সেনাদের দ্বরা কারাগার থেকে দু’জন কয়েদিকে আনালেন। এ দু’জনই ছিল নমরূদেরই আদেশে মৃত্যু-দণ্ড-প্রাপ্ত আসামী। সকলের সম্মুখে নমরূদ একজনকে ছেড়ে দিলেন; আর, অপরজনকে হত্যা করলেন, এবং ইবাহীমকে বললেন, “চাক্ষুষই তো দেখলে, আমিও জীবন-মৃত্যু দিতে পারি”। ইব্রাহীমের বুঝতে বাকি রইল না যে, নমরূদ আসলেই একজন মোটা-মাথা-সম্পন্ন ব্যক্তি। তাই এবার তিনি তাকে বললেন, “আমার রব্ব প্রতিদিন পূর্বদিকথেকে সূর্য্য উঠান, আপনি পশ্চিম দিক থেকে উঠিয়ে দেখান তো”? আর, এতেই নমরূদ বিব্রত, কিংকর্ত্যব্যবিমুড় ও হতভম্ব হইয়া গেলেন। আল-ক্বোরআনে এর বিশদ বর্ণনা এসেছে। ইব্রাহীমের প্রতি তার রাগ আরও বাড়িয়া গেল।

কোন এক উপলক্ষে ক্বওমের সকল লোকদেরকেহ কেহ বলিতে লাগিল, আমরা ইব্রাহীম নামক জনৈক যুবককে আমাদের উপাস্যগণের বিরুদ্ধে মন্দ আলোচনা করিতে শুনিয়াছি। তাহাকে সকলের সমক্ষে আনিয়া হাজির কর। ইব্রাহীম (আঃ)কে আনিয়া হাজির করা হইল।তাহারা বলিতে লাগিল, “উহাকে (ইব্রাহীমকে) আগুনে জ্বালাইয়া দাও”। এই সিদ্ধান্তের পর নমরূদ অগ্ণিকুণ্ড প্রস্তুত করিতে নির্দেশ দিলেন। পূর্ণ একমাসের পরিশ্রমে হাজারো শ্রমিক মিলে মাটির নিচে ৬০গজ (১২০ হাত)খুদিত অগ্ণিকুণ্ডেউচুঁ লাক্ড়ি স্তূপিকৃত করা হইল এবং উহাতে প্রচুর তেল ঢালিয়া আগুন ধরানো হইল । অতঃপর চড়ক দ্বারা দূর হইতে ইব্রাহীম (আঃ) কে অগ্ণিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হইল।

এমূহুর্তে মহান আল্লাহর তরফ থেকে আগুনের প্রতি আদেশ আসিল- “হে আগুণ! তুমি ইব্রাহীমের প্রতি শীতল ও নিরাপদ হইয়া যাও”, অর্থাৎ তোর দহন-শক্তি রহিত থাক, যেন ইব্রাহীম দগ্ধ না হয়, এবং এমন ক্ষতিকর ঠাণ্ডাও হবি না, যাতে ইব্রাহীমঅতিরিক্ত ঠাণ্ডার কারণে শীতল হয়ে কষ্ট পেতে পারে, বরং, তুই মধ্যম প্রকারের স্নিগ্ধ বায়ু হইয়া যা(অর্থাৎ আজকের এ্যয়ারকন্ডিশণ্ড (*নোট=আল্লাহর “বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি” কতই না আধুনিক ও প্রগতিশীল!), যাহাতে অবিশ্বাসীদের ইব্রাহীমের অনিষ্ট করার অসৎ-উদ্দেশ্য পুরণ না হয়।”এভাবে আমি অবিশ্বাসীদেরকে অকৃতকার্য করিয়া দিলাম” (সূরাহ্ – আম্বিয়া, আয়াতঃ ৭০)।

ইব্রাহীমের বন্ধন-রজ্জু সব পুড়িয় ভস্ম হইয়া গেল। নমরূদের অগ্নিকুণ্ড ইব্রাহীমের জন্য পুষ্পোদ্যানে পরিণত হইল।তিনি তথায় আরামে বসিয়া রহিলেন। আল্লাহ পাকের বেঁধে দেয়া নির্দিষ্ট দিনে তিনি সেখান হইতে উঠিয়া উজ্জ্বল হইতে উজ্জ্বলতর চেহারায় ভূ-পৃষ্টে হাঁটিয়া চলিলেন। তাঁকে সম্পূর্ণ সুস্থাবস্থায় দেখিয়া অবিশ্বাসীগণ সকলে হতভম্ব হইয়া গেল। ইব্রাহীমকে পুরো সুস্থাবস্থায়দেখিতে পাইয়া নমরূদ শতভাগ বিচলিত হইলেন বটে, কিন্তু তিনিএখানেই থেমে যাবার মত বাদশাহ ছিলেন না। এবার তিনি প্রমান দেখাতে চাইলেন যে, তিনি গোটা পৃথিবীর বাদশাহ ও তাঁর সমকক্ষ কেউই নেই, এমন কি, তিনি মহাকাশেরও একচ্ছত্র অধিপতি।তাই, এবার তিনি ইব্রাহীমের খোদার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ও আরও জোরালো অবস্থান নিলেন।

উদ্দেশ্য সফলে এবার প্রথমেই তিনি তার প্রভাব-প্রতিপত্তি, খ্যাতি-যশ ও মহা-শক্তি (তার নিজ ধারণায়) প্রদর্শনের জন্য এক মহড়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। সে অনুযায়ী তিনি মিশর ও আশ-পাশের বিভিন্নঅঞ্চলের বা রাজ্যের ৪২ জনরাজাকে তার বিশাল সভাকক্ষে (ধরে নিতে পারি, বর্তমান যুগের সংসদভবন) আমণ্ত্রন জানালেন। পূর্ব থেকেই এ সভাকক্ষটির নাম ছিল “ফেরাওহ” বা “ফেরাউন”। এত সংখ্যক রাজা ও তাদের সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে ঐ মহড়া-সভা করার পর প্রমানিত হয়ে গেল যে, তিনি সত্যিই সকল রাজাদেরও রাজা (যেমনঃ ইংরেজি সাহিত্যে ইংল্যাণ্ডের উইলিয়াম শেক্সপিওর-কেও আমরা বলি “কিং অব দ্য কিংস অব ইংল্যাণ্ড।

নমরূদের সময়কার বা তারও পূর্বের সময়কার বৈশ্বিক বাস্তবতা ছিলঃ এক এক দেশ অনেকগুলো ছোট্ট ছোট্ট রাজ্যে বিভক্ত থাকত, থাকতেন অনেক রাজা, অনেক রাণী, অনেক রাজপুত্র ও রাজকন্যা। খৃষ্টপূর্ব ৮০০ শতাব্দীতে গ্রীক অন্ধ-চারনকবি হোমার রচনা করেছিলেন দু’টো মহাকাব্যঃ দ্য ঈলিয়াড, ও, দ্য ওডীসি। সেখানে দেখানো হয়েছেঃ ১১৯৪ খৃষ্টপূর্ব থেকে ১১৮৪ খৃষ্টপূর্ব পর্যন্ত একটানা দীর্ঘ ১০ বছর চলেছিল ট্রোয়ের যুদ্ধ এবং তার একমাত্র কারণ ছিলেন একজন সুন্দরী গ্রীক নারী, যার নাম ছিল ‘হেলেন’। এই এক হেলেনকে বিয়ে করার জন্যপ্রস্তাব দিয়েছিলেন ২৭টিদেশের ২৭ জন রাজপুত্র। এখন আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি ঐ যুগে পৃথিবীতে কত রাজা-বাদশাহ ছিলেন। এ সকলের মধ্যে নমরূদ ছিলেন তার সময়কার শুধু মিশরের এক রাজ্যেরএকজন-মাত্র বাদশাহ। সত্যিকারের ইতিহাস কখনো বলবে না যে, তিনি গোটা বিশ্বের রাজা ছিলেন (এটা হতে পারে তার নিজ ধারনায়)। আর, হয়ে থাকবেন-ই বা কী করে, যেখানে ছিল না কোন যোগাযোগ-ব্যবস্থা বা যোগযোগের কোন মাধ্যম? অতএব, নমরূদ গোটা বিশ্বের বাদশাহ ছিলেন, যা আমরা এতদিন থেকে শুনে আসছি, তা কোন অবস্থায়ই সত্যি নয়। তবে তিনি যে অতি পরাক্রমশালী ও ক্ষমতাধর বাদশাহ ছিলেন, এটা অনস্বীকার্য।আর, এ রকম উদাহরণ আজকের পৃথিবীতেও যে আছে, তা অস্বীকার করারও উপায় নেই।

নমরূদের আকাশ-ছোঁয়া পাথর-নির্মিত বাবিল টাওয়ারের কাজ
চলছে। বানানোর উদ্দেশ্য ছিলঃ তিনি চুড়ান্ত উঁচুতে উঠিয়া
ইব্রাহীমের আল্লাহকে হত্যার নিমিত্তে তীর ছুঁড়িবেন।
এখন তিনি পাথর-মিস্ত্রীদের কাজতদারকি করছেন।

তবে এত উঁচু অট্টলিকার চুড়ায় আরোহন করিয়া এবং অজস্র তীর নিক্ষেপ করিয়াও নমরূদ আল্লাহকে হত্যার কোন আলামত বা প্রমান না পেয়ে তিনি হতাশই হইলেন বটে, তবে উদ্দেশ্য নিস্ফলের বা ব্যর্থতা মেনে নেবার মত বাদশাহ তিনি ছিলেন না। তাই,অবার বিজ্ঞ সংসদ ডাকলেন। এবার অভিশপ্ত শয়তান বাদশাহর একান্ত শুভাকাঙ্খি ও ঘনিষ্ট একজনের রূপ ধরিয়া তাকে অতি কার্যকর এক উপদেশ দিল। তার উপদেশ নমরূদের খুবই পছন্দ হইল। উপদেশ অনুযায়ী বিরাট আকৃতির ৪ টি শকুন ধরা হইল। এগুলোকে দীর্ঘদিন উত্তম উত্তম খাবার খাইয়ে আরও মোটা-তাজা ও শক্তিশালি করা হইল, যেন ওগুলো আমাদের আজকের হেলিকপ্টারের ৪ টি এন্জীনের কাজ করতে পারে।
ইতিমধ্যে বহুদিনের পরিশ্রমে কয়েকতলা-বিশিষ্ট লোহার একটি বিরাটকায় সিন্দুক (বলাযায়, আজকের হেলিকপ্টার, সুবহানাল্লাহ, অল্লাহর প্রযুক্তি কতই না প্রগতিশীল, কতই না আধুনিক!) নির্মান করা হইল। মাঝখানের একটি তলার চার কোনে ৪ টি শকুন উপযুক্তভাবে বাঁধা হইল যাহাতে তাহারা ফ্রীলি উড়িতে পারে। এর উপরের তলার ৪ কোনে ৪ টি বড় বড় মাংসের টুকরা বেঁধে রাখা হইল। এর আগে কয়েকদিন শকুনগুলোকে ক্ষুধার্তও রাখা হইল। তারপর নমরূদ এবং তার সেনাপতি উপরের তলায় অবস্থান নিলেন।অভূক্ত শকুনগুলো মাংসের টুকরা দেখিয়া উপরের দিকে উড়িতে লাগিল। শকুনের জোরে উড়ার কারণে সিন্দুকটি দ্রুতই আকাশের এত উপরে উঠিল যে, নিচের মাটি আর কারো দৃষ্টিগোচর হইল না, তবে তাদের কাছে আশ্চর্য লাগিল যে, তখনো আকাশ ততটুকুই দূরে দেখা যাচ্ছিল, যতটুকু দূরে ভূপৃষ্ট হইতে দেখা গিয়েছিল।তবুও এখানেই নমরূদ যথেষ্ট উঁচুতে মনে করিয়া উর্ধাকাশে তীরের পর তীর নিক্ষেপ করিতে লাগিলেন।
অপরদিকে, পরম করুনাময় আল্লাহ জিব্রাঈল ফেরেশ্তাকে বলিলেন, “আমি আমার এ বান্দাহকে নিরাশ করতে চাই না। আপনি রক্তের ব্যবস্থা করুন”। জিব্রাঈল (আঃ) জলজ, স্থলজ, আকাশি, ভূ-গর্ভস্থ যাবতীয় প্রাণীর কাছে রক্ত চাইলেন। শুধু ছোট্ট বেলে মাছ এ রক্ত দিতে রাজি হইল। জিব্রাঈল নমরূদের নিক্ষিপ্ত সকল তীরে এ রক্ত মাখিয়ে সমুদয় তীর নমরুদের সিন্দুকে ফেরত পাঠালেন। তাজা রক্ত রক্তমাখা সকল তীর দেখিয়া নমরূদ
নিশ্চিৎ ও আনন্দে আত্মহারা হইলেন যে, ইব্রাহীমের আল্লাহকে শেষপর্ন্ত তিনি হত্যা করতে সক্ষম হয়েছেন এবং তিনিই বিজয়ী হয়েছেন। এখন এব্রাহীম বাস্তব প্রমান দখিয়া বিশ্বাস করিতে বাধ্য হইবেন যে, তাঁর খোদার নিহত হওয়ার ব্যাপারে আর কোন সন্দেহ অবশিষ্ট রইল না, এবং তিনি এ-ও মানিয়া নিতে বাধ্য হইবেন যে, নমরূদই পৃথিবী ও আকাশের একচ্ছত্র ও একমাত্র অধীশ্বর।
নমরূদের এখন ভূ-পৃষ্টে অবতরনের পালা। এবার তার সিন্দুকের উপরে লটকানো ৪ টুকরা মাংস একইভাবে শকুনগুলোর নীচের তলার ৪ কোনে বেঁধে দেয়া হল, যাতে শকুনগুলো উড়ে উড়ে নীচের দিকে নামে। প্রচণ্ড আঘাতে সিন্দুকটি মাঠিতে আঁচড়ে পড়ল।

ইব্রাহীমের আল্লাহকে হত্যার জন্য সিন্দুকের উপর
থেকে উর্ধাকাশে নমরূদের তীরের পর তীর নিক্ষেপ

নমরূদের এখন ভূ-পৃষ্টে অবতরনের পালা। এবার তার সিন্দুকের উপরে লটকানো ৪ টুকরা মাংস একইভাবে শকুনগুলোর নীচের তলার ৪ কোনে বেঁধে দেয়া হল, যাতে শকুনগুলো উড়ে উড়ে নীচের দিকে নামে। প্রচণ্ড আঘাতে সিন্দুকটি মাঠিতে আঁচড়ে পড়ল।
(*নোটঃ নমরূদের এই সিন্দুক বা আকাশযানকে আজকের হেলিকপ্টার বা উড়োজাহাজের সঙ্গে তুলনা করা যায়। আর, এ কারণে মেনে নিতেই হবেঃ আল্লাহর প্রযুক্তিই আজকের প্রযুক্তির জন্ম দিয়েছে; অধিকন্তু, আল্লাহর প্রযুক্তি আরও,বা, এতই উন্নত যে, মানব-আবিষ্ক্রিত প্রযুক্তির আকাশযান অনেকটা লম্বা-লম্বিভাবে (হরাইজন্টালি) উড়ে; অথচ, পবিত্র মে’রাজের রাতে আ্ল্লাহর প্রযুক্তি (বোরাক্ব”) এক এক করে সাত আসমান ভেদ করে উড়েছিল শুধুই খাড়া বা উপরের দিকে (ভার্টিক্যালি), ইসলাম কতই না প্রগতিশীল, শাশ্বত ও চিরন্তন!)
ইব্রাহীম (আঃ) রাজবাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন বা তাঁকে ডেকে আনা হইল – যেটাই হোক, নমরূদ তার সিংহাসনের চতুর্পাশে রাখা রক্তমাখা সকল তীর ইব্রাহীমকে দেখাইয়া বলিলেন, “এখন তো, আমি নিশ্চিৎ, তোমার বলার আর কিছুই থাকতে পারে না, আমি তোমার অল্লাহকে হত্যাই করিয়াছি; অতএব, এখন আমার সম্মুখ থেকে বিদায় নিতে পার”।
কিন্তু স্বয়ং আল্লাহ-প্রেরিত রাসূল ইব্রাহীম (আঃ)এর তো বিচলিত হওয়ার কোন কারণই থাকতে পারে না। বরং উল্টো তিনি নমরূদকে বললেন, “আমার আল্লাহ সকল ভীতি ও মৃত্যুর উর্দ্ধে, বরং তিনিই এগুলো প্রদর্শন করে থাকেন, আপনি যা বলছেন, তার সবই স্রেফ কল্প-কাহিনী বই কিছুই নয়”। প্রত্যুত্তরে নমরূদ ইব্রাহীমকে বললেন, “তোমার কথাই যদি সত্য হয়, তবে এবার আমি তোমার আল্লাহর সাথে সরাসরি ও সম্মুখ-যুদ্ধে প্রস্তুত, জানিয়ে দাও তাঁকে, আমি তোমার আল্লাহকে মাত্র তিন দিনের সময় দিলাম”। প্রত্যুত্তরে ইব্রাহীম বল্লেন, “৩ দিন বা ১ দিন, কোনটাতেই আমার আল্লাহর কোন অসুবিধা নেই, অধিকন্তু, তিনি চোখের পলকে সব মূহুর্তেই প্রস্তুত। আপনি আপনার জন্যই তিন দিনের বা আরও বেশিদিনের সময় নিতে পারেন”।
৩য় দিন পেরোনো মাত্রই
ময়দানেনমরূদতারসেনাবাহিনীনিয়েঅপেক্ষাকরছিলেন,কিন্তুপ্রতিপক্ষেরকোনদেখানেই।ইব্রাহিমকেএকাকীদাঁড়িয়েথাকতেদেখেতিনিঅবাকহয়েতাঁকেডেকেবললেন, "ওহেইব্রাহিম! তোমারপ্রতিপালকেরসেনাদলকোথায়? তিনিনিশ্চয়আমারশক্তি-বলদেখেভীতহয়েপশ্চাৎ-পসারণকরেছেন”।
ইব্রাহিমআবারও বললেন, "আমাররবক্ষমতায়মহান, কোনরূপভীতিতাঁকেআচ্ছন্নকরতেপারেনা, বরংতিনিইতাপ্রদর্শণকরেথাকেন।একথানিশ্চিৎযে,তাঁরসেনাদলময়দানেএসেপৌঁছবেই-আরতা হবেঅতিঅল্পসময়েরমধ্যেই।"
নমরূদসেনাপতিদেরবললেন, "যুদ্ধ-পতাকাউড়িয়েদাও, সতর্কহও, নাকাড়াবাজাও।"
ষাটলক্ষ [?? ] সেনারশোরগোলেভূমিপ্রকম্পিতহল।ফেরাউন (নমরূদ)পুনরায়ইব্রাহিমকেবললেন, "কোথায়তোমাররবেরসৈন্যদল?"
ইব্রাহিম(আঃ) দূরেআকাশেরদিকেঅঙ্গুলিনির্দেশকরলেন।দূরেকালরঙেরএকটামেঘদেখাযাচ্ছে।যখনসেটাকাছে, মাথারউপরচলেএল, লক্ষকোটিমশারগুণগুণকলতানেচারিদিকমুখরিতহয়ে উঠল।
মশা! ক্ষুদ্রএপ্রাণীটিসন্ত্রাসী, বেপরোয়া।রক্তেরনেশায়জীবনেরঝুকিনিয়েতারাআক্রমণকরেমানুষ, পশুকে।আরএমশাতোআল্লাহপ্রেরিত, যুদ্ধেরনিমিত্তে।কিন্তুফেরাউনএদেরব্যক্তিত্বকেখাটোকরেদেখলেন।অবজ্ঞারসূরে তিনিইব্রাহীমকে বললেন, "এতোমশা! তুচ্ছএকপ্রাণী, তারউপরনিরস্ত্র।তোমাররবেরকিঅস্ত্র-ভান্ডারবামালখানানেই?"
এখানেবলেরাখাভাল- অনেকেরমতেএগুলোমশাছিলনা, ছিলমশারআকৃতির, আকারেআরওক্ষুদ্রপ্রাণী, যারা ছিল মাংসাশী।
ইব্রাহিমবললেন, "আমাররবেরসেনাবাহিনীসম্পর্কেআপনারকোনধারণাইনেই।আপনারএইসেনাবাহিনীরজন্যেতিনিএইতুচ্ছ, নিরস্ত্রমশাকেইযথেষ্টমনেকরেছেন।আরনিরস্ত্রহলেওএরাতাদেরযুদ্ধ-কৌশলজানে।এখনআপনিশুধুএইবাহিনীরমোকাবেলাকরেআপনারশক্তি, সামর্থ্যওমেধারপরিচয়দিন।"
এদিকেএইমশা-বাহিনীরসঙ্গেকিরূপেযুদ্ধকরতেহবেতাভেবেপাচ্ছিলনানমরুদেরসেনারা।এতক্ষুদ্রপ্রতিপক্ষেরবিরুদ্ধেযুদ্ধের কোন পূর্ব-অভিজ্ঞতাবাট্রেনিং- কোনটাই তাদেরনেই।সুতরাংতারাহতভম্ভহয়েআদেশেরঅপেক্ষায়সাঁরিবদ্ধভাবেনিশ্চলদাঁড়িয়েরইল।
এইঅবসরেপ্রতিটিসৈন্যেরমাথারউপরএকটিকরেমশাঅবস্থাননিল।অতঃপরকেউকিছুবুঝেউঠারপূর্বেইতারাতাদেরনাসিকাপথেমস্তিস্কেপ্রবেশকরল।তারপরদংশন।সেনাবাহিনীরমধ্যেবিশৃঙ্খলারসৃষ্টিহল।হিতাহিতজ্ঞানশুণ্যহয়েতীরন্দাজগণউর্ধ্বেতীরনিক্ষেপকরতেলাগল।আরপদাতিকসেনারানিজেদেরচতুষ্পার্শ্বেঅন্ধেরমততরবারীচালনাশুরুকরল।এভাবেএকেঅপরকেনিজেদেরঅজান্তেইতারাআহতবানিহতকরেফেলল।
নমরূদপালিয়ে তার রাজপ্রাসাদেফিরেআসছিলেন।এসময়একটিদূর্বল ও পঙ্গুমশাতাকেতাড়াকরল।মশাটিকিছুক্ষণতারশিরোণাস্ত্রেরচতুষ্পার্শ্বেকয়েকবারপ্রদক্ষিণশেষেসুড়ুৎকরেতারনাসিকাপথেমস্তিস্কেঢুকেপড়ল।তারপরধীরেসুস্থ্যেমগজেদংশনশুরুকরল।যন্ত্রণায়অস্থিরহয়েপড়লেননমরূদ।উন্মাদেরন্যায়প্রাসাদেপ্রবেশকরলেন।একসময়দিশেহারাহয়েতার স্বীয় পাদুকাখুলেনিজেরমাথায়আঘাতকরতেশুরুকরলেন।এতেমশাটিদংশনেবিরতরইল।নমরূদএকটুআরামবোধকরলেন।কিন্তুআঘাতবন্ধকরতেইমশাটিপুনরায়দংশনশুরুকরল।অবশেষেনমরূদতারমাথায়মৃদুআঘাতকরারজন্যেএকজনসার্বক্ষণিককর্মচারীনিযুক্তকরলেন।সূদীর্ঘ৪০বৎসরনমরূদঐদু:সহযন্ত্রণাভোগকরেছিলেন।
এটাঅদ্ভুতছিলযে, পাদুকাব্যতিতঅন্যকিছুরআঘাতেমশাটিদংশনেবিরতথাকতনা।এসময়ইইব্রাহীম (আঃ)নমরূদেরসঙ্গেসাক্ষাৎকরেবললেন, "হেফেরাউন! স্বীয়মস্তকে, স্বীয়পাদুকাদ্বারাআঘাতেরজন্যে, স্বীয়অর্থেইগোলামনিযুক্তকরেরাখাজঘণ্য কাজমাত্র।সুতরাংএখনওসময়আছে,আল্লাহকেসর্বশক্তিমানওঅদ্বিতীয়বলেস্বীকারকরেনিন।তাতেতিনিআপনারপাপসমূহক্ষমাকরবেনএবংআপনিএইকঠিনবিপদথেকেমুক্তিপাবেন।"
নমরূদমনেকরতেন,খোদাকেস্বীকারকরেনিলেতারক্ষমতাওপ্রভাববিলুপ্তহবে।তাইতিনিউত্তরদিলেন, "হেইব্রাহিম! আমিইদুনিয়ারঅধিশ্বর।অন্যকাউকেআমিস্বীকারকরিনা।" ইব্রাহিমবুঝতেপারলেন,যাকেআল্লাহপথপ্রদর্শণকরেননি, সেকখনওপথখুঁজেপাবেনা।তিনিহতাশহয়েফিরেএলেন।
একারণেইতারসম্পর্কেইহুদি, খৃষ্টীয় ও ইসলাম ধর্মে বলাহয়েছে– “নমরূদ অনুশোচনা করে থাকুক, আর না-ই থাকুক, সে বাস্তবেই ছিল এক মহা ইবলীস ব্যক্তি, ভাস্কর-পূজার প্রতীক এবং একজন নিষ্ঠুর ও স্বৈরাচারি রাজা। ইহুদি (হিব্রু) রাব্বানিক সাহিত্যেআজও নমরূদের পরিচয় রয়েছে একটা ‘জঘন্য ও পাপিষ্ট শয়তান’ হিসেবে।
এদিকেনমরূদেরসার্বক্ষণিকদায়িত্বেনিয়োজিত থাকাকর্মচারীটিঅতিষ্টহয়েপড়েছিল।একমুহুর্তঅবসরনেই।সামান্যবিরতিতেইতিরস্কার।একসময়তারমনেএমনবিরক্তিওক্রোধেরসৃষ্টিহলযে, সেতারহস্তস্থিতপাদুকাদ্বারানমরূদের মাথায় সজোরেএকআঘাতহানে।আর ঐ একআঘাতেইনমরূদেরমৃত্যুহয়।
নমরুদেরএইযুদ্ধওপরিণতিসম্পর্কেইহুদিরাব্বানিকসাহিত্যআরওজানায়- "একটি মশা বা অতি ক্ষুদ্র মৌমাছির মত ক্ষুদ্র একটি ভিঙ্গল-বলা-ই নমরূদের মগজে ঢুকেছিল, আর সেটির কামড়ের যণ্ত্রনায় নমরূদ হয়ে উঠে উম্মাদ-পাগল।
অন্যদিকে,এসম্পর্কে খৃষ্টানদের ধর্মগ্রণ্থ বাইবেলজানায়- “বারবর্গমাইলজায়গায়নমরুদেরসেনাবাহিনীছাউনিফেলেছিল।তখনআল্লাহজিব্রাইলকেইব্রাহিমেরকাছেএকথাজিজ্ঞেসকরতেপাঠালেনযে, তাকেউদ্ধারেকোনপ্রাণীপাঠাবেনতিনি? ইব্রাহিমবেঁছেনিলেনমশা।অল্লাহরাব্বুল আ’লামীন বললেন, “ইব্রাহীম যদি মশা বেছে না নিতেন, তা হলে তিনি এমন এক ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র পোকা পাঠাতেন, যেগুলোর ৭০টির ওজন হত মাছির একটিমাত্র পাখার ওজনের চাইতেও হাল্কা।
মহানআল্লাহতখনমাছিদেররাজাকেসমনপাঠাতেনএবংতাকেআদেশকরতেননমরূদেরবিরুদ্ধেতারবাহিনীনিয়েঅগ্রসরহতে।সেতখনদুনিয়ারসকলমশা-মাছিনিয়েনমরূদেরবাহিনীকেএমনহিংস্রভাবেআক্রমণকরতযে, অল্পসময়েরমধ্যেপুরোময়দানেমানুষেরমাথারখুলি, হাঁড়-গোঁড়, তরবারী, বল্লমওতীর-ধনুকব্যতিতঅপরকিছুইআরপরিদৃষ্টহতনা।কেননা,সেগুলোতাদেরশরীরেরচামড়া, মাংসএমনকিমাথারমগজপর্যন্তচুষেখেয়েফেলত।

আবার এ রকম ব্যাখ্যাও এসেছে, নমরূদপালিয়েগিয়েনিজেকেতার রাজপ্রাসাদেরএকটাপুরুদেয়ালঘেরাকক্ষেআঁটকেফেলে।কিন্তুতারসাথেসেখানেওঐদুর্বল মশাটিপৌঁছেগিয়েছিল।সাতদিনঐমশাতারমুখেরচারপাশেঘোরাফেরাকরে, তবেনমরুদকোনভাবেইওটাকেধরতেপারেনি।তারপরসেটিতারনাসিকাপথেপ্রবেশকরে।নমরুদযতইতাকেবাইরেবেরকরতেচেষ্টাকরে, সেটিততইগভীরেপ্রবেশকরেএবংএকসময়মস্তিস্কেপৌঁছায়।তারপরসেটিতারমস্তিস্কচুষেখেতেশুরুকরে।
এসময়ব্যাথাপ্রশমনেদেয়ালেমাথাঠুকাছাড়ানমরূদেরআরকোনউপায়ইরইলনা।পরেসেএকজনকর্মচারীকেনিয়োগকরেকাঠেরএকহাতুড়িদিয়েনিজ মাথায়মৃদুআঘাতকরারজন্যে।এদিকেমশাঅবিরামখেতেখেতেআকারেবৃদ্ধিপেতেলাগল।আর৪র্থদিনেসেটিতারমস্তিস্কফুঁড়েবেরিয়েএল।ঐমশাএসময়বৃদ্ধিপেতেপেতেএকটাকবুতরেরআকারেরহয়েগিয়েছিল।তারপরসেটিউড়েযেতেযেতেমরোন্মুখনমরূদকে, যারতখন,এমনকিতওবাকরারওসমর্থ্যছিলনা,

বলল, “আল্লাহ এ রকমই করেন, যখন তাঁর মনসা হয়, তিনি তাঁর সৃষ্ট তুচ্ছ থেকে তুচ্ছ কোন প্রাণীকে পাঠান ঐ ব্যক্তিকে ধংস ও শায়েস্তা করার জন্য, যে তাঁর স্বীয় একত্ববাদে বিশ্বাস করে না, আর না বিশ্বাস করে তাঁর প্রেরিত নবী-রাসূলকে” (বাইবেল)।
এমন একদোর্দান্ডপ্রতাপশালীফেরাউনেরজীবনাবসানেরএমন ইতিহাস চলে আসছে ৪০০০ বছর পূর্ব থেকে।অবশ্যএ ইতিহাসেরআরোঅনেকশাখা-প্রশাখারকথাওশুনা যায়।যেমন- যখনআল্লাহজিব্রাইলকেবললেন, "আমারএইবান্দাযেননিরাশনাহয়।" তখনজিব্রাইলতীরেরঅগ্রভাগরক্তরঞ্জিতকরতেপশু, পাখীওজলজপ্রাণীরকাছেরক্তচেয়েছিলেন।কিন্তুকেউইনিজেররক্তদিতেসম্মতহয়নি "বেলেমাছ" ছাড়া।একারণেইবেলেমাছেরশরীরেকোনরক্তনেই।
আরএবিষয়েআরওজানায়ায় - "তীরের অগ্রভাগে মাছের রক্তের সম্মানেই আল্লাহ পাক মরা মাছ খাওয়াও সকল ধর্মাবলম্বিদের জন্য হালাল করে দিয়েছেন, এবং খাওয়ার জন্য মাছকে অন্য পশু-পাখির মত জবাই করারও বিধান নেই।
অন্য ব্যাখ্যায় এসেছে, দেখতে মেঘের মত মশার দলই আসার সময় সাগর থেকে মাছের রক্ত সাথে করে নিয়ে এসেছিল।
আরেক ব্যখ্যায় এসেছে, নমরূদকেঅনেকসময় “ফেরাউন” সম্বোধনকরাহতরাজ্যাধিপতিহিসেবে, কিন্তুকখনওএইউপাধিতারনামেরসাথেযুক্তহয়নি।অর্থাৎতাকেকখনও “ফেরাউননমরূদ” হিসেবেসম্বোধনকরাহয়নি।ফেরাউনউপাধিটি পরবর্তীতেকোননামেরসাথেপ্রথম যুক্তকরেনমিসরীয়রাজবংশেরলোকজন।
মিশরের এ বাদশাহর নামহিব্রু ভাষায় নিমরূদ, আরবীতে নুমরূদ, বাংলায় নমরূদ, তাইবেরিয়ান ভাষায় নিমরূদ এবং রোমানাইজড্=নুমরূদ। প্রায় ৪০০০ বছর পূর্বে হযরত ইব্রাহীম (আঃ) এর সমসাময়িক-কালে তিনি মিশরের একটিমাত্র রাজ্যের এক শক্তিধর বাদশাহ ছিলেন। তিনি ছিলেন কূশের পুত্র, এবং নূহ (আঃ) এর খুন্তী (গ্রেট-গ্রেণ্ডসন)। বাইবেল অনুসারে, তিনি ছিলেন খোদার বিরুদ্ধেও একজন শক্তিশালী তীরন্দাজ, এক কথায় খোদা-দ্রোহী রাজা। আর, ব্যুৎপত্তিবিজ্ঞান (এটিমোলজী) অনুযায়ী, ‘নমরূদ’ নামটির এক অর্থই হচ্ছে ‘বিদ্রোহী’।

গবেষণায় জানা গেছে, নমরূদ ৬৯ বছর রাজত্ব করেছেন। আরও জানা যায়, প্রগৈতিহাসিক কাল থেকে রাজা বাদশাহদের মধ্যে তিনিই সর্ব প্রথম রাজমুকুট পরিধান করেন, অর্থাৎ, তার হাত দিয়েই রাজমুকটের প্রচলন হয়েছে। ঈহুদি শাস্ত্র আরও বলে,
নমরূদ তার পিতার কাছ থেকে হযরত আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) এর পোশাক উত্তরাধিকার-সূত্রে পেয়েছিলেন। ৯ম শতাব্দীর মুসলিম ঐতিহাসিক আল-তাবারি তাঁর হিস্ট্রী অব দ্য প্রফেট্স এণ্ড কিংস গ্রন্থে বলেন, নমরূদই ‘বাবিল টাওয়ার’টি নির্মান করেছিলেন, যেটি পরবর্তীতে আল্লাহ ধ্বংস করে দেন। ১৩শ শতাব্দীর আরেক মুসলিম ঐতিহাসিক আবু আল-ফাইদা একই কথা বলে গেছেন। এর পূর্বেই ১০ম শতাব্দীতে মুসলিম ঐতিহাসিক মাসূদী লিখেছেন, নমরূদ ৬০ বছর রাজত্ব করেছিলেন এবং তিনি ইব্রাহীমকে কতল করারও প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন।
হাঙ্গেরিয়ান ইতিহাসে নমরূদকে বলা হয়েছে “দৈত্য-নমরূদ”। আমেরিকান লীজ্যাণ্ডেও নিমরূদ বিদ্যমান। ১৫৮৩ সালের অটোমান তুরস্কের একটি পাণ্ডলিপিতেও পাওয়া যায় যে, নমরূদ ইব্রাহীম (আঃ)কে হত্যা করার নিমিত্তে অগ্নিকুণ্ডে ফেলেছিল। অন্য এক ঈহূদী ও ইসলামিক বর্ণনা অনুযায়ী, ইব্রাহীম (আঃ) ও নমরূদের মধ্যকার দ্বন্দ ছিল মূলত আল্লাহর একত্ববাদ ও বহু-উপাস্যবাদের দ্বন্দ, অথবা ভাল ও শয়তানী কাজের মধ্যকার দ্বন্দ। মধ্যযুগীয় ঈহূদী রাব্বানিক সাহিত্যও বলেঃ নমরূদ আল্লাহর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল।আল-ক্বোরআনে জনৈক রাজার সাথে ইব্রাহীম (আঃ) এর দ্বন্দের প্রসঙ্গ আনা হয়েছে, তবে
ঐ রাজার নাম সরাসরি উল্লেখিত হয় নি (যেহেতু ‘ফেরাউন’ নামের মধ্যেই ‘নমরূদ’ নামটি

নমরূদের ঐতিহাসিক একটি প্রতিকৃতি

আপনা-আপনিই ঢুকে যায়, অথবা আল্লাহ হয় তো নামটির পৈচাশিকতার কারণে পবিত্র ক্বোরআনে এর স্থান দেন নি)।তবে, কেন সরাসরি এ নামটি আসে নি, মহান আল্লাহই তা উত্তমভাবে জ্ঞাত আছেন।
আর, ইতিহাস ঘাটলে আরও জানা যায়, ‘ফেরাউন’ উপাধিটি গ্রহণ করে মিশরে মোট ৭ জন বাদশাহ রাজত্ব করেছেন। মূসা (আঃ) এর সময়ে যে ফেরাউন ছিল, তার নাম ছিল (২য়) ‘রামজেজ‘। সর্বশেষ ফেরাউন ছিল রাণী ক্লিওপেট্রা, যার রাজত্বকাল ছিল খৃষ্টপূর্ব ৫১ থেকে খৃষ্টপূর্ব ৩০।
ঐতিহাসিক মোজাহিদ ইবনে জাবের বলেন, ৪ জন বাদশাহ গোটা পৃথিবী শাসন করেছেন। তাঁদের মধ্যে দু’জন মুসলিম, অপর দু’জন অমুসলিম। ‍মুসলিম দু’জন হলেনঃ পয়গাম্বর-বাদশাহ সুলাইমান (আঃ) এবং পয়গাম্বর-বাদশাহ যুল-ক্বারনাইন (আঃ)। আর অমুসলিম দু’জনের একজন হলেন বখতে নযর, আর, অপরজন হলেন নমরূদ। তবে আমার ব্যক্তিগত অভিমত আমি উপরেও উল্লেখ করেছি। ঐ প্রাগৈতিহাসিক কালে গোটা পৃথিবী-শাসন একজনমাত্র বাদশাহর পক্ষে কী ভাবে সম্ভব, যেখানে অনেক ভূ-খণ্ড তখনো আবিষ্কৃতই হয় নি? তবে, মুসলিম দু’জনের কথা বিশ্বাস করতে হবে একটি কারণে যে, প্রত্যেক নবী-রাসূলের অলৌকিক বা ঐশ্বরিক অনেক মো’জেযাহ-শক্তি ছিল।তবে, অমুসলিম দু’জন কোন অবস্থাতেই গোটা পৃথিবীর রাজা ছিলেন না, বা হতে পারেন না; তবে তারা নিজ নিজ রাজ্যে বিশাল ক্ষমতাধর ছিলেন।

প্রাচীন হিব্রু ভাষা বা হিব্রুতে কোন পাণ্ডলিপির কিয়দংশের নমুনাঃ

נטלו ומסרו לנמרוד. אמר לו: עבוד לאש. אמר לו אברהם: ואעבוד למים, שמכבים את האש? אמר לו נמרוד: עבוד למים! אמר לו: אם כך, אעבוד לענן, שנושא את המים? אמר לו: עבוד לענן! אמר לו: אם כך, אעבוד לרוח, שמפזרת עננים? אמר לו: עבוד לרוח! אמר לו: ונעבוד לבן אדם, שסובל הרוחות? אמר לו: מילים אתה מכביר, אני איני משתחוה אלא לאוּר - הרי אני משליכך בתוכו, ויבא אלוה שאתה משתחוה לו ויצילך הימנו! היה שם הרן עומד. אמר: מה נפשך, אם ינצח אברהם - אומַר 'משל אברהם אני', ואם ינצח נמרוד - אומַר 'משל נמרוד אני'. כיון שירד אברהם לכבשן האש וניצול, אמרו לו: משל מי אתה? אמר להם: משל אברהם אני! נטלוהו והשליכוהו לאור, ונחמרו בני מעיו ויצא ומת על פני תרח אביו. וכך נאמר: וימת הרן על פני תרח אביו. (בראשית רבה ל"ח, יג)

 

লেখক: ইংরেজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ও ২৪ বছরেরবিভাগীয়প্রধান, বিভাগেরসাবেক জ্যেষ্ঠতমঅধ্যাপক, শাহজালালবিজ্ঞানওপ্রযুক্তিবিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, ও দেশে-বিদেশে ৪৫ বছরের ইংরেজি ভাষা ও ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক।