সিলেটের ওসমানীনগরে উপজেলা প্রশাসনিক ভবন নির্মিত মসজিদে স্থানীয় মুসল্লীদের নামাজ আদায়ে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। 


মোয়াজ্জিনকে প্রভাব কাটিয়ে ইমাম নিযুক্ত করার পাঁয়তারায় উপজেলা চেয়ারম্যান ময়নূল হক চৌধুরীর মদদে সিএ শামিম আহমদসহ উপজেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মচারীরা স্থানীয় এক মুসল্লীকে মসজিদে নামাজ পড়তে গেলে হাড্ডি-গুড্ডি ভেঙ্গে ফেলার হুমকিসহ ইউএনওকে দিয়ে জেল জরিমানার ভয় দেখাচ্ছেন। 



এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে ১১ মে বুধবার উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা কবির আহমদ সিলেট জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছেন। 


অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, নবনির্মিত উপজেলা প্রশাসনিক ভবন সংলগ্ন সরকারী তত্বাবধানে একটি মসজিদ নির্মান হলে তৎকালীন ইউ্এনও মোছা.তাহমিনা আক্তার ইন্টাভিউয়ের মাধ্যমে মাওলানা খন্দকার মসকুর আহমদকে ইমাম হিসাবে নিয়োগ প্রদান করেন। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকার ভাড়াটিয়া বাসিন্দা রায়হান আহমদ। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান ময়নূল হক চৌধুরীর দোহাই দিয়ে জোর লবিংসহ নিয়োগ কাজে ঝামেলা সৃষ্টি করেন। এক পর্যায়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে রায়হান আহমদকে মোয়াজ্জিন হিসাবে নিয়োগ প্রদান করেন ইউএনও। পরবর্তীতে ইউএনও তাহমিনা আক্তার অন্যত্র বদলি হলে গত বছরের শেষ দিকে রায়হানকে সরকারী ভাবে ইমাম নিয়োগের পাঁয়তারায় মাওলানা খন্দকার মসকুর আহমদকে ইমামতির চাকরী থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। এ বিষয়ে স্থানীয়রা উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করে কোনো সদউত্তর না পাওয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককের স্বরণাপন্ন হন। তারা মুসল্লীদের দাবির বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে উপস্থাপন করলে তিনি বলেন, রায়হানকে আমরা নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করছি। বাজেট না থাকায় ইমামকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বিষয়টি সমাধানের স্বার্থে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতাউর রহমান প্রতিমাসে ইমাম সাহেবের সম্মানী নিজ থেকে পরিশোধ করবেন এবং সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান চৌধুরী নাজলু ইমাম সাহেবের মাসিক সম্মানী বাবত নগদ ৪০ হাজার টাকা প্রদানের আশ্বস্থ করলে চাপের মুখে মাওলানা খন্দকার মসকুর আহমদকে আবারো ইমাম নিযুক্ত করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। ইমাম মাওলানা খন্দকার মসকুর আহমদকে অবৈধভাবে অব্যাহতি নিয়ে স্থানীয় প্রতীবাদকারী মুসল্লীদের উপজেলা পরিষদের সিত্র শামিম আহমদ, ইউএনও অফিসের অফিস সহকারী সুফিয়ানসহ উপজেলা পরিষদ ও ইউএনও কার্যালয়ে একাধিক কর্মরতদের সম্মন্বয়ে মোয়াজ্জিন রায়হানের নেতৃত্বে স্থানীয় একাধিক মুসল্লীদের হুমকি ধামকিসহ মসজিদে নামাজ আদায়ে নানা প্রতিবন্ধিকতা সৃষ্টি করেছেন।


অভিযোগকারী কবির আহমদ জানান, “গত ৮ মে জোহরের নামাজ পরে মসজিদ থেকে বের হলে ইউএনও কার্যালয়ের অফিস সহকারী সুফিয়ান আমাকে বলেন, এ মসজিদে আপনি আর নামাজ পড়তে আসবেন না। এটা স্যারদের নিষেধ আছে। এসময় মসজিদে নামাজ আদায়ে স্যারদের নিষেধের কারণ জানতে চাইলে সুফিয়ান উত্তেজিত হয়ে বলেন, এটা সরকারী মসজিদ পাবলিকের নয়। পরদিন আসরের নামাজের জন্য মসজিদে গেলে উপজেলা পরিষদের সিত্র শামিম আহমদ তার সহকর্মীদের নিয়ে সুফিয়ান বলার পরও আমি কেন আবারও ওই মসজিদে নামাজ পড়তে গেলাম তার কারন জানতে চান? নামাজ আদায়ে নিষেধের বিষটি ইউএনও ম্যাডামকে জানাবো বললে শামিমসহ তাঁর অনান্য সহযোগীরা ক্ষিপ্ত হয়ে অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ করে বলেন, এটা ইউএনও‘র বিষয় নয়, সরকারী মসজিদের দেখাশুনার দ্বায়িত্বে আমরা আছি। এখানে শুধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নামাজ পড়বেন অন্য কেউ নয়। এরপরও আপনাকে এখানে নামাজে আসতে দেখলে হাড্ড্-িগুন্ডি ভেঙ্গে ফেলা হবে, নয়তো ইউএনও স্যারকে দিয়ে জেল জরিমানা করার হুমকি প্রদান পূর্বক আমাকে মসজিদ এলাকা থেকে বের করে দেয় শামিমসহ তাঁর সহযোগিরা।”


তবে, উপজেলা পরিষদের সিত্র শামিম আহমদ ও ইউএনও অফিসের অফিস সহকারী সুফিয়ান আহমদ মসজিদে নামাজ আদায়ে কাউকে বাধা দেয়ার অভিযোগ অস্বিকার করেছেন। 


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলিমা রায়হানা বলেন, “স্থানীয় মুসল্লীদের নামাজ পড়তে বাধাঁ দেয়া হয়নি। অপ্রতিকর ঘটনার অভিযোগ থাকায় আমাকে অবগত করে একজন মুসল্লীকে নামাজ পড়তে নিষেধ করা হয়েছে।”


উপজেলা চেয়ারম্যান ময়নূল হক চৌধুরী‘র ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলে ফোনটি বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরপি/এসডি-১৩