দেশের প্রথম ‘ডিজিটাল সিটি’ সিলেট। আইটি ক্যামেরা ও ফ্রি পাবলিক ওয়াইফাই সেবা চালুর মধ্য দিয়ে ২০২০ সালের মার্চে এ উপাধি পায় সিলেট শহর। পরবর্তীতে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনসহ তারের জঞ্জাল অপসারণ করে মাটির নিচ দিয়ে লাইন নিয়ে ‘ডিজিটাল’র পথে আরেক ধাপ এগোয় সিলেট।

কিন্তু দেশের সেই প্রথম ডিজিটাল নগরীতে এখন বন্যার পানি থৈ থৈ। রাস্তায় চলছে কলাগাছের ভেলা, যেটিকে সিলেটি ভাষায় বলা হয় ‘ভোরা’।


সিলেটে গত সপ্তাহের মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হয় ভারি বৃষ্টি। থেমে থেমে সে বৃষ্টি এখন পর্যন্ত চলমান। বুধবার (৯ মে) থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। আজ বুধবার (১৭ মে) পর্যন্ত নামেনি সেই পানি। গত দুদিন ধরে সিলেটে বৃষ্টি কিছুটা কম হলেও উন্নতি হয়নি পরিস্থিতির। যত সময় যাচ্ছে ততই সিলেট নগরীর নতুন নতুন এলাকার রাস্তাঘাট ডুবছে বন্যার পানিতে। সেই সঙ্গে হু হু করে পানি ঢুকছে বাসাবাড়িতে।

জানা যায়, সুরমা নদীর পানি উপচে সোমবার থেকেই তলিয়ে যেতে শুরু করে নগরীর নতুন নতুন এলাকা। মঙ্গলবার দিনভর প্লাবিত এলাকার পানি আরও বেড়েছে। নগরীর শাহজালাল উপশহর, তেররতন, মেন্দিবাগ, ছড়ারপার, কামালগড়, সোবহানীঘাট, মাছিমপুর, তালতলা, মাছুদিঘির পাড়, কালিঘাট, কাজিরবাজার, শেখঘাট, লালাদীঘির পাড়, জামতলা ও ঘাসিটুলাসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। কোনো কোনো এলাকার রাস্তায় কোমর পানি।  

এমতাবস্থায় নগরীর বিভিন্ন রাস্তায় কলাগাছের তৈরি ভেলাকেই যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম বানিয়েছেন স্থানীয়রা। এমনই অবস্থা দেখা যায় নগরীর ১০ নং ওয়ার্ডের ঘাসিটুলায়।

এ এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক সুমন ইসলাম সিলেটভিউ-কে বলেন, চরম ভোগান্তিতে পড়েছি আমরা। আমাদের পাড়ার রাস্তায় কোমর পানি। ঘরে বন্দী অবস্থায় থাকতে হচ্ছে। রাস্তায় হাটু পানি হলে হয়তো হেঁটে যাতায়াত করা যেতো। কিন্তু কোমর পানিতে তো নামা কষ্টকর। 

তিনি বলেন, জরুরি প্রয়োজনে একবার বের হয়েছিলাম। পাড়ার কয়েকজন কিশোর রাস্তায় যাতায়াতের সুবিধার্থে কলাগাছের ভেলা বানিয়েছে। তাদের একটি ভেলায় চড়ে কাজ সেরে এসেছি।

সিলেট নগরীতে অকাল বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। 

উল্লেখ্য, বন্যা পরিস্থিতিতে নগরীর ৭টি ওয়ার্ডে ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করেছে সিটি কর্পোরেশন। সেগুলো হচ্ছে- ১৫ নং ওয়ার্ডের মিরাবাজারস্থ কিশোরী মোহন বালক উচ্চ বিদ্যালয়, ১৪ নং ওয়ার্ডের চালিবন্দর রামকৃঞ্চ উচ্চবিদ্যালয় ও চালিবন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৩ নং ওয়ার্ডের মাছিমপুরস্থ আব্দুল হামিদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২৪ নং ওয়ার্ডের বুরহান উদ্দীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শাহজালাল উপশহরস্থ তেররতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১৩ নং ওয়ার্ডের মির্জাজাঙ্গালস্থ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, কাজিরবাজার স্কুল, মনিপুরি রাজবাড়ি আশ্রয়কেন্দ্র ও মাছুদিঘীর, ১০ নং ওয়ার্ডের ঘাসিটুলা স্কুল, ইউনিসেফ স্কুল, কানিশাইল স্কুল, জালালাবাদ স্কুল, বেতের বাজার কাউন্সিলয়ের চতুর্থ তলা বিল্ডিং এবং ২৭ নং ওয়ার্ডের হবিনন্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।  


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম