বিশ্বব্যাপী ভেড়ার মাংস জনপ্রিয় হলেও এক ধরণের গন্ধের কারণে দেশে এ মাংসের প্রতি মানুষের আগ্রহ কম। তাই দীর্ঘদিন ধরে দেশের গবেষকরা চেষ্টা করছিলেন গন্ধমুক্ত ভেড়ার সাংস উৎপাদনের।

দুই দশক পর গন্ধহীন ভেড়ার মাংস উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একজন গবেষক।


ওই গবেষকের নাম ড. মোহাম্মদ আল মামুন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক। ২০০৪ সালে জাপানের ইয়াতো ইউনিভার্সিটিতে প্লানটেইন ঘাসের উপর গবেষণা শুরু করেন। গবেষণায় সাফল্যের জন্য তিনি সেখানে প্রেসিডেন্ট ও ডিন আওয়ার্ড পেয়েছেন।

বাকৃবি সূত্রে জানা যায়, বিশ্বে শতকরা ২২ ভাগ প্রোটিনের চাহিদা মেটায় ভেড়ার মাংস। কিন্তু অস্বাভাবিক গন্ধ ছাড়াও ঘন শক্তপেশী ও অধিক চর্বিযুক্ত হওয়ায় দেশের বেশিরভাগ মানুষই পছন্দ করেন না ভেড়ার মাংস।

তাই ভেড়ার খাদ্যতালিকায় ওষুধিগুণ সম্পন্ন প্লানটেইন ঘাস ও রসুনের পাতা ব্যবহার করে ভেড়ার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মাংসের গুণগত মান উন্নত করা হয়েছে।

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল মামুন বলেন, ‘সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে, ওষুধি ঘাসের উপাদান মাংসের স্বাদ ও গন্ধের পরিবর্তন এনেছে। এ ছাড়া প্লানটেইন ও রসুনের পাতায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভেড়ার বৃদ্ধি, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা ও মাংসের গুণগত মানের উপর যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে।’

তিনি বলেন, ‘গবেষণা চলাকালীন ভেড়ার খাবারে অধিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ প্লানটেইন ঘাস ও রসুনের পাতা ব্যবহার করার ফলে ভেড়ার ২০ থেকে ২৬ শতাংশ শারীরিক বৃদ্ধি, ৫ থেকে ৭ শতাংশ মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি এবং ৭ শতাংশ রক্তের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ ছাড়া এর ফলে শরীরের অভ্যন্তরীণ চর্বি ও পেলভিক চর্বি যথাক্রমে ২৪ শতাংশ এবং ৫৬ শতাংশ কমে গিয়েছে।

‘উপাদান দুটি ব্যবহারের ফলে ভেড়ার মাংসে ১৫ শতাংশ কোলেস্টরল কমিয়ে দিয়েছে এবং ৩০ শতাংশ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড বাড়িয়ে দিয়েছে। এই ঘাসসমূহ ব্যবহারে ভেড়া থেকে ১১ থেকে ১৪ শতাংশ কম মিথেন নির্গত হয় যা পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপুষ্টি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. রাখী চৌধুরী বলেন, ‘মূলত ভেড়ার উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে গবেষণা করে এ সাফল্য পাওয়া যায়। এর ফলে ভেড়ার মাংসের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে। এতে খামারিরা লাভবান হবেন ও তাদের সংখ্যা বাড়বে।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে