একবছরেও উদঘাটন হয়নি ধীরাজ পাল (৬০) হত্যা রহস্য। প্রকাশ্যে দিনদুপুরে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটলেও এখন পর্যন্ত এর কোন ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

 


গত বছরের ২৮ মে বালাগঞ্জের গহরপুরে নিজ কর্মস্থলে খুন হন সেখানকার একটি ইটভাটার ব্যবস্থাপক ধীরাজ পাল। ধীরাজ সিলেটের দক্ষিণ সুরমার আলমপুরের মৃত দিজেন্দ্র পালের ছেলে।

 

ধীরাজ হত্যা মামলা বর্তমানে তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডি সিলেটের বিশেষ পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা শুক্রবার বলেন, আমরা এই হত্যা রহস্য উদঘাটনে আন্তরিকভাবে কাজ করছি। জেলা পুলিশও এ ব্যাপারে কাজ করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা কোন ক্লু উদ্ধার করতে পারিনি।

 

তিনি বলেন, এই মামলায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো। ধারণা করছি, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যেই হত্যাকারী রয়েছে। তবে তারা কেউ স্বীকার করছে না। তবু আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

মামলা সূত্রে জানা যায়, বালাগঞ্জ উপজেলার গহরপুরে ইটভাটার ব্যবস্থাপক ধীরাজ পালের মরদেহ গতবছরের ২৮ মে দুপুরে ইটভাটা থেকে উদ্ধার করা হয়। পরদিন নিহতের ছেলে প্রভাকর পাল অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে বালাগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ ৬ জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। এরমধ্যে ৫ জনকে রিমান্ডেও নেওয়া হয়। তবে তাদের কাছ থেকে হত্যার ব্যাপারে কোনো তথ্য আদায় করতে পারেনি। বর্তমানে গ্রেপ্তার হওয়া সকলেই জামিনে রয়েছেন।

 

প্রথমে মামলাটির তদন্ত করছিলো বালাগঞ্জ থানা পুলিশ। পরে থানা জেলা পুলিশের গোয়ন্দো শাখা (ডিবি) তে হস্থান্তর করা হয়। এরপর তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। তবে তদন্তকারী সংস্থার বদল হলেও মামলার কোন অগ্রগতি হয়নি। হত্যা রহস্য এখন পর্যন্ত থেকে গেছে অনুদঘাটিত।

এ ব্যাপারে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী দেবব্রত চৌধুরী লিটন বলেন, প্রকাশ্যে একটি হত্যার ঘটনা একবছরেও কোনো ক্লু উদ্ধার না হওয়ায় আমরা হতাশ। এই মামলায় তদন্তকারী সংস্থার আন্তরিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ। 

তিনি বলেন, আমরা এখন অভিযোগপত্রের অপেক্ষায় আছি। অভিযোগপত্র পেলে পরবর্তী আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

মামলার এজাহার ও নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ধীরাজ পাল ৮ বছর ধরে গহরপুরের ওই ইটাভাটায় ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করতেন। ইটাভাটায়ই রাত্রিযাপন করতেন তিনি। প্রতি শুক্রবার সেখান থেকে আলমপুরে নিজ বাড়িতে আসতেন। ২৮ মেও ছিলো শুক্রবার। ওইদিন বিকেলে তার বাড়ি ফেরার কথা ছিলো। তবে শুক্রবার দুপুরেই ইটভাটায় নিজ কার্যালয়ের সামনে মাথা ও শরীর ক্ষতবিক্ষত করে তাকে হত্যা করা হয়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন।

 

মামলার এজাহারে ইটভাটার কর্মীদের বরাত দিয়ে বলা হয়, জুমার নামাজের সময় হত্যা করা হয় ধীরাজ পালকে। এসময়ে ইটভাটার সকল কর্মীরা মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন। পুরো ইটভাটা ফাঁকা ছিলো। মামলা দায়েরের পর ৩০ মে ইটভাটার ব্যবসায়িক অংশীদার ও ক্যাশিয়ার মেরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সহকারী ব্যবস্থাপক সুহেদ আহমদ ও সিএনজি অটোরিকশা চালক রুবেল আহমদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন আদালতের মাধ্যমে তাদের ৪ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এরপর ইকবাল হোসেন নামে এক ট্রাক চালক ও ইটভাটার নৈশপ্রহরী রাসেল আলীকে গ্রেপ্তার করে ৩ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। পরে তোফায়েল আহমদ নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে ৬ জনকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করেও হত্যাকান্ডের কোনো ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরাও আদালতে স্বীকারোক্তি প্রদান করেনি।


 
এদিকে, প্রকাশ্যে হত্যাকান্ডের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত হত্যা রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে। ধীরাজ হত্যার পর এ ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও রহস্য উদঘাটনের দাবিতে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী। হত্যা রহস্য উদঘাটনের দাবিতে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সিলেটের উপ মহা পুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মফিজ উদ্দিন আহম্মদ বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়।

 

তিন মাসেও হত্যা রহস্য উদঘাটন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নিহতের ছেলে ও মামলার বাদী প্রভাকর পাল বাপ্পা বলেন, একটা নীরিহ লোককে প্রকাশ্যে খুন করে ফেলা হলো অথচ পুলিশ বা সিআইডি একবছরেও কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারলো না। এটি আমাদের পরিবারের জন্য চরম হতাশার। পুলিশের আন্তরিকতা নিয়েই আমাদের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এভাবে আর কিছুদিন চললে তো আরও অনেক ঘটানার মতো এই হত্যা মামলাও ধামাছাপা পড়ে যাবে। আর আমরা ন্যায়বিচার বঞ্চিত হবো।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/প্রেবি/এসডি-২৪