ইংরেজিতেঃ কিং “সলোমন” Sulaimān (سُلَيْمَان) জন্ম তাঁর জেরুযালেমের ‘শাম’-এ। জন্ম-তারিখ ইতিহাসেও অজ্ঞাত। মৃত্যুঃ জেরুযালেমের ‘লীভেন্ট’-এ।

মাজার শরীফঃ  জেরুযালেমের পবিত্র গোরস্থান “আল-হারাম আল-শরীফ”-এ। তিনি ছিলেন ইযরাঈলের রাজা। মূলতঃ নবুওতি মু’জেযাহর অশীর্বাদে তিনি তৎকালীন গোটা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ও সব রাজাদের চাইতে মহান  ছিলেন। তাঁর পিতা হযরত দাউদ (আঃ), (ইংরেজিতে ডেভিড)ও ছিলন ইযরাঈলের রাজা।


আল-ক্বোরআন অনুযায়ী, তিনি ছিলেন একই সাথে নবী এবং রাজা। ইসলামী শরিয়ত মত তিনি ছিলেন ইযরাঈলের ৩য় রাজা, ছিলেন আল্লাহ-প্রদত্ত সকল জ্ঞানের অধিকারি। 
ইসলামী ভাষ্য মোতাকে, হযরত সুলাইমান (আঃ) ছিলেন আল্লাহ-মনোনীত রাসূল। এজন্য তিনি পেয়েছিলেন অল্লাহ-প্রদত্ত সীমাহীন আশীর্বাদ ও মু’জেযাহ। তিনি পোকা-মাকড় ও পশু-পাখির ভাষা বুঝতেন ও তাদের সাথে কথাও বলতেন। জ্বীন্ জাতীর কথাও তিনি বুঝতেন এবং জ্বীনরা ছিল তাঁর অধীনস্থ ও অনুগত। বায়ূ বা বাতাসও তাঁর অনুগত ছিল। বিশ্বাস ছিল তাঁর এক আল্লায় (আল্লাহর একত্ববাদে)। গোটা ইযরাঈলিদের রাজত্ব ছাড়াও এমন এক বিস্তৃত রাজত্ব আল্লাহ তাঁকে দান করেছিলেন, যা তাঁর আগে বা পরে অন্য কোন নবী-রাসূলকেও দান করা হয় নি। তিনি আল্লাহর সমূহ আদেশ পূর্ণভাবে পালন করেছিলেন, এবং মহান রব্বের কাছ থেকে এ ওয়াদা-প্রাপ্তও হয়েছিলেন যে, ইন্তিকালের পর তিনি অল্লাহ তা’লার নিকটতম-বেহেশ্ত-প্রাপ্ত হবেন।
আরব ঐতিহাসিকগণ তাঁকে তৎকালীন গোটা বিশ্বের সকল রাজাগণের মধ্যে সবচেয়ে মহান ও সবচেয়ে অধিক শক্তিশালী বাদশাহ হিসেবে আখ্যয়িত করেছেন। 
আল-ক্বোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী (২১:৭৮), হযরত সুলাইমান (আঃ) তাঁর পিতা হযরত দাঊদ (আঃ) এর লিগেসী-তে-ই বা উত্তরাধিকার-সুত্রেই নবী এবং বাদশাহ হয়েছিলেন। একদা দু’টি লোক হযরত দাঊদ (আঃ) এর নিকট এসেছিল তাদের দু’জনের মধ্যকার মাঠের ফসলের বিষয়টির সমাধানের জন্য।
এ ব্যাপারে তিনজন মুসলিম ব্যাখ্যাবিদঃ আল-তাবারি, বাইদাওয়ী এবং ইবনে কাথীর বলেনঃ ঐ দু’জন লোকের প্রথমজন বলে যে, সে একটি আঙ্গুর-বাগানের মালিক, সে সারাবছর বাগানটির পরিচর্যা করে। কিন্তু একদিন বাড়িতে না থাকায়, অপর ব্যক্তিটির ভেড়াছাগলের পাল তার ঐ বাগানে ঢুকিয়া বাগানটি তসনস করিয়া  সকল আঙ্গুর খেয়ে ফেলে। এখন সে বাগানটির ক্ষতিপূরন চায়। প্রথম লোকটির নালিশ শোনে সুলাইমান (আঃ) নিজেই সমাধান দিলেন যে, ভেড়াছাগলের মালিক-ব্যক্তিটি ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির আঙ্গু-বাগানটির চাষ-পরিচর্যা ততদিন করবে, যতদিন না বাগানটি তার পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে; আর ফিরে আসলে ভেড়ার মালিক, বাগানটি বাগানের মালিককে সমঝিয়ে দেবে। আর, ঐ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভেড়াগুলো ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির মালিকানায় থাকিবে এবং সে ওগুলোর দুগ্ধ-পশম সবই নিজের মত করে ভোগ করবে। আর ভেড়ার মালিক বাগানটি ফিরিয়ে দিয়ে তার ভেড়াগুলো ফেরত পেয়ে যাবে।

এ প্রসঙ্গে পাক ক্বোরআন বলছেঃ সুলাইমানের বিচারিক চিন্তার লেভেল বা উচ্চাঙ্গতাই প্রমান করে তিনি ভবিষ্যতে কত বড় নবী হতে যাচ্ছিলেন। মুসলিম ট্রাডিশন অনুযায়ী, সুলাইমনের হেকমত, বিচারিক প্রজ্ঞা ও জ্ঞানই তাঁকে তাঁর গোটা জীবনের জন্য উপাধি নিয়ে এসেছিল “সুলইমান আল-হাকীম” বা “বিজ্ঞ সুলাইমান”।

হযরত দাঊদ (আঃ) এর ইন্তিকালের পর সুলাইমান উত্তরাধিকার সুত্রেই প্রাপ্ত হলেন গোটা ইযরাঈলের “রাজ-নবী”; অল্লাহর নবী ও দেশ এবং দেশের মানুষের রাজা-রাজত্ব। তিনি মহান অল্লাহর দরবারে প্রার্থনা জানালেন তাঁকে এমন একটি রাজ্য-রাজত্ব দান করার জন্য, যেটির সমতুল্য কোন রাজত্ব তাঁর পূর্বেও ছিল না, আর তাঁর পরবর্তীতেও হবে না। আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন সুলাইমানের দোয়া ক্ববুল করলেন এবং তাঁর দোয়া-মাফিক এক রাজত্ব দান করলেন।

এই লগ্ন থেকেই সুলাইমান (আঃ) তাঁর সারাটা জীবন ধরে আল্লাহর নিকট থেকে অনবরত মু’জেযাহ-শক্তি-আশীর্বাদ পেতে/গ্রহন করতে থাকলেন। আল-ক্বেরআন সত্যায়ন করছেঃ বাতাসকে আল্লাহ সুলাইমনের বশীভূত করে দিলেন, তিনি বাতাসকে তাঁর সদিচ্ছমত কাজে লাগতে পারতেন, জ্বীন-জাতি তাঁর আনুগত্য করত। এই জ্বীন-জাতির মাধ্যমেই তিনি তাঁর রাজত্বকে শক্তিশালী করলেন। জ্বীন জাতির মধ্যে যারা অবিশ্বাসী রয়ে গেল, আর, শয়তানের অনুগত রয়ে গেল. তাদেরকে জোর-পূর্বক কাজে লাগিয়ে সুলাইমান (আঃ) বিভিন্ন অট্টালিকা,সমাধি ইত্যাদি তৈরী করাতেন। আল্লাহ সুলাইমানের জন্য পিতল ও তামার একটি রহস্যময় নহর বা ফোয়ারা বা ছড়া উপহার হিসেবে প্রদান করলেন, যেটির পানি দিয়ে জ্বীনরা সুলাইমানের নির্মান-কাজ সম্পন্ন করত।

সুলাইমানকে আল্লাহ পাক তাঁর কৃপায় পশু-পাখির ভাষাও শিক্ষাদান করলেন। এমন কি, সুলাইমান পিঁপড়ার ভাষাও বুঝতেন। আল-ক্বেরআন আমাদেরকে স্মরন করিয়ে দিচ্ছেঃ একদা সুলাইমান এবং তাঁর সেনাদল এমন একটি উপত্যকায় প্রবেশ করছিলেন, যেখানে ছিল পিঁপড়ার বসবাস। সুলাইমান এবং তাঁর সৈন্যদল দেখে একটি নারী-পিঁপড়া তার দলের অন্য সকল পিঁপড়াকে সতর্ক করে ডাক দিলঃ “ঢুকো সবাই এক্ষুনি যার যার গর্তে, অন্যতায় সুলাইমান এবং তাঁর বাহিনী তাঁদের অজান্তে আমাদের সবাইকে তাঁদের পায়ের তলায় পিষে ফেলবে”।
সুলাইমান পিঁপড়াটির কথা সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পেরে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করে কৃতজ্ঞতার সাথে দোয়া জানালেন আল্লাহ তাঁকে পিপিলিকার কথাও বুঝার মত নেয়ামত দান করার জন্য, এবং সাথে সাথে পিঁপড়ার দলের ঐ উপত্যকা এড়িয়ে ভিন্ন পথ ধরলেন। সুলাইমানের জ্ঞান এবং প্রজ্ঞাও তাঁর প্রতি আল্লাহর বিশেষ আরো একটি দান। মুসলিম মাত্রই আমরা বিশ্বাস রাখিঃ সুলাইমান (আঃ) আল্লাহর কাছে কখনো তাঁর প্রতিদিনকার প্রার্থনার ব্যাপারে ভুলতেন না।

বর্তমান ইযেমেনের প্রচীন নাম ছিল সাবা। এটির রাজধানির নাম ছিল ‘মা’রীব’।
সুলাইমান (আঃ) এর বিশ্ব-রাজত্বের অপর একটি বৈশিষ্ট ছিল তাঁর সৈন্যদলের বিশাল বহর। এটির অন্তর্ভূক্ত ছিল মানব এবং জীন উভয় জাতি, বাতাস এবং পশুপাখিও। সুলাইমান তাঁর নিয়ম-মাফিক ঘন ঘন তাঁর সেনাবাহিনী এবং যুদ্ধা-বাহিনীর হাজিরা নিতেন। একদিন পশুপাখির হজিরা নেবার সময় হুদহুদ নামক এক পাখির অনুপস্থিতি ধরা পড়ল। সুলাইমান (আঃ) বললেন, “কি ব্যাপার? হুদহুদকে খেছি না যে, কোথায় গেল সে?” কারো কাছ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে তিনি কিছুটা রাগত-স্বরে বললেন, “আসুক সে আজ,হয় তাকে জবাই করা হবে, যদি না সে উত্তম কোন সংবাদ সিয়ে আসতে পারে।”

অল্পক্ষণ পরেই হুদহুদ এসে হাজির হল; বরলোঃ “আমি এক নতুন দেশে গিয়ে উত্তম একটি সংবাদ আপনার সকাশে নিয়ে এসেছি। আমি উড়তে উড়তে ‘সাবা’ দেশ পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছিলাম এবং দেখতে পেলাম, ঐ দেশের লোকজন সূর্য‌্য-পূজা করে। তারা একজন রাণী দ্বরা শাসিত, যে রাণী অত্যন্ত বুদ্ধিমতি ও ক্ষমতাধর এবং দেশটি তার সম্পদশালী।” শুনেই সুলাইমান (আঃ) একটি বাদশাহী ফরমান লিখলেন ঐ রাণীর নিকট। উদ্দেশ্য ছিল, ওখানে সূর্য‌্য-পূজা বন্ধ করে এক আল্লাহর এবাদত ক্বায়েম করবেন ওদেরকে সারেন্ডার করিয়ে। সুলাইমান (আঃ) হুদহুদকে আদেশ দিলেন, “এই ফরমান নিয়ে তুমি এক্ষুনি রাণীর দরবারে গিয়ে তাঁর সম্মুখেই নিক্ষেপ করবে এবং দূরে থেকেই শুনবে তারা কি বলাবলি করে।”

বাদশাহের কথামতই হুদহুদের কাজ, সে বাইরে থেকেই শুনতে পেল রাণীর কথাবর্তা সাংসদ ও মন্ত্রীদের সাথে । এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ঐ কালেও ঐ দেশের সংসদ-ভবন ছিল এ্যয়ারটাইট, সাউন্ডপ্রুফ এবং ওয়াটারপ্রুফ, মানে, এরকম সংসদ-ভবন আগামী পৃথিবীর সকল দেশে হবে এবং এ ভাবেই আল-ক্বোরআনের সত্যতাও প্রমানিত হবে। আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, এ রকম একটি সংসদ-ভবনে রাণীর সিংহাসনের সামন-টেবিলে রাজকীয় ফরমানটি হুদহুদ ঢুকালো কি করে, এবং বাইরে থেকে তাদের সকল কথাবার্তা শুনল-ই বা কী করে, অর্থাৎ, এটাও নবী হিসেবে সুলাইমান (আঃ) এর মু’জেযাহসমূহের আরও একটি।
হুদহুদ শুনল, রাণী সাংসদ-মন্ত্রীদেরকে বলছেন, “আমি একটি রাজকীয় ফরমান প্রাপ্ত হয়েছি, যেটি এসেছে সুলাইমানের নিকট থেকে, এটি আরম্ভ হয়েছে ‘বিসমিল্লাহিররাহমানিররাহীম’ দিয়ে এবং ভেতরে সংক্ষিপ্ত একটি বাক্য লেখা রয়েছেঃ আমার মোক্বাবেলায় অহংকার করিও না, এবং নিঃশর্ত-সারেন্ডারের উদ্দেশ্যে আমার সকাশে (দরবারে) চলিয়া আস।” রাণী এবার মন্ত্রীদের পরামর্শ চাইলেন এই বলে যে, “আমি অবগত আছি যে, আপনারা সাহসী এবং শক্তিশালী ‍যুদ্ধা এবং পৃথিবীর কোন শক্তিই আমাদেরকে পরাজিত করতে পারবে না, তদুপরি আমি আপনাদের মতামত চাই।”

মন্ত্রী-সাংসদমণ্ডলী উত্তরে বললেন, “আপনি সকল ক্ষমতাধর রাণী, যা-ই আদেশ করবেন, আমাদেরকে আপনি বাধ্যগত-ই পাবেন, আমরা শধু-ই আপনার হুকুমের অপেক্ষায়”। রাণী বললেন, “আমি জানি, যদি ভিন্ন কোন শক্তি অপর কোন দেশে প্রবেশ করে, তা হলে তারা ঐ দেশকে তছনছ করে, ঐ দেশের সম্মানী নাগরিকবুন্দকে বে-ইজ্জৎ করে। তাই, আমি প্রথমেই যুদ্ধ চাই না, বরং উল্টো আমি সুলাইমানকে উপঢৌকন পাঠাব।” এই বলে তিনি ৫ খানা সোনার ইট সুলাইমান (আঃ)কে হাদিয়া পাঠালেন দূতদের মাধ্যমে।

ওদিকে আল্লাহর নবী সুলাইমান ঐশ্বরিক জ্ঘানের মাধ্যমে সব জানতে পেরে মানব ও জীনকে আদেশ করলেন, সমুদ্রবন্দর থেকে রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত দীর্ঘ রাজপথ সোনার ইট দিয়ে প্রশস্ত করে ও দু’পাশে একই রকম সোনার ইট দিয়ে পুরু দেয়াল উঁচু করে রাতারাতি নির্মান করতে, যাতে রাণীর দূতগণ এসেই প্রথম ধাক্কায় কাহিল হয়ে যায়। ঘটল তা-ই। দূতগণ এসে যখন দেখতে পেলেন, যে ৫ খানা সোনার ইট আত্মম্বরিতার সহিত তারা হাদিয়া নিয়ে এসেছেন, সেই ইট দিয়েই সুলাইমানের রাস্তার এই কাজ, অদিকন্তু, যে রাস্তায় পড়ে আছে গরু-ছাগলের গোবর ও অন্যন্য ময়লা-আবর্জনা, লজ্জায় তাঁদের মাথা হেঁট হয়ে গেল, কিন্তু ফিরেও যেতে পারেন না রাণীর ভয়ে। যাক, কোন রকমে গিয়ে তাঁরা পৌঁছলেন রাজদরবারে।
নবী-বাদশাহ সুলাইমান (আঃ) হাদিয় পেয়ে দূতদেরকে বললেন, তোমাদের এ হাদিয়ার উপর তোমরা গর্ব করতে পার বটে, তবে আল্লাহ আমাকে যে নেয়ামত দিয়েছেন, তা তো তোমরা আসার পথেই দেখলে, তদুপরি আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন আখিরাত। তোমরা শুধু তোমাদের দুনিয়া নিয়েই বড়াই করতে পার, তবে ফিরে গিয়ে রাণীকে সাফ জানিয়ে দাও, ফরমানে যা লিখা আছে, তার বিন্দুমাত্র অন্যতা হবে না। কিন্তু, সত্যকে বুঝতে পেরে ততক্ষনে রাণী সুলাইমানের দরবারে দলবল সহ রওয়ানা দিয়েই দিয়েছেন।

এবার সুলাইমান (আঃ) মানব-জীন সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “কে আছ মূহুর্তে রাণীর সিংহাসন আমার সামনে এনে হাজির করতে?” ই’ফরিত নামক এক জীন বললো, “আপনারা এ স্থান ত্যাগ করার পূর্বেই আমি সিংহাসন এনে হাজির করছি”। কিন্তু তার সেটি করার আর প্রয়োজন পড়ে নি; নবুওতির মো’জেযায় চোখের পলকেই রাণীর সিংহাসনটি সুলাইমানের সামনে এসে হাজির হল। সুলাইমান আদেশ করলেন, “ওটির রং পাল্টিয়ে দাও, দেখি, এটি চেনার মত (আল্লাহর নবীকে চেনার মত) সুবুদ্ধি এ রাণীর আছে কি না?”
রাণী আসলেন, সুলাইমান তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তাঁর সিংহাসন এটির মত কি না?
রাণীর সরল জবাবঃ “আমি আগে থেকে সব বুঝতে পেরেই (নিঃশর্ত সারেন্ডারের উদ্দেশে) চলে এসেছি।”

এবার অপর প্রাসাদে যাওয়ার পালা। মাঝখানের রাস্তা সচ্ছ মার্বেল পাথরের ঢালাই। নিচে পানি দেখা যাচ্ছে, পানিতে মাছ সাঁতরাচ্ছে। পার হওয়ার নিমিত্তে রাণী তাঁর সেলওয়ার নিজ পায়ের ঘন্টা পর্যন্ত উঠাচ্ছেন, যাতে সেটি পানিতে না ভেজে। অবলোকন করে সুলাইমান (আঃ) বললেন, “এ রাস্তা স্বচ্ছ মার্বেল-পাথর-নির্মিত, তাই কাপড় ভিজবে না, উঠাবার প্রয়োজন নেই।” লজ্জায় রাণী বললেন, “আমি বুঝে-সুঝে নিয়ত করেই এসেছি, সুলাইমান যে আল্লাহর (রব্বের) উপরে রেখেছেন, সুলাইমানের সেই আল্লাহর উপরই আমি এক্ষুনি ঈমান আনলাম”।

এ ভাবেই গোটা ইয়েমেনবাসি মুসলিমীন (মুসলমান) হয়ে গেলেন।

প্রাচীন জেরুযালেম শহরের আল-আক্বসা মাসজিদ-চত্বরে সুলাইমান (আঃ) এর সমাধি
 
ওদিকে, জ্বীনরা ভাবছিল সুলাইমান (আঃ) জীবিত অবস্থায়ই সরাসরি তাদের কাজ অনবরত তদারকি করছেন। তাই তারা এক নাগাড়ে নির্মানকাজ করেই যাচ্ছিল।
তবে আল্লাহর মনসা ছিল ভিন্ন। তাঁর হুকুমে একটি ছোট্ট পোকা বা অনেকগুলো ঘুনপোকা মাটি ভেদ করে সুলাইমনের লাঠিটি অনেকদিন ধরে খেয়েই যাচ্ছিল। এক সময় সুলাইমানের লাঠি ভেঙ্গে পড়ল এবং তাঁর মৃতদেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ল, আর জ্বীনরা শুধু তখনই বুঝতে পারল যে, অনেক পূর্বেই তিনি ইন্তিকাল করেছেন। তাদের আফ্সোসের সীমা রইল না যে, যদি তারা গায়েবি বিষয় সত্যিই জানত, তা হলে এত কষ্ট করে তারা কৃতদাসদের মত অপমানজনকভাবে একটানা এই কাজ বিরতিহীনভাবে করে যেত না। তাই, নবীর নবুওতি-মু’জেযাহর কারণে গোটা দুনিয়ার বাদশাহ সুলাইমান (আঃ) এর মৃত্যুটাও আমাদেরকে জ্ঞান লাভ করার ও বিজ্ঞ হওয়ার শিক্ষা দেয়।


 
লেখকঃ প্রফেসর ড. মোঃ আতী উল্লাহ (বিসিএস, পিএইচ.ডি.- ইংলিশ), প্রতিষ্ঠাকালীন ও সাবেক ২৪ বছরের বিভাগীয় প্রধান, ইংরেজি বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট এবং দেশে-বিদেশে ৪৫ বছরের ইংরেজি সাহিত্য ও ইংরেজি ভাষার শিক্ষক।