যেকোন দুর্যোগে দেশের মানুষের অন্যতম প্রধান ভরসা হয়ে উঠেছে  গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ। বন্যা করোনা বা আকস্মিক অন্যান্য দুর্যোগে এ কমিটি তাদের মানবিক তৎপরতার মাধ্যমে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখে যাচ্ছে। এতে যেমন  ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ উপকৃত হচ্ছেন, তেমনি সরকারেরও অনেক দায় লাঘব হচ্ছে।


সিলেটে সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায়ও গাউসিয়া কমিটি তাদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের মাধ্যমে নজর কেড়েছে সব মহলের। তারা ইতিপূর্বে প্রায় দেড় লাখ বন্যার্তকে সহায়তা দিয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, বর্তমানেও গাউসিয়া কমিটির সহায়তার কাজ চলছে। যতদিন এ দুর্যোগ থাকবে, ততদিন তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, এবার সিলেটে বন্যা দুর্গত এলাকার প্রায় দেড় লাখ মানুষকে মানবিক সহায়তা দিয়েছে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ।  যতদিন প্রয়োজন সামর্থ্য অনুযায়ী এ ধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।



সিলেট-সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যার খবর পেয়ে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে তারা এ অঞ্চলে ছুটে আসেন।  


শুধু শুকনো বা রান্না করা খাবারই নয়, দুর্গত মানুষের মাঝে ঈদের খুশি বিলিয়ে দিতে কোরবানির মাংস ও জামাকাপড় বিতরণ কার্যক্রমও  চালিয়ে যাচ্ছে গাউসিয়া কমিটি।তাদের এই মানবিক সেবায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে সাড়ে তিন টন চাল এবং নগদ একলাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে।


গাউসিয়া কমিটি বন্যাদুর্গত বৃহত্তর সিলেটের প্রত্যন্ত এলাকায় রান্না করা খাবার, শুকনা খাবার, চাল, ডাল, তেল, চিড়া, বিস্কুটসহ নানা ধরনের খাবার, ওষুধ, বিশুদ্ধ পানি এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, নতুন-পুরাতন কাপড়সহ নানা প্রয়োয়োজনীয় সরঞ্জাম বিতরণ করেছে। এগুলো দেয়া হয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহার আগে।  এরপর তারা ২০টন কোরবানির মাংস নিয়ে এসেছেন যা অন্তত   বিশ হাজার পরিবারের মধ্যে বিতরণের কাজ চলছে। মৌলভীবাজার, সিলেট এবং সুনামগঞ্জের দুর্গত মানুষের হাতে এই  উপহার তুলে দেওয়া হচ্ছে গত মঙ্গলবার থেকে।


অধ্যক্ষ মুহাম্মদ জালালুদ্দিন আল কাদেরী বলেন, শুধু ত্রাণ সহায়তাই নয়, তারা ক্ষতিগ্রস্তদের ঘরও বানিয়ে দিচ্ছেন। ইতিপূর্বে কোম্পানীগঞ্জের শিমুলতলা নোয়াগাঁওতে ঘর হারা দুটি পরিবারকে নতুন করে ঘর নির্মাণের জন্য এক লাখ টাকা দেয়া হয়েছে, এবং আরও দেয়ার প্রস্তুতি আছে ।  


শুধু বন্যা নয়, অন্যান্য দুর্যোগেও তার নির্ভরতার প্রতিক হয়ে উঠেছেন।


এ প্রসঙ্গে গাউসিয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব যুগ্ম মহাসচিব ও মানবিক কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার বলেন, কোভিড-১৯ এর ভয়াবহ বিপর্যয়ের সময়েও গাউসিয়া কমিটির মানবিক স্বেচ্ছাসেবকরা দশ হাজারেরও বেশি মৃতের লাশ গোসল-কাফন এবং দাফন ও সৎকার করেছেন। এদের মধ্যে হিন্দু ৬১, বৌদ্ধ ৯, উপজাতি ২,  খ্রিষ্টান ১, বীর মুক্তিযোদ্ধা ৬৫ এবং অজ্ঞাত লাশ ছিল ৭৮ জনের।  এ সময়ে তারা ৪২ হাজার ৫০৯ জনকে ফ্রি অক্সিজেন সেবা এবং ১২ হাজারের মানুষকে ফ্রি এম্বুলেন্স সেবা দিয়েছেন। হাজার হাজার মানুষকে ফ্রি ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা, ভ্রাম্যমান করোনা পরীক্ষাও করেছে এ কমিটি। লকডাউনের মধ্যে আড়াই লাখ পরিবারকে আর্থিক ও ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে।  


তিনি আরও বলেন, ৪ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ড এবং ভয়াবহ কন্টেইনার বিস্ফোরণে দুই শতাধিক আহত এবং অর্ধশতাধিক নিহতের সবাইকে উদ্ধার করার মতো দুঃসাহসিক কাজটা করেছে গাউসিয়া কমিটির মানবিক কর্মীরা।


ঘটনায় নিহত-আহত দমকল বাহিনীর কর্মীদের উদ্ধার কাজও করেছেন তারা। দমকল বাহিনীসহ শনাক্তকৃত লাশগুলোর গোসল- কাফন-দাফন সম্পন্ন ছাড়াও, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অস্থায়ী সহায়তা বুথ স্থাপন করে আহতদের ওষুধ, খাদ্যসামগ্রী, নগদ অর্থসহ নানা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম এবং রক্ত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। দশ দিনে গাউসিয়া কমিটির কর্মীরা ২ হাজার ৩৭০ ব্যাগ রক্ত দিয়ে সহায়তা করে চট্টগ্রাম মেডিক্যালের পোড়া ও অন্যান্য রোগীদের।


এত এত মানবিক তৎপরতার অত্যন্ত সম্মানজনক স্বীকৃতিও পেয়েছেন তারা। মানুষের ভালোবাসা ও সমীহ অর্জনের পাশাপাশি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন কর্তৃক একুশে পদক-২০২২-এ ভূষিত করা হয়েছে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশকে। 


তারা তাদের মানবিক তৎপরতা অব্যাহত রাখতে দেশের মানুষের দোয়া ও সহযোগীতা চেয়েছেন।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আইই/ইআ