সিলেটে বিএনপি নেতা আ ফ ম কামাল খুনের ঘটনায় প্রায় চল্লিশ ঘন্টাও হয়ে গেলেও মামলা হয়নি। আলোচিত এই ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতারও করতে পারেনি।

গত রোববার রাত আটটার দিকে সিলেট নগরীর বড়বাজার এলাকায় খুন হন আ ফ ম কামাল (৪৫)। তিনি সিলেট জেলা বিএনপির সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এর আগে সিলেট ল কলেজ ছাত্রসংসদের ভিপি ছিলেন তিনি।


আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ সিলেটভিউকে বলেন, ‘আ ফ ম কামাল খুনের ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। পুলিশ তৎপর রয়েছে।’

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি নেতা আ ফ ম কামাল সিলেট বিমানবন্দর এলাকা থেকে আম্বরখানা বড়বাজার হয়ে গোয়াইটুলার দিকে যাচ্ছিলেন। তার গাড়িকে অনুসরণ করছিল দুটি মোটরসাইকেল। তাতে আরোহী ছিলেন তিনজন। পরে আরেকটি মোটরসাইকেলে থাকা দুই ব্যক্তি বড়বাজার ১১৮নং বাসার সামনে কামালের গাড়ির গতিরোধ করে। পরে তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে খুনিরা পালিয়ে যায়।

স্থানীয়রা কামালকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মূলত অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই মারা যান কামাল। এমনটাই জানিয়েছেন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান শামছুল ইসলাম। তিনি জানান, কামালের দেহে ২৫টি ছুরিকাঘাত করা হয়। তার বাঁ হাতে ১৬টি, বাম বগলের নিচে ২টি, বুকের বামপাশে ১টি ও বাম পায়ে ৬টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

পুলিশ সূত্র বলছে, আ ফ কামাল খুনের ঘটনায় সরাসরি অংশ নেয় পাঁচজন। তন্মধ্যে আজিজুর রহমান সম্রাট, শাকিল ও রাজু নামের তিনজন ছিল। এদের মধ্যে সম্রাট ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তবে তিনি আগে ছাত্রদলের কর্মী ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দল পাল্টে ছাত্রলীগে চলে আসেন সম্রাট। আম্বরখানা এলাকায় সম্রাটের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি ছোট গ্রুপ আছে বলেও জানা গেছে।

পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কামাল খুন কোনো রাজনৈতিক কারণে নয়, ব্যবসায়িক কারণে ঘটতে পারে। রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসায়ও জড়িত ছিলেন তিনি। জিন্দাবাজারে তার ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা রয়েছে। তিনি পাথর ব্যবসায়ও জড়িত ছিলেন। গেল অক্টোবরে কামালের সঙ্গে ভিসা সংক্রান্ত বিষয়ে সম্রাটের ঝামেলাও হয়েছিল। সম্রাট কোতোয়ালি থানায় কামালকে আসামি করে মামলা করেছিলেন।

পুলিশ কর্মকর্তা আজবাহার আলী শেখ বলেন, আ ফ ম কামাল রাজনীতির পাশাপাশি পাথর ব্যবসা এবং নগরের জিন্দাবাজার এলাকায় একটি ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সম্প্রতি তাঁর ট্রাভেল এজেন্সি আজিজুর রহমান সম্রাট নামের একজনের আত্মীয়কে সৌদি আরবে এক কাজের কথা বলে অন্য কাজের জন্য ভিসার ব্যবস্থা করে। এ ঘটনায় সম্রাট গত ২১ অক্টোবর আ ফ ম কামালসহ ১০ জনের নামোল্লেখ করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। এরই জের ধরে এই হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যেভাবে খুন করা হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে এটি পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

কামাল খুনের ঘটনায় গত রোববার রাতে উত্তপ্ত ছিল সিলেট নগর। বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতা-কর্মীরা নগরীতে বিক্ষোভ করেন, আওয়ামী লীগের ব্যানার, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেন। পরে আওয়ামী লীগও পাল্টা মিছিল করে, বিএনপির ব্যানার, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে