বাংলার প্রকৃতিতে আছে বিপর্যয়,
ঝড় ঝঞ্ঝা বন্যা প্রলয়,
সাইক্লোন, হ্যারিকেন জলোচ্ছাস,
সবকিছু হারিয়ে দেয়, পাকসেনার বর্বর ইতিহাস,
একাত্তরের সাতই মার্চ যুদ্ধের হুসিয়ার,
এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।
ইহা ধ্বনিত হয় ঢাকার রেসকোর্স মাঠে,
প্রতি ধ্বনিত হয়, আকাশে বাতাসে,
শহরে বন্দরে, গ্রাম গ্রামান্তরে-
বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে।
পচিশের মধ্যরাতে আলোচনা অজুহাতে,
পাক সামরিকজান্তা ধরে নেয় বাংলার নেতাকে।
তাঁরই বীজমন্ত্রে, যা কিছু পায় হাতে,
রুখে দাঁড়ায় পাকসেনাকে জীবন বাজী রখে।
বাংলার পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার,
সৈনিক, পুলিশ,আনসার, ই পি আর, হয় একাকার।
ছাত্র, যুবক, কামাল- দামাল ছেলে,
বই পুস্তক কাজ ফেলে-
যুদ্ধে নেমে বন্দুক রাইফেল নিয়ে,
বাংলার বুকে গোলা গুলির শব্দ আর কান্নার অট্টরোল,
সব কিছু একাকার হয়ে বিকট ভয়ঙ্কর হট্টরোল।
প্রাণভয়ে ঘর বাড়ী ফেলে আবাল বৃদ্ধ বনিতা নিরাপদ স্থান খোঁজে, কেহ যায় অজপাড়া গ্রাম গ্রামান্তে, কেহ যায় ওপারে সীমান্তে।
যারা ছিল দেশের অভ্যন্তরে! ছুটিত এদিক ওদিক প্রাণ বাচাবার তরে।
প্রতিটি মুহূর্ত ছিল প্রাণনাশের ভয়, কখন নরঘাতকের খপ্পরে পড়তে হয়।
দিনে নরঘাতক খানসেনা, রাতে মুক্তি পাগল গেরিলা,
দিনে অসহায় বাংগালী ধরে নিয়ে, লাইন বেধে, চুখ বেধে, অকাতরে বধে।
রহিম, করিম, সেলিম,অনীল, যদু - মধু,
পায়নি রেহাই যুবতী, ছাত্রী, কোলবধূ।
কেহ হারায় প্রাণ, কেহ মান, কেহ হারায় সতীত্ব, কেহ সন্তান।
পাক হানাদারের প্রথম সহযোগী ছিল বিহারী,
পরে আলবদর, আলসামছ, রাজাকার, শান্তি কমিটি।
মিত্রবাহিনীর সহযোগে মুক্তিবাহিনী হয় বলিয়ান,
ভারি অস্ত্র আসে হাতে স্টেনগান, মেশিনগান,
কামান আর বোমারু বিমান।
সম্মিলিত শক্তির বিরুদ্ধে,
যুদ্ধে পরাজয় হবে নিশ্চিত জেনে-
খানসেনারা বাংলার কৃতিসন্তানদেরে তালিকা করে-
রাজাকার লেলায়ে, ঘর থেকে রাতের
আঁধারে ধরে নিয়ে মারে।
নয় মাস বিরামহীন যুদ্ধের পরে,
দামালছেলেরা আনন্দ বেদনা অশ্রুজলে-
মিত্রবাহিনীসহ রক্তে রঞ্জিত লাল সবুজের
পতাকা ছিনিয়ে নিয়ে ষোলই ডিসেম্বর
স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে।